সবুজ এলাকায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কম হয়
Published: 29th, April 2025 GMT
উন্মুক্ত স্থান সবুজ থাকার সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার সম্পর্ক আছে। সবুজ পরিসর বেশি এমন এলাকায় পুলিশ প্রাণঘাতী গুলি কম চালায়। সবুজ ভূমির সঙ্গে পুলিশের আচরণের এই সম্পর্ক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও গবেষক। গবেষণার ফলাফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিহেভিয়ার’ নামের সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নিরাপদ পাড়াপড়শি ও এলাকা নিরাপদ হওয়ার পেছনে ভূপ্রকৃতির মান ও পরিমাণের সম্পর্ক আছে।
গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজার ১০০ কাউন্টির (যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক অঞ্চল) সবুজ পরিসর ও পুলিশের প্রাণঘাতী গুলির ঘটনার পাঁচ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। সময় ছিল ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল। কাউন্টির মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকার ৮০৫টি কাউন্টিও ছিল।
গবেষণায় সামাজিক একটি পরিপ্রেক্ষিত যুক্ত করার জন্য গবেষকেরা সামাজিক বঞ্চনার কিছু সূচক ব্যবহার করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, শিক্ষার স্তর, শুধু বাবা অথবা মা থাকা পরিবার, ভাড়া বাস, ঘন বসতি, গাড়িবিহীন পরিবার, চাকরিতে থাকা ৬৫ বছরের কম বয়সীদের হার। গবেষকেরা দাবি করেছেন, কঠোর নিয়মকানুন মেনে গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষকদের মধ্যে একজনের সংশয় ছিল যে সবুজের সঙ্গে প্রাণঘাতী গুলি বেশি ব্যবহারের সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নেতিবাচক সম্পর্কই পাওয়া যায়। অর্থাৎ সবুজ যেখানে বেশি, গুলির ব্যবহার সেখানে কম।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেট্রোপলিটন এলাকার যেসব কাউন্টিতে সবুজ বেশি, সেখানে প্রাণঘাতী গুলির ব্যবহার ১৫ শতাংশ কম। আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রে যেসব কাউন্টিতে সবুজ বেশি, সেখানে প্রাণঘাতী গুলির ব্যবহার ৯ শতাংশ কম। আবার সবুজের পাশাপাশি বঞ্চনা বেশি এমন এলাকাগুলোতে পুলিশের গুলির ঘটনা কম। সামাজিক বঞ্চনার নানা স্তরেই এটা দেখা গেছে।
সবুজের সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার সম্পর্ক কী
গবেষকেরা বলছেন, সবুজ এলাকা যত বেশি, পুলিশি সহিংসতা তত কম হওয়ার সম্ভাব্য চারটি কারণ থাকতে পারে: ক.
গবেষণা প্রবন্ধে আগের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সবুজ পরিসর মানসিক চাপ থেকে দ্রুত সামলে উঠতে সহায়তা করে। সবুজের কারণে অপরাধ ও সহিংসতা কম হয়।
গবেষকেরা বলছেন, সবুজ এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা কম মানসিক চাপে থাকেন, তাঁরা দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব দেখাতে চান। তাঁরা সহিংস আচরণ থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে সবুজের ভেতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়, এলাকায় একধরনের অনানুষ্ঠানিক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং ঝগড়া-দ্বন্দ্ব অহিংস পন্থায় মিটমাট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষকেরা এ-ও বলছেন, বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা হওয়া দরকার। কারণ, অনেক সবুজ এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের দল বা গ্যাং সক্রিয় থাকে, সবুজ ঝোপঝাড়ের আড়ালে কিছু মানুষ লুকিয়ে অবৈধ কাজ করে। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেওয়ার জন্য সবুজের সঙ্গে সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবহ র ন এল ক সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
আয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন
প্রতিটি দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন থাকে। এমনকি সবচেয়ে প্রেমময় সম্পর্কেও কখনো কখনো অভিমান দানা বাঁধে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলানো যায়, তা আমরা শিখতে পারি আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর জীবন থেকে।
আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় স্ত্রী এবং ইসলামের একজন মহান শিক্ষয়িত্রী, তিনিও মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামীর প্রতি রাগ বা মন খারাপ অনুভব করতেন। কিন্তু তিনি কীভাবে তা প্রকাশ করতেন? আর রাসুল (সা.) কীভাবে তাঁর সেই আবেগের মুখোমুখি হতেন?
আয়েশার (রা.) রাগের প্রকাশ
আয়েশা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, প্রাণবন্ত ও স্পষ্টভাষী। একটি হাদিসে আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’
আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘আপনি তা কীভাবে বোঝেন?’ তিনি বলতেন, ‘যখন তুমি খুশি থাকো, তখন বলো, “মুহাম্মাদের রবের কসম”, আর যখন রাগ করো, তখন বলো, “ইব্রাহিমের রবের কসম”।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৪০)
এটি একটি দাম্পত্য সম্পর্কের কোমল মুহূর্ত। আয়েশা (রা.)-এর এই হালকা রাগের প্রকাশ ছিল সূক্ষ্ম কিন্তু মানবিক। তিনি রাসুলের (সা.)নাম এড়িয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর নাম ব্যবহার করতেন, যা তাঁর রাগের একটি নিরীহ প্রকাশ। বোঝা গেলো, রাগ বা মন খারাপ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা হওয়া উচিত সম্মান ও সীমার মধ্যে।
আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫নবীজির (সা.) অপূর্ব ধৈর্য
নবীজির (সা.) আচরণ ছিল এই গল্পের প্রকৃত শিক্ষা। তিনি স্ত্রীর রাগকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন, কিন্তু কখনো তাঁকে তিরস্কার বা অপমান করতেন না। পরিবর্তে, তিনি তাঁর আবেগ বুঝতেন এবং কোমলভাবে তা সামাল দিতেন। রাসুল (সা.)–এর এই আচরণ আমাদের শেখায় কীভাবে দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য ও সহানুভূতি বজায় রাখতে হয়।
একটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.)অন্য স্ত্রী সাফিয়া (রা.)-এর উচ্চতা নিয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। এটি ছিল একটি মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ, কিন্তু নবীজি (সা.)তাঁকে কঠোরভাবে তিরস্কার করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি এমন কথা বলেছ, যা সমুদ্রের পানিতে মিশলে তা বিষাক্ত করে দিত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৮২)
এ কথায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে তাঁর ভুলটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্মান বজায় রেখেছিলেন।
আয়েশা (রা.) ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।ঈর্ষার মুহূর্তে রাসুলের (সা.)কোমলতা
আরেকটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.) অন্য স্ত্রীর পাঠানো খাবারের থালা ভেঙে ফেলেছিলেন ঈর্ষার বশে। এটি ছিল একটি বিব্রতকর মুহূর্ত, কারণ সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু নবীজি (সা.) কী করলেন? তিনি রাগ করেননি বা আয়েশা (রা.)-কে অপমান করেননি। পরিবর্তে তিনি শান্তভাবে ভাঙা থালার টুকরো সংগ্রহ করলেন এবং নিজের থালা দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আয়েশা (রা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে হেসে বললেন, ‘তোমাদের মা ঈর্ষান্বিত হয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২২৫)
এ ঘটনা আমাদের শেখায়, রাগ বা ঈর্ষার মুহূর্তে কীভাবে শান্ত থাকতে হয়। নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীর আবেগকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর আচরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, একটি সম্পর্কে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনকঠিন সময়ে মহানবী (সা.)-এর জয়ের কৌশল১১ মে ২০২৫আয়েশার শিক্ষা ও রাসুলের প্রভাব
হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন অসাধারণ নারী। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।
সাহাবিরাও তাঁর কাছে পরামর্শ নিতেন। কিন্তু তাঁর এই মানবিক দিক—রাগ, ঈর্ষা বা মন খারাপ—তাঁকে আমাদের কাছে আরও কাছের করে তোলে। তিনি আমাদের দেখান, আবেগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার বিষয়।
রাসুল (সা.) তাঁকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর তরুণ মনকে বুঝতেন এবং তাঁর ভুলগুলো সংশোধন করতেন কোমলভাবে। যখন আয়েশা (রা.) কিছু ইহুদির প্রতি অভিশাপ দিয়েছিলেন তাঁদের অভিবাদনের ভুলের জন্য, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি কেন তাদের অভিশাপ দিলে? আমি তো শুধু তাদের অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৪৪)
মহানবী (সা.) ছিলেন সবার জন্য রহমত এবং তাঁর দাম্পত্য জীবন আমাদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে একজন রাসুল (সা.), যিনি তোমাদের কষ্টে ব্যথিত হন, তোমাদের কল্যাণের জন্য আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন০৯ মে ২০২৫