ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ থাকলে এ সময়ে তার অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার (৬০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকা) খরচ হবে বলে অনুমান করছে এয়ার ইন্ডিয়া। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও অনুরোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে এয়ার ইন্ডিয়ার আসা একটি চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারতের পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে দেশটির বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তান তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো বেশি জ্বালানি খরচ ও আরও দীর্ঘ ভ্রমণ সময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল ভারত, হামলার শঙ্কায় সতর্ক ইসলামাবাদ৩০ এপ্রিল ২০২৫

এয়ার ইন্ডিয়া ভারত সরকারকে ২৭ এপ্রিল একটি ‘ভর্তুকি মডেল’ অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছে, যা এ সংস্থার অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চিঠিতে আনুমানিক হিসাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবছর সংস্থাটির ৫০ বিলিয়ন রুপি (৫৯১ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হবে। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এ চিঠি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ক্ষতির শিকার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর জন্য ভর্তুকি একটি ভালো, যাচাইযোগ্য ও ন্যায্য বিকল্প.

..পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ ভর্তুকি তুলে নেওয়া যেতে পারে।’

এয়ার ইন্ডিয়া ভারত সরকারকে ২৭ এপ্রিল একটি ‘ভর্তুকি মডেল’ অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছে, যা এ সংস্থার অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চিঠিতে আনুমানিক হিসাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবছর সংস্থাটির ৫০ বিলিয়ন রুপি (৫৯১ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হবে। ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এ চিঠি।

‘আকাশসীমা বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর। এর বাড়তি জ্বালানি পুড়ছে ও বেশি ক্রু ব্যবহার করতে হচ্ছে’, চিঠিতে বলেছে বিমান সংস্থাটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ার ইন্ডিয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। আবার ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিকভাবে এমন আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, যাত্রীদের সতর্ক করল ভারতের দুই বিমান পরিবহন সংস্থা২৪ এপ্রিল ২০২৫

এ বিষয়ে সরাসরি অবগত রয়েছে, এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাগুলোর নির্বাহীদের পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মূল্যায়ন করতে বলার পর এ চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

সরকারি মালিকানায় থাকার পর বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর উন্নয়ন ইতিমধ্যে বোয়িং ও এয়ারবাসের পক্ষ থেকে জেট সরবরাহে বিলম্বের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটি ৫২০ মিলিয়ন ডলার নেট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে তাদের বিক্রি হয়েছে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের।

সরকারি মালিকানায় থাকার পর বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর উন্নয়ন ইতিমধ্যে বোয়িং ও এয়ারবাসের পক্ষ থেকে জেট সরবরাহে বিলম্বের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটি ৫২০ মিলিয়ন ডলার নেট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে তাদের বিক্রি হয়েছে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের।

ভারতের ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাজার অংশীদারির এয়ার ইন্ডিয়া ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফ্লাইট পরিচালনা এবং এসব রুটে প্রায়ই পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করে থাকে। এটি এর বৃহৎ অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্ডিগোর চেয়ে অনেক বেশি দূরপাল্লার ফ্লাইট পরিচালনা করে।

আরও পড়ুনপাকিস্তান-ভারতের পাল্টাপাল্টি আকাশসীমা বন্ধে কার কী ক্ষতি২৬ এপ্রিল ২০২৫

সিরিয়াম অ্যাসেন্ডের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে দিল্লি থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া ও এর বাজেট ইউনিট এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সম্মিলিত ফ্লাইট সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০টি।

পৃথক তিনটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় বিমান খাতের ওপর চাপ কমাতে ভারত সরকার বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছে, যাতে চীনের কাছাকাছি ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বিকল্প রুট ব্যবহারের সম্ভাবনা ও কিছু করছাড়ের বিষয় নিয়ে কাজ করা যায়।

এয়ার ইন্ডিয়া চিঠিতে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওভারফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কথা বলতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

আরও পড়ুনআকাশসীমায় নজরদারি বাড়িয়েছে পাকিস্তান৩০ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম ন পর বহন র ইন ড য ভর ত ক ফ ল ইট র জন য র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিয়মিত সভা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জোগান ও ব্যাংকের মূলধন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মূলধন জোগান দেওয়া ছাড়া শুধু সংকটে পড়া ব্যাংক নয়, ভালো ব্যাংকগুলোকেও ভুগতে হতে পারে।

‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার: মূলধন এখন কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন অভিমত উঠে আসে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ব্যাংকার, পুঁজিবাজারের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ।

বক্তারা বলেন, ব্যাংকে পর্যাপ্ত মূলধন হলো আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি, যা আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়, তারল্য বজায় রাখে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা টিকিয়ে রাখে।

এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বিনিয়োগ কৌশল নেই। ফলে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোও বিভিন্ন বাধা তৈরি করে রেখেছে। এসব দূর করা জরুরি। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বন্ধ করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে হবে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী নতুন পথের সন্ধান করতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য মূলধন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। আগে যে ভুল হয়েছে, তা শোধরাতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান ও. রশিদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারধারণে ২ শতাংশ কোনো ইস্যু নয়। সমস্যা হলো সুশাসন ছিল না। একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে একজনের বেশি পরিচালক না দিলেই হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আর বন্ড নয়, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।

আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ চলে, তার অবসান হওয়া দরকার। এনআই অ্যাক্টে মামলা হলে শুনানির তারিখ পেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকের মূলধনে বাড়াতে দেশের পাশাপাশি বিদেশি তহবিলের দিকেও নজর দিতে হবে। বিদেশ থেকে এখনো কম খরচে তহবিল পাওয়া সম্ভব। এ জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে অনেক ভালো নিয়মকানুন ছিল। আমরা ধীরে ধীরে তা থেকে সরে এসেছি। সুদের হারে ৬/৯–এর মতো তত্ত্ব চালু করে আমরা সারা বিশ্বকে শিখিয়েছি। এর প্রতিদান এখন আমরা পাচ্ছি। এ জন্য আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে চলতে হবে। যেসব ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েও ঠিক করা যাবে না, সেগুলোতে টাকা ঢালা ঠিক হবে না। যেসব ব্যাংক ঠিক হওয়া সম্ভব সেগুলোর এবং ভালো ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়াতে হবে।’ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধার কারণ দেশে নতুন আর্থিক পণ্য চালু করা যায় না বলে জানান তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, মূলধন বাড়াতে সরকারের গ্যারান্টি–নির্ভর বন্ড চালু করতে হবে। তবে দেশের মানুষের বন্ডে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা ভালো না। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া বন্ডের টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর বন্ড এখন ক্লাব নির্ভর হয়ে গেছে। এক ব্যাংকের বন্ড অন্য ব্যাংক কিনছে। বন্ডে বিনিয়োগে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের কিনতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এ এফ নেছারউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাতে এই দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক একীভূতকরণই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়াটা নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী সংস্কার, স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ, স্বতন্ত্র মূল্যায়ন এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য মূলধন পুনর্গঠন কাঠামো দরকার।

সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন বলেন, ধীর আইনি প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী আস্থা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী বাণিজ্যিক আদালত দরকার। যারা অর্থ তছরুপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও খেলাপির মামলা দিয়ে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করলে কিছুটা ফলাফল পাওয়া যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ