আগে শেখ হাসিনার বিচার হবে, তারপর নির্বাচন: ইসলামী আন্দোলন
Published: 30th, April 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সহযোগীদের ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দলের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘যে ফ্যাসিস্ট হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, সন্তানহারা করেছে, আমাদের দেশের টাকা পাচার করেছে, তাদেরসহ তাদের দলগত বিচার আগে হবে, তারপরে নির্বাচনের চিন্তা আমাদের মাথায় আসবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে, তারপরে নির্বাচন।’
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশে সুন্দর ধারায় রাজনীতির চর্চা হয়নি, বরং বারবার দেশের মানুষ রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে ধোঁকা পেয়েছে, ধোঁকা খেয়েছে। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এর একটা পরিবর্তনের চিন্তা আমাদের আছে। এরই অংশ হিসেবে আমাদের এই বৈঠক। আমাদের এ ধরনের বৈঠক চলতে থাকবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, এখন অনেকে বারবার নির্বাচনের কথা বলছেন। অথচ তাঁরা আলোচনা–পর্যালোচনা করে দেখেছেন সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেই ৫৩ বছরের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে, নতুন করে যে চাওয়া, সেটি আর হবে না।
আলোচনা সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।