Prothomalo:
2025-11-03@05:08:59 GMT

বাবা ও ভয়াল রাত ২৯ এপ্রিল

Published: 29th, April 2025 GMT

থাকতাম চট্টগ্রাম শহরের এক প্রান্তে। ধানের জমিতে খানিক দূরে দূরে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল, নব্য শহরের ছোঁয়া। ধান কাটার পর বিশাল খালি জমি এবং বর্ষায় সেই জমি পানিতে থই থই করত। খাল–বিলে ঘুড়ি ওড়াতাম। বর্ষায় বিলের পানিতে ভিজে প্রায় সময়ই বাসায় ফিরতাম। মায়ের বকুনি আর বাবার চোখরাঙানি কোনো সময় এসব মজা নেওয়া থেকে দূরে রাখতে পারেনি। স্কুল ছিল বাসার কাছেই।

আমার বাবা একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কোনো কোনো দিন তাঁকে উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ ও হাতিয়ায় যেতে হতো। খানিকটা আর্থিক অসচ্ছলতা ছিল আমাদের পরিবারে।

সময়টা ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সকালবেলায় শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ২৮ এপ্রিল বাবা কুতুবদিয়ায় গেছেন। ফিরবেন তিন-চার দিন পর। রেডিওতে আবহাওয়া বিভাগ ৯-১০ নম্বর সতর্কসংকেত প্রচার করছে। বাবার কোনো খবর পাইনি—কখন আসবেন বা এই ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়ার মতো জায়গায় কীভাবে থাকবেন, কোথায় আশ্রয় নেবেন ইত্যাদি।

প্রতিদিনের মতো ওই দিন (২৯ এপ্রিল) স্বাভাবিক দিন পার করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। সন্ধ্যায় বাতাস বইতে লাগল। মা আমাদের দুই ভাই ও ছোট বোনকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। রাত ১২টার পরে মা হন্তদন্ত করে আমাদের দুই ভাইকে সামনের রুম থেকে ডেকে ওনার রুমে নিয়ে এলেন। ভেতরের রুমে আমার ছোট বোন মায়ের সঙ্গে ছিল। যতটুকু মনে পড়ে, সামনের রুমের দরজা বাতাসের প্রচণ্ড বেগে ছিটকিনিসহ উড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল, মা পড়ার টেবিল দিয়ে দরজাটা চাপা দিলেন। দোতলা বাড়ির সামনে বিল থাকায়, বাতাসের বেগ এত বেশি ছিল যে মা এবার সোফা দিয়ে দরজা চাপা দিলেন। মা বুদ্ধি করে রাখলেন, যদি দরজা কোনো কারণে ভেঙে যায়, তবে আলমারিটা দরজার সামনে রাখবেন। এবার আমাদের দুই ভাইকে মা বললেন, এই বিপদে আল্লাহকে ডাকতে আর দোয়াদরুদ পড়তে। আম্মা যা পড়ছিলেন, ওনাকে অনুসরণ করছিলাম।

এভাবে একসময় ভোর হলো। বাতাসের বেগ কমল। আমরা দুই ভাই ঘুমিয়ে গেলাম। উঠলাম সকাল ১০টার দিকে। বাইরে উঁকি দিতেই দেখি, চারদিকে কোমরসমান পানি। একধরনের শোরগোল। মা চিন্তা করছিলেন বাবার জন্য। ওনার কোনো খবর নেই। দুশ্চিন্তায় মায়ের সারা দিন কেটে গেল। সন্ধ্যায় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। চারদিকে হারিকেন ও চার্জলাইটের আলো। আমরা দুই ভাই পড়ছিলাম। তখন রাত ৯টা। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে?

ওপাশ থেকে আওয়াজ, পুত দরজা খুল, আমি। আমি দরজা খুলে একলাফে বাবার কোলে। ক্লান্ত শরীরে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বাবা ঘুমিয়ে গেলেন। এর আগে বললেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে সব খুলে বলবেন।

সকালে বাবা বললেন, যে বোর্ডিংয়ে উনি ছিলেন, নিচতলা পানিতে ডোবার অতিক্রম হলে দোতলায় ওঠেন। সারা রাত সে কী বাতাস। ছাদ উড়ে যাওয়ার উপক্রম। সকালে পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপ পানিতে নিমজ্জিত। লাশও পানিতে ভেসে আছে। ওষুধের দোকানসহ অন্যান্য দোকানে গিয়ে দেখেন, সব পানিতে ভাসছে। বাবা নৌকায় চড়ে, হেঁটে, বোটে করে চট্টগ্রাম ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছান। ফেরিঘাট থেকে বাসা পর্যন্ত আসেন হেঁটে, গাড়িতে, কখনো ভ্যানে চড়ে।

কুতুবদিয়া দ্বীপে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার বাবা বেঁচে ফিরলেন। এরপর জীবনের অনেক ঘাত পেরিয়ে তিনি আমাদের উচ্চশিক্ষায় আসীন করেছেন। বাবা গত হয়েছেন বছর চারেক হলো। আমি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যখন আমাকে গাড়ি দিল, আমার বাবা বেঁচে ছিলেন না। গাড়িতে যখন একা বসি, তখন মনে হয়, বাবা হাত ধরে বসে আছেন, আমাকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দেবেন। তিনি নেই, ওপর থেকে হয়তো আমাদের দেখছেন। শত কষ্ট, বাধাবিপত্তি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন।

বাবা, তোমার মতো ধৈর্যশীল হয়ে যেন সামনের দিনগুলো পার করতে পারি। তুমি আমার প্রেরণার বাতিঘর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র দ

এছাড়াও পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩

দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ