কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় শত বছরের পুরোনো খাল দখলে নিতে বাঁধ দিয়েছেন জিল্লুর রহমান নামে এক মৎস্য খামারি। নিজের মৎস্য খামার-সংলগ্ন খালে দুটি বাঁধ নির্মাণ করেছেন ওই মৎস্য খামারি। উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষোভ জানিয়ে খাল থেকে দ্রুত বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের পাড় কেটে ব্যক্তিগত মৎস্য খামারের পরিধি বাড়াতেই জিল্লুর ওই খালের দুই মাথায় বাঁধ দিয়েছেন। এক পর্যায়ে খালের এক পাড় কেটে মৎস্য খামারের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালেও খাল থেকে বাঁধ অপসারণ করেননি জিল্লুর।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, দানাপাটুলি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাগলাইল এলাকায় খালের মধ্যে দুটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খালটির পূর্ব পাশেই রয়েছে এলাকার জিল্লুর রহমানের মৎস্য খামার। বাঁধ দেওয়ায় খালের একটি বড় অংশের সঙ্গে জিল্লুর রহমানের মৎস্য খামারের একটি সংযোগ তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, মৎস্য খামারটি সম্প্রসারণ করতে যে কোনো সময় খালের এক পাড় কেটে খামারের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলবেন জিল্লুর।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ভুঁইয়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির উথান জানান, খালটি ব্রিটিশ আমলের। দেশে যতবার ভূমি জরিপ হয়েছে, ততবারই খালটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। একসময় এই খালে বর্ষাকালে শত শত মানুষ জাল নিয়ে মাছ শিকার করতেন। এই খালটি ছিল এই এলাকার বিল ও ফসলি মাঠের প্রাণ। খালে বাঁধ দেওয়া হলে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। তারা জিল্লুরকে খালে বাঁধ দেওয়ার সময় বারবার নিষেধ করলেও তিনি শোনেননি। বাঁধ অপসারণে এলাকাবাসী শিগগিরই জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
দানাপাটুলি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া জানান, তিনি জিল্লুর রহমানকে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ডেকে খালে বাঁধ না দেওয়ার জন্য নিষেধ করেছেন। তিনি কিছুতেই নিষেধ শুনছেন না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ল র রহম ন মৎস য খ ম র এল ক ব স
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।