আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: সমন্বয়ক না থাকার প্রভাব ‘তদন্তে’
Published: 28th, April 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে শহীদ পরিবারসহ নানা মহলে অসন্তোষ রয়েছে। অথচ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক পদে এক মাসের বেশি সময় ধরে কেউ নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সমন্বয়কের কাজ হলো তদন্ত সংস্থার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করা। ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান কার্যবিধি অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের জন্য ‘নীতিগতভাবে দায়ী’ তদন্ত সংস্থা। আইনে বলা আছে, তদন্ত সংস্থাকে দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য অন্য যেকোনো কাজ সম্পন্ন করাও সমন্বয়কের দায়িত্ব।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো তদন্তের জন্য সমন্বয়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় মো.
নিয়োগের প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাজহারুল হককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পদায়ন করা হয়। তবে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে প্রক্রিয়াগত ভুল ছিল। তবে তখন থেকেই ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ‘ছাড়ার প্রস্তুতি’ শুরু করেন তিনি। প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে পুনরায় আদেশ জারি করতে দুই মাসের বেশি সময় লাগে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে তদন্ত সংস্থার প্রধান (সমন্বয়ক) হিসেবে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া। —রবিউল আউয়াল সাধারণ সম্পাদক ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’মাজহারুল হক ২৪ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৯ মার্চ সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। এর পরের দিনই তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন মাজহারুল হক।
তদন্তের অগ্রগতিতে অসন্তোষআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা, গণহত্যা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে।
বিচারের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশসহ বেশ কিছু দাবিতে গত ২৪ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের সামনে বিক্ষোভ করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এর পরদিন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে যখন তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দেবে, সেটার পর থেকে চিফ প্রসিকিউটরের কাজ শুরু হবে। তদন্ত করার কাজটা কমপ্লিটলি (সম্পূর্ণভাবে) তদন্ত সংস্থার ওপর। সে কারণে তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত চিফ প্রসিকিউটর তাড়াতাড়ি করে মামলা হেয়ারিং (শুনানি) করতে পারেন না।’
বিচারের ধীরগতি নিয়ে শহীদ পরিবারের স্বজনেরা গত আট মাসে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন, এখনো করছেন।জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আট মাসের বেশি সময় পর তদন্ত সংস্থা প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয় ২০ এপ্রিল। এ মামলার তদন্ত শেষ করতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয়জনকে গণহত্যার (৫ আগস্টের ঘটনা) ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। এই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে দাখিলের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে এক মাস সময় নিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। আগামী ২৫ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে এবং ট্রাইব্যুনালে তা গ্রহণ করলে এই মামলার মধ্য দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।
তদন্ত সংস্থায় সমন্বয়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াধীন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক পদে নিয়োগ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এখন থেকে এই কাজটি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
যা বলছে প্রসিকিউশনগণ-অভ্যুত্থানের পর যখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়, তখন তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ১০ জন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এখন ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।
তদন্ত সংস্থায় সহসমন্বয়ক হিসেবে আছেন মুহম্মদ শহীদুল্যাহ চৌধুরী। উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন ছয়জন। সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন তিনজন। ১৫ জন আছেন উপসহকারী পরিচালক হিসেবে।
তদন্ত সংস্থার তদন্ত কার্যক্রম দেখভাল করে থাকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের মধ্যে তদন্ত সংস্থায় সমন্বয়ক না থাকা নিয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে, সমন্বয়ক না থাকায় তদন্ত কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আরেকটি পক্ষ বলছে, সমন্বয়ক না থাকলেও খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন প্রসিকিউটর প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রমে মূলত তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। সমন্বয়ক না থাকায় সহসমন্বয়কের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। তা ছাড়া প্রধান (সমন্বয়ক) না থাকলে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স (ভারসাম্য) কম থাকে। আগে যেখানে দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, এখন সেই সুযোগ থাকছে না।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীমের দাবি, তদন্ত সংস্থায় সমন্বয়ক না থাকলেও তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, সরকার যদি শিগগিরই সমন্বয়ক পদে কাউকে নিয়োগ দেয়, তাহলে কাজের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হবে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে করা বিভিন্ন মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বিচারের ধীরগতি নিয়ে শহীদ পরিবারের স্বজনেরা গত আট মাসে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন, এখনো করছেন। বিভিন্ন সংগঠনও বিচার দৃশ্যমান করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। যেমন ২১ এপ্রিল আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি এবং জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিনিধিরা।
দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে উল্লেখ করে ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, এই গণহত্যার বিচার এখনো শুরু হয়নি।’
শহীদ পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’। এর সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল। তাঁর ছোট ভাই ইমাম হাসান ভূঁইয়া (তাইম) গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী-সেতুর কাছে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
রবিউল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেখানে দীর্ঘদিন সমন্বয়ক নেই। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দলনেতা ছাড়া কোনো কাজই সম্পূর্ণ হয় না। যিনি প্রধান, তাঁর কাজ অন্য কেউই সেভাবে করতে পারবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে তদন্ত সংস্থার প্রধান (সমন্বয়ক) হিসেবে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত স স থ র স ম নবত ব র ধ প রথম আল ক সমন বয়ক ন কর মকর ত তদন ত কর ন মন ত র ন তদন ত অপর ধ র তদন ত র অসন ত ষ গণহত য র জন য র প রস অন য য় র সমন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩