ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে ৫ ভবিষ্যদ্বাণী
Published: 7th, May 2025 GMT
কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। নয়াদিল্লি সরাসরি অভিযোগ করেছে—পাকিস্তানের মদদেই এ হামলা হয়েছে। ইসলামাবাদ পাল্টা জানিয়েছে, তারা ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা করছে।
এতেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। অথচ এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব শুধু উপমহাদেশেই নয়, পড়বে বিশ্বজুড়ে। ভারতের ওষুধশিল্প এখন বৈশ্বিক বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ জোগানদাতা। তারা সস্তা জেনেরিক ওষুধের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক।
আবার ভারত অবস্থিত পাকিস্তানের উজানে। সিন্ধু নদের পানি নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশ নির্ভর করে সিন্ধুর পানির ওপর। পেহেলগামে হামলার পর ভারত ৬৫ বছরের পুরোনো ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যাকার পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
সবকিছু ছাপিয়ে শঙ্কা হলো—এই দুই দেশের হাতেই আছে পারমাণবিক অস্ত্র। যদি দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে তাহলে এই প্রথমবার ইতিহাসে পরমাণু যুদ্ধ ঘটে যেতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যদ্বাণী ও কৌশলগত বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা ‘দ্য সুইফট সেন্টার’ নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন অভিজ্ঞ পূর্বাভাসদাতাকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়েছে যে এই উত্তেজনা আসলে কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে। তাঁরা পাঁচটি প্রশ্নে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সেই বিবেচনায় দেখা যাক দুই দেশের এই উত্তেজনার সম্ভাব্য গতিপথ।
১.আগামী ১৫ মের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১০০ জন বা তার বেশি ইউনিফর্মধারী (সেনা, পুলিশ বা মিলিশিয়া) হতাহত হবে কি?
পূর্বাভাসদাতারা বলছেন এর সম্ভাব্যতা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। যদিও সীমান্তে গোলাগুলি হতেই পারে। তবুও ইতিহাস বলছে—দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সেনা সংঘর্ষের ঘটনা খুবই বিরল। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধই ছিল সর্বশেষ বড় সংঘর্ষ, যেখানে হতাহতের সংখ্যা তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিল।
তবে এবারের হামলার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে গুরুতর বলেই অনেকে মনে করছেন। ভারতের সরকার প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনা মোতায়েন শুরু করেছে কাশ্মীরে। একই সঙ্গে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা মিলিয়ে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত কোনো সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা নিচ্ছে না।
পাকিস্তান তার সামরিক কৌশলে ছোট আকারের ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলে রেখেছে। তবে তা ঘটবে যদি তারা কোনো প্রচলিত যুদ্ধে হেরে যেতে থাকে।২. ৩০ জুন ২০২৫-এর মধ্যে দুই দেশের মিলিয়ে ১,০০০ জন সৈনিক হতাহত হবে কি?১৫ মের মধ্যে ১০০ জনের বেশি হতাহত হওয়ার সম্ভাব্যতা ১৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আগামী দুই সপ্তাহে বড় সংঘর্ষ না হয়, তাহলে গ্রীষ্মে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যদি ১০০ জনের বেশি হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে তা বড় সংঘর্ষের দিকে গড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, এই সংখ্যা ছাড়ালে দুই দেশের রাজনৈতিক আবহ অনেক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। তখন শান্তির পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে কেউ কেউ আশা করছেন যে দুই দেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে।
৩. সিন্ধু পানি চুক্তি আবার পুরোপুরি কার্যকর হবে কি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে?যদি দুই দেশের মধ্যে সংঘাতে ১০০ জনের কম হতাহত হয় তাহলে সম্ভাব্যতা ৬৭ শতাংশ। যদি ১০০ জনের বেশি হতাহত হয় তাহলে সম্ভাব্যতা ২২ শতাংশ।
ভারত সরকার ইতিমধ্যে এই চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। অথচ এই চুক্তি ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর ছিল। এমনকি ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও তাতে প্রভাব পড়েনি। এবারই প্রথম তা স্থগিত হলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বড় সংঘর্ষ না হয়, তাহলে চুক্তি আবার সচল হতে পারে। তবে যুদ্ধ বেড়ে গেলে এই চুক্তি পুনরায় কার্যকর করা রাজনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, ভারত হয়তো এই চুক্তিকে বাদ দেওয়ার সুযোগ হিসেবে এই সংকটকে কাজে লাগাতে চাইছে। আবার কেউ কেউ মনে করিয়ে দেন—চীন এই নদীর উৎস এলাকায় রয়েছে। এই ক্ষেত্রে চীনের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
৪. ২০২৫ সালে ভারতের ওষুধ রপ্তানি কত হবে? যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব কেমন পড়বে?১০০ জনের বেশি হতাহত হলে আনুমানিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। ১০০ জনের কম হলে: আনুমানিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের জেনেরিক ওষুধ সরবরাহে ভারতের বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এমনকি সংঘর্ষ হলেও ভারতীয় ওষুধ রপ্তানির ওপর প্রভাব খুবই সীমিত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র একাই বছরে ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ কেনে। যুদ্ধে সেই চাহিদা কমবে না।
একজন বলেন, ‘যুদ্ধ বড় আকার না নিলে ওষুধ রপ্তানিতে তেমন কোনো ব্যাঘাত হবে না।’ মুম্বাই বন্দর যেহেতু পাকিস্তান সীমান্ত থেকে দূরে, তাই রপ্তানির রাস্তাও নিরাপদ থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে। সেই তুলনায় বড় হুমকি হলো—যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতীয় ওষুধে শুল্ক বসায়।
৫. ভারত বা পাকিস্তান কি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে এই সংঘাতে?১০০ জনের বেশি হতাহত হলে সম্ভাব্যতা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১০০ জনের কম হলে সম্ভাব্যতা ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
সবচেয়ে ভয়ংকর প্রশ্ন, কিন্তু সবচেয়ে আশ্বস্তির জবাবও এটি। বিশেষজ্ঞরা একমত যে যুদ্ধ হলেও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা খুব কম। তবে সামান্য আশঙ্কাও চরম বিপজ্জনক।
বিশ্লেষকেরা বলেন, পাকিস্তান তার সামরিক কৌশলে ছোট আকারের ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলে রেখেছে। তবে তা ঘটবে যদি তারা কোনো প্রচলিত যুদ্ধে হেরে যেতে থাকে। আবার এই অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যদি মাঠপর্যায়ের কোনো এক পাগল মেজরের হাতে থাকে, তাহলে ভুল–বোঝাবুঝির মাধ্যমে মারাত্মক কিছু ঘটেও যেতে পারে।
তবুও অনেকেই আশ্বস্ত করেন, ‘কারগিল যুদ্ধেও বহু হতাহতের পরও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। সুতরাং এই ধরনের যুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব।’ তবে তাঁরা সতর্ক করেন—কাশ্মীরে যুদ্ধ যদি সীমান্তের মানচিত্র পাল্টানোর দিকে যায়, তখন পাকিস্তান হয়তো পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলতে পারে।
শেষ কথাভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তবে আগুন জ্বলার সব উপাদান হাজির থাকলেও এখনো আগুন লাগেনি। দুই দেশের নেতাদের হাতে এখনো সময় আছে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
সাধারণ মানুষের আশা সবকিছু নিয়ে টানাপোড়েন থাকলেও যেন বোমা না ফাটে। আর সেটা যদি হয় পরমাণু বোমা—তাহলে সেই আগুন শুধু উপমহাদেশে নয়, ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে।
স্যালি চ্যাটারটন আন-হার্ডের সম্পাদক
আন-হার্ড থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র পর স থ ত এই চ ক ত পরম ণ আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে ২৩ জুন শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসব-২০২৫ ’। যৌথভাবে আয়োজক হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এই উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘হয়ার স্টোরিজ টেক ফ্লাইট’। উৎসবে ৬৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের একটি ভেন্যুতেও রয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকবে ২টি ক্যাটাগরি এবং দেওয়া হবে ৩টি পুরস্কার। একই সঙ্গে থাকবে অপ্রতিযোগিতা বিভাগের ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শন। এ ছাড়া থাকছে চলচ্চিত্রবিষয়ক ২টি মাস্টারক্লাস।
প্রতিযোগিতা বিভাগের ১৫ মিনিটের দৈর্ঘ্য বিভাগে ৩৯টি এবং ৫ মিনিটের দৈর্ঘ্য বিভাগে ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং অপ্রতিযোগিতা বিভাগে ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। দুটি প্রতিযোগিতা ক্যাটাগরিতে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং একটি ক্যাটাগরিতে সেরা পরিচালককে পুরস্কৃত করা হবে। বিচারক হিসেবে আছেন চলচ্চিত্র–বিশ্লেষক বিধান রিবেরু, পরিচালক ও লেখক সৈয়দ আহমেদ শাওকী এবং চলচ্চিত্র–বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালেদ।
২৩ জুন ‘প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসব-২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১০টায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা অডিটরিয়ামে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরবর্তী সময়ে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সিএসসি ডিপার্টমেন্টের ভিসি রুমে প্রদর্শিত হবে নির্বাচিত সিনেমা।
২৪ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা অডিটরিয়ামে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সিএসসি ডিপার্টমেন্টের ভিসি রুমে চলবে চলচ্চিত্রবিষয়ক মাস্টারক্লাস। মাস্টারক্লাসটি পরিচালনা করবেন তরুণ নারী নির্মাতা রাকা নোশিন।
২৫ জুন বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলবে ‘প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসব-২০২৫’–এর সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে থাকছে পুরস্কার বিতরণী এবং বিজয়ী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা। এ ছাড়া সেদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভেন্যুতে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর বিশেষ প্রদর্শনী।
উৎসব কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন জবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আদনান মাহমুদ সৈকত, উৎসব পরিচালক হিসেবে আছেন জবি চলচ্চিত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ রাগীব শাহরিয়ার সৈকত এবং প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আছেন জবি চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুজ্জামান রিক।