জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। সিলেটে প্রথম টেস্ট হেরে সমালোচনার মুখে ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে যখন কাটাছেঁড়া হওয়ার কথা, তখন তা আড়াল করতে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্ম দিয়েছে বিসিবি।
মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলছে নাটক। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বাইলজ পরিবর্তন করে হৃদয়কে খেলার সুযোগ করে দিয়ে মোহামেডানকে অন্যায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আম্পায়ার্স বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমানের এ অনিয়মের প্রতিবাদে টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান এনামুল হক মনি পদত্যাগ করেছেন। প্রতিবাদস্বরূপ আইসিসির এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতও বিসিবির চাকরি ছেড়েছেন।
এ দুই ঘটনায় সমালোচনার মুখে হৃদয়ের শাস্তি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয় বৃহস্পতিবার। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই সেখান থেকেও সরে এসেছে বিসিবি। তামিম ইকবালদের চাপে হৃদয়ের শাস্তি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে!
আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মিঠু জানান, আগামী ডিপিএলে কার্যকর হবে হৃদয়ের এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা। মোহামেডান ও হৃদয়কে সুবিধা দিতে গিয়ে বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিল বিসিবি।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের নেতৃত্বে গতকাল সকাল থেকেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জড়ো হতে থাকেন ক্রিকেটাররা। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের কাছে প্রতিবাদ ও নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে একজোট হন তারা। সভায় ফারুকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ ও টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার।
ফাহিম জানান, সভায় উপস্থিত ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া ছিল– তাওহীদ হৃদয়ের শাস্তি সুপার লিগে পুনর্বহাল করার বিরুদ্ধে। তামিম ও হৃদয় মোহামেডানের ক্রিকেটার। সুপার লিগে হৃদয়কে মোহামেডানের হয়ে বাকি দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতেই ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে মিটিং করেন। বিসিবি কর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সফলও হন তারা।
মোহামেডানের পর ক্রিকেটারদের চাপে নতিস্বীকার বিসিবির নৈতিক পরাজয় কিনা জানতে চাওয়া হলে ফাহিম বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত লিখিত নিয়মের বাইরে যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আগের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হলো। পরপর দুটি ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটা না করে ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া ছিল ভুল এবং অনিয়ম। আবার সেখান থেকে সরে এলে ক্রিকেটাররাও সুযোগ পেয়েছে বিসিবির ভুল ধরার। আমাদের ব্যর্থতার কারণেই এতকিছু হতে পেরেছে।’
বিসিবি সভাপতির সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামিম বলেন, ‘তার (হৃদয়ের) যে শাস্তিটা ছিল, সেটা কিন্তু সে ভোগ করেছে। এখন দুটি ম্যাচ খেলার পর কাল (বৃহস্পতিবার) শুনলাম, তাকে আবার বহিষ্কার করেছে। এটা কোন আইনে, কীভাবে করেছে, এটা আমার জানা নেই। এটা খুবই হাস্যকর, কোনোভাবেই সে আবার বহিষ্কার হতে পারে না। যাকে বিসিবি দুই ম্যাচ খেলতে দিয়েছে, তাকে আবার কীভাবে বহিষ্কার করে?’
মোহামেডানকে অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে হযবরল করে ফেলে আম্পায়ার্স বিভাগ। বিসিবির জন্য যেটা নৈতিক পরাজয় বলে মনে করেন ফাহিম, ‘কিছুটা তো বটেই। এ রকম একট পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, কোনো কোনো স্টেকহোল্ডার চাপ প্রয়োগ করে যার যার কাজ আদায় করে নিতে পারে। এটা খুবই দুঃখজনক, এমন একটা পরিবেশের মধ্য আমাদের যেতে হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে এখান থেকে বেরিয়া আসার।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ আম প য় র স কম ট র য গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।