পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হামাস
Published: 26th, April 2025 GMT
সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, হামাস এখন এক ধাপেই সব বন্দি বিনিময় ও পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। এ অবস্থায় মিসরের রাজধানী কায়রোতে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে হামাসের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
এর আগে ১০ জীবিত জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রেখেছিল ইসরায়েল, যা ১৭ এপ্রিল নাকচ করে দেয় হামাস। শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
হামাস বরাবরই বলে আসছে, যুদ্ধবিরতির কোনো সাময়িক চুক্তিতে তারা আর সায় দেবে না। পরবর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অবশ্যই গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার অবসান, বন্দি বিনিময়, উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। গত শুক্রবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় খাবারের সরবরাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে গাজায় তিন দফায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে দু’পক্ষই সম্মতি দেয়। প্রথম দফার বাস্তবায়ন হয় ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। তখন ইসরায়েল দ্বিতীয় দফায় যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার গণহত্যা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন দাবি করা হচ্ছে, পরবর্তী চুক্তিতে সব জিম্মির মুক্তি, হামাসসহ গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। হামাস নিরস্ত্রীকরণের দাবি মানতে এরই মধ্যে অসম্মতি জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি মনে করে, দখলদারিত্ব ও শোষণের মধ্যে অস্ত্রধারণ তাদের জন্মগত অধিকার।
এরই মধ্যে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, শনিবার এক দিনে আরও ৫৬ জন নিহত ও ১০৮ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ৫১ হাজার ৪৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৫২৪ জন। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ গাজায় ইসরায়েলের হামলা পুনরায় শুরুর পর এ পর্যন্ত ২ হাজার ১১১ নিহত ও ৫ হাজার ৪৮৩ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
শনিবার ভোরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় গাজা সিটিতে। সেখান আল খাউর পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েন আরও ২০ জন। হামলায় বেঁচে থাকা উম্মু ওয়ালিদ আল-খাউর বলেন, ‘যখন বোমা আঘাত হানে, তখন সবাই তাদের শিশুদের নিয়ে ঘুমে ছিলেন। ভবন ধসে আমাদের ওপর পড়ল। যারা বেঁচে ছিলেন, তারা কান্না করছিলেন। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।’
হামলার পাশাপাশি গাজায় ত্রাণের গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে সেখানে খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজার মানুষের রান্নাঘরে খাদ্যের মজুত শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগামী দিনে খাবার সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে।
ডব্লিউএফপির সতর্কীকরণের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বরছেন, গাজায় চিকিৎসা সরবরাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে তাদের ১৬টি ট্রাক প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আদানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, এ অবরোধের অবসান ঘটাতে হবে। এটা মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।