কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। নয়াদিল্লি সরাসরি অভিযোগ করেছে—পাকিস্তানের মদদেই এ হামলা হয়েছে। ইসলামাবাদ পাল্টা জানিয়েছে, তারা ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা করছে।

এতেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। অথচ এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব শুধু উপমহাদেশেই নয়, পড়বে বিশ্বজুড়ে। ভারতের ওষুধশিল্প এখন বৈশ্বিক বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ জোগানদাতা। তারা সস্তা জেনেরিক ওষুধের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক।

আবার ভারত অবস্থিত পাকিস্তানের উজানে। সিন্ধু নদের পানি নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ নির্ভর করে সিন্ধুর পানির ওপর। পেহেলগামে হামলার পর ভারত ৬৫ বছরের পুরোনো ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যাকার পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

সবকিছু ছাপিয়ে শঙ্কা হলো—এই দুই দেশের হাতেই আছে পারমাণবিক অস্ত্র। যদি দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে তাহলে এই প্রথমবার ইতিহাসে পরমাণু যুদ্ধ ঘটে যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যদ্বাণী ও কৌশলগত বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা ‘দ্য সুইফট সেন্টার’ নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞ পূর্বাভাসদাতাকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়েছে যে এই উত্তেজনা আসলে কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে। তাঁরা পাঁচটি প্রশ্নে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সেই বিবেচনায় দেখা যাক দুই দেশের এই উত্তেজনার সম্ভাব্য গতিপথ।

১.

আগামী ১৫ মের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১০০ জন বা তার বেশি ইউনিফর্মধারী (সেনা, পুলিশ বা মিলিশিয়া) হতাহত হবে কি?

পূর্বাভাসদাতারা বলছেন এর সম্ভাব্যতা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। যদিও সীমান্তে গোলাগুলি হতেই পারে। তবুও ইতিহাস বলছে—দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সেনা সংঘর্ষের ঘটনা খুবই বিরল। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধই ছিল সর্বশেষ বড় সংঘর্ষ, যেখানে হতাহতের সংখ্যা তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিল।

তবে এবারের হামলার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে গুরুতর বলেই অনেকে মনে করছেন। ভারতের সরকার প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনা মোতায়েন শুরু করেছে কাশ্মীরে। একই সঙ্গে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা মিলিয়ে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত কোনো সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা নিচ্ছে না।

পাকিস্তান তার সামরিক কৌশলে ছোট আকারের ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলে রেখেছে। তবে তা ঘটবে যদি তারা কোনো প্রচলিত যুদ্ধে হেরে যেতে থাকে।২. ৩০ জুন ২০২৫-এর মধ্যে দুই দেশের মিলিয়ে ১,০০০ জন সৈনিক হতাহত হবে কি?

১৫ মের মধ্যে ১০০ জনের বেশি হতাহত হওয়ার সম্ভাব্যতা ১৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আগামী দুই সপ্তাহে বড় সংঘর্ষ না হয়, তাহলে গ্রীষ্মে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যদি ১০০ জনের বেশি হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে তা বড় সংঘর্ষের দিকে গড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, এই সংখ্যা ছাড়ালে দুই দেশের রাজনৈতিক আবহ অনেক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। তখন শান্তির পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে কেউ কেউ আশা করছেন যে দুই দেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে।

৩. সিন্ধু পানি চুক্তি আবার পুরোপুরি কার্যকর হবে কি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে?

যদি দুই দেশের মধ্যে সংঘাতে ১০০ জনের কম হতাহত হয় তাহলে সম্ভাব্যতা ৬৭ শতাংশ। যদি ১০০ জনের বেশি হতাহত হয় তাহলে সম্ভাব্যতা ২২ শতাংশ।

ভারত সরকার ইতিমধ্যে এই চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। অথচ এই চুক্তি ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর ছিল। এমনকি ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও তাতে প্রভাব পড়েনি। এবারই প্রথম তা স্থগিত হলো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বড় সংঘর্ষ না হয়, তাহলে চুক্তি আবার সচল হতে পারে। তবে যুদ্ধ বেড়ে গেলে এই চুক্তি পুনরায় কার্যকর করা রাজনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, ভারত হয়তো এই চুক্তিকে বাদ দেওয়ার সুযোগ হিসেবে এই সংকটকে কাজে লাগাতে চাইছে। আবার কেউ কেউ মনে করিয়ে দেন—চীন এই নদীর উৎস এলাকায় রয়েছে। এই ক্ষেত্রে চীনের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

৪. ২০২৫ সালে ভারতের ওষুধ রপ্তানি কত হবে? যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব কেমন পড়বে?

১০০ জনের বেশি হতাহত হলে আনুমানিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। ১০০ জনের কম হলে: আনুমানিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের জেনেরিক ওষুধ সরবরাহে ভারতের বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এমনকি সংঘর্ষ হলেও ভারতীয় ওষুধ রপ্তানির ওপর প্রভাব খুবই সীমিত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র একাই বছরে ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ কেনে। যুদ্ধে সেই চাহিদা কমবে না।

একজন বলেন, ‘যুদ্ধ বড় আকার না নিলে ওষুধ রপ্তানিতে তেমন কোনো ব্যাঘাত হবে না।’ মুম্বাই বন্দর যেহেতু পাকিস্তান সীমান্ত থেকে দূরে, তাই রপ্তানির রাস্তাও নিরাপদ থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে। সেই তুলনায় বড় হুমকি হলো—যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতীয় ওষুধে শুল্ক বসায়।

৫. ভারত বা পাকিস্তান কি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে এই সংঘাতে?

১০০ জনের বেশি হতাহত হলে সম্ভাব্যতা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১০০ জনের কম হলে সম্ভাব্যতা ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

সবচেয়ে ভয়ংকর প্রশ্ন, কিন্তু সবচেয়ে আশ্বস্তির জবাবও এটি। বিশেষজ্ঞরা একমত যে যুদ্ধ হলেও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা খুব কম। তবে সামান্য আশঙ্কাও চরম বিপজ্জনক।

বিশ্লেষকেরা বলেন, পাকিস্তান তার সামরিক কৌশলে ছোট আকারের ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলে রেখেছে। তবে তা ঘটবে যদি তারা কোনো প্রচলিত যুদ্ধে হেরে যেতে থাকে। আবার এই অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যদি মাঠপর্যায়ের কোনো এক পাগল মেজরের হাতে থাকে, তাহলে ভুল–বোঝাবুঝির মাধ্যমে মারাত্মক কিছু ঘটেও যেতে পারে।

তবুও অনেকেই আশ্বস্ত করেন, ‘কারগিল যুদ্ধেও বহু হতাহতের পরও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। সুতরাং এই ধরনের যুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব।’ তবে তাঁরা সতর্ক করেন—কাশ্মীরে যুদ্ধ যদি সীমান্তের মানচিত্র পাল্টানোর দিকে যায়, তখন পাকিস্তান হয়তো পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলতে পারে।

শেষ কথা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তবে আগুন জ্বলার সব উপাদান হাজির থাকলেও এখনো আগুন লাগেনি। দুই দেশের নেতাদের হাতে এখনো সময় আছে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

সাধারণ মানুষের আশা সবকিছু নিয়ে টানাপোড়েন থাকলেও যেন বোমা না ফাটে। আর সেটা যদি হয় পরমাণু বোমা—তাহলে সেই আগুন শুধু উপমহাদেশে নয়, ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে।

স্যালি চ্যাটারটন আন-হার্ডের সম্পাদক
আন-হার্ড থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র পর স থ ত এই চ ক ত পরম ণ আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ফায়ার সার্ভিসে ১০টি পদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অধীন ১০টি পদের মৌখিক পরীক্ষা ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি

১১ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ৮টা

পদের নাম: অফিস সহকারী কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ওয়‍্যারলেস মেকানিক, অফিস সহায়ক, মাস্টার ড্রাইভার (মেরিন), ইঞ্জিন ড্রাইভার (মেরিন) ও স্পিডবোট ড্রাইভার।

১২ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ৮টা

পদের নাম: মোল্ডার, ওয়েল্ডার, ওয়ার্কশপ হেলপার, মুচি

আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক নিয়োগে পদ ১০,২১৯, ধূমপানের অভ্যাস থাকলে আবেদন নয়৯ ঘণ্টা আগে

পরীক্ষার স্থান

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, কাজী আলাউদ্দিন রোড, ঢাকা।

নির্দেশনা

১. পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও আবেদন কপি সঙ্গে আনতে হবে।

২. প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক চারিত্রিক সনদসহ সব সনদ এবং আবেদনপত্রসহ সব মূল সনদের এক সেট ফটোকপি (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত) মৌখিক পরীক্ষার সময় জমা দিতে হবে।

৩. প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত কোনো তথ্য বা দাখিলকৃত কাগজপত্র জাল, মিথ্যা বা ভুয়া প্রমাণিত হলে কিংবা পরীক্ষায় নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করলে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৪১৭ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ: জেনে নিন নিয়ম ও সুবিধা৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৯ নভেম্বর ২০২৫)
  • ঢাকা বোর্ডের দ্বাদশের ইটিসি-বিটিসি-বিষয়-গ্রুপ-ছবি পরিবর্তন, সময় বৃদ্ধি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৮ নভেম্বর ২০২৫)
  • ফিফা দ্য বেস্ট ২০২৫: বছরের সেরা খেলোয়াড়ের মনোনয়ন ঘোষণা
  • এক ঝলক (৭ নভেম্বর ২০২৫)
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি আবেদন শুরু ২০ নভেম্বর
  • প্রশ্ন: গুণিতক ও গুণনীয়ক কাকে বলে?
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৭ নভেম্বর ২০২৫)
  • ফায়ার সার্ভিসে ১০টি পদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ
  • কমিউনিটি ব্যাংক ও হলিডে ইন ঢাকার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর