ময়মনসিংহে মিনি চিড়িয়াখানার পাশের অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিল সিটি করপোরেশন
Published: 4th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের পাশে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। আজ রোববার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে অবৈধ স্থাপনা সরাতে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন।
জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে আলোচিত মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারা থাকলেও সেটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। নিজের শ্যালকের নামে ইজারা নিয়ে সেটি পরিচালনা করছিলেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অবৈধভাবে পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানাটিতে একটি ভালুকের শরীরে পচন ধরলে এ নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল মিনি চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করে দেয় বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এর পর থেকে শুধু শিশুপার্ক পরিচালিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানার জন্য জায়গা ইজারা নিয়ে বৈশাখী মঞ্চের পাশে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেখানে ছোট ছোট দোকান করে সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর সেখানে নতুন করে আরও দোকান দিতে শুরু করে দখলদারেরা। এ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তোলেন সচেতন নাগরিকেরা। বিষয়টি সামনে এলে সিটি করপোরেশন অবৈধ এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেয়। পরে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো.
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানগুলো অপসারণ করা হয়েছে। মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক যেহেতু ইজারা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বিষয়ে করপোরেশনের সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর০৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনপর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানার অসুস্থ ভালুকটি১৩ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহের ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’ কাগজে-কলমেই সংরক্ষিত, বাস্তব চিত্র করুণ
ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। স্থানীয়ভাবে এটা ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিত। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮৮৯ সালে প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৭ সালের ১ মে। প্রাসাদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা।
প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের স্ত্রী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে এর নামকরণ হয় ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। ভবন নির্মাণে লোহার ব্যবহার থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে প্রাসাদটি ময়মনসিংহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ১৩৬ বছরের পুরোনো ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ৮ মার্চ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ময়মনসিংহে তালিকাভুক্ত ১১টি পুরাকীর্তির একটি এটি। তবে এখনো এটি অধিদপ্তরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির কোনো সাইনবোর্ড নেই। নিচতলায় গ্রন্থাগার চালু থাকলেও দ্বিতীয় তলার লোহার সিঁড়িগুলো কাঁটাতারে ঘেরা। ভবনের সামনের দুটি ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। পেছনের বাগানে গরু চরানো হয়। ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে।
ভবনটি দেখতে আসা দর্শনার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও ফিরোজা বেগম বলেন, স্থাপনাটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। ফলকে এর ইতিহাস উল্লেখ করলে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।
এই প্রাসাদে অবস্থান করেছিলেন অনেক বরেণ্য ব্যক্তি। ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরে এসে চার দিন আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান করেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ইতালীয় অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি।
সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাটি কেবল কাগজ-কলমেই সংরক্ষিত। বাস্তবে এর চিত্র করুণ।
শশীলজ জাদুঘরের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলসহ ময়মনসিংহের ১১টি পুরাকীর্তির সংস্কার প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। সংস্কারের পর এটি দর্শনার্থীদের উপযোগী করে তোলা হবে। দ্রুতই সেখানে সাইনবোর্ড লাগানো হবে।