সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, হামাস এখন এক ধাপেই সব বন্দি বিনিময় ও পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। এ অবস্থায় মিসরের রাজধানী কায়রোতে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে হামাসের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। 

এর আগে ১০ জীবিত জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রেখেছিল ইসরায়েল, যা ১৭ এপ্রিল নাকচ করে দেয় হামাস। শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। 

হামাস বরাবরই বলে আসছে, যুদ্ধবিরতির কোনো সাময়িক চুক্তিতে তারা আর সায় দেবে না। পরবর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অবশ্যই গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার অবসান, বন্দি বিনিময়, উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। গত শুক্রবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় খাবারের সরবরাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে গাজায় তিন দফায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে দু’পক্ষই সম্মতি দেয়। প্রথম দফার বাস্তবায়ন হয় ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। তখন ইসরায়েল দ্বিতীয় দফায় যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার গণহত্যা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন দাবি করা হচ্ছে, পরবর্তী চুক্তিতে সব জিম্মির মুক্তি, হামাসসহ গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। হামাস নিরস্ত্রীকরণের দাবি মানতে এরই মধ্যে অসম্মতি জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি মনে করে, দখলদারিত্ব ও শোষণের মধ্যে অস্ত্রধারণ তাদের জন্মগত অধিকার। 

এরই মধ্যে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, শনিবার এক দিনে আরও ৫৬ জন নিহত ও ১০৮ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ৫১ হাজার ৪৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৫২৪ জন। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ গাজায় ইসরায়েলের হামলা পুনরায় শুরুর পর এ পর্যন্ত ২ হাজার ১১১ নিহত ও ৫ হাজার ৪৮৩ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। 

শনিবার ভোরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় গাজা সিটিতে। সেখান আল খাউর পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েন আরও ২০ জন। হামলায় বেঁচে থাকা উম্মু ওয়ালিদ আল-খাউর বলেন, ‘যখন বোমা আঘাত হানে, তখন সবাই তাদের শিশুদের নিয়ে ঘুমে ছিলেন। ভবন ধসে আমাদের ওপর পড়ল। যারা বেঁচে ছিলেন, তারা কান্না করছিলেন। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।’

হামলার পাশাপাশি গাজায় ত্রাণের গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে সেখানে খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজার মানুষের রান্নাঘরে খাদ্যের মজুত শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগামী দিনে খাবার সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে। 

ডব্লিউএফপির সতর্কীকরণের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বরছেন, গাজায় চিকিৎসা সরবরাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে তাদের ১৬টি ট্রাক প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আদানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, এ অবরোধের অবসান ঘটাতে হবে। এটা মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প