রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুবিধা মতো সংস্কার চায়
Published: 12th, May 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান সংস্কারে একমত হলেও, তা চাইছে নিজেদের মতো করে। বিএনপি বলেছে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে তারা রাজি নয়। এনসিপির ভাষ্য, প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাব থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, এ বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটে ফয়সালা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে এনসিসি গঠনকে সমর্থন করছে না বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
গতকাল রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাগরিক কোয়ালিশনের সম্মেলনে এসব মতামত দিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। অন্যান্য দলের নেতারাও নিজ নিজ দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন।
নাগরিক কোয়ালিশন সংবিধানের ৭ সংশোধনীর প্রস্তাবনা তুলে ধরে। এতে নিম্নকক্ষের নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে গঠিত উচ্চকক্ষের অনুমোদনে সাংবিধানিক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের মতো শক্তিশালী করতে বিচার বিভাগের নিয়োগ উচ্চকক্ষের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে সম্পন্নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সব জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান উচ্চকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে প্রস্তাব করা হয়েছে, সংসদ বিলুপ্তির দুই মাস আগে সরকারি ও বিরোধী দল থেকে পাঁচজন করে এমপি নিয়ে ১০ সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি (এপিপিসি) গঠন করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সরকারি ও বিরোধী দল তিনজন করে নাম প্রস্তাব করবে। যিনি এপিপিসির আট সদস্যের সম্মতি পাবেন, তিনিই প্রধান উপদেষ্টা হবেন। কমিটি এতে ব্যর্থ হলে, প্রস্তাবিত ছয় ব্যক্তির মধ্যে থেকে উচ্চকক্ষ ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
প্রধানমন্ত্রী পদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সরকারি হিসাব কমিটি (পিএসি) এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে নির্বাচন, ১০০ সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং জুলাই সনদকে সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্মেলনে বক্তৃতা করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ড.
মানজুর আল মতিনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নাগরিক কোয়ালিশনের সহআহ্বায়ক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারসহ বিশিষ্টজন।
নতুন সংবিধানে অনেক সময় লাগবে
প্রণয়নে দীর্ঘ সময় লাগায় নতুন সংবিধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আসিফ নজরুল। তাঁর বিকল্প প্রস্তাব, আগামী নির্বাচন একযোগে জাতীয় সংসদ ও গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারা একসঙ্গে সংসদ সদস্য এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সপ্তাহে চার দিন সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদের কাজগুলো করবেন; দু’দিন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ বসবে। এতেও সংবিধান প্রণয়নে দুই থেকে তিন বছর লাগবে। এই সময়ে মৌলিক পরিবর্তন আনবে গণপরিষদ। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিকেন্দ্রীকরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা সমাধান নয় জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি জনপ্রিয় দাবি, আমারও দাবি। কিন্তু গ্রহণযোগ্য যুক্তি থাকতে হবে। পৃথিবীর কোথাও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমাবদ্ধ নয়। ভারত, যুক্তরাজ্য কোথাও নেই। দুই মেয়াদ সমাধান না। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো।’ জুলাই সনদের মৌলিক কিছু জিনিস সংবিধানে রাখা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
উচ্চকক্ষকে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবে ভিন্নমত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রধান বিচারপতির অসীম ক্ষমতা, তিনি দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি– এ কারণেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি পদে দাস শ্রেণির লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি একক ক্ষমতায় বেঞ্চ গঠন ও ভেঙে দিতে পারেন। এতে দেখা যাবে, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগপন্থি বিচারপতিদের বেঞ্চই দেবে না– এই উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, উচ্চকক্ষকে বেশি ক্ষমতা দিলে এমন লোককে নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা ছায়া দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। তাই এত ক্ষমতা থাকা ঠিক না।
গণপরিষদ দরকার নেই
সংস্কারে বিএনপির আন্তরিকতা রয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সামনে সংসদ নির্বাচন হবে।’ তা রেকর্ড করে রেখেছি। তবে সংসদই গণপরিষদের ভূমিকা পালন করবে– এ চিন্তার সঙ্গে একমত নই।
সব দল সব বিষয়ে একমত হবে– এমন কথা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, একসঙ্গে সবাই বসছি, এটাই তো গণতন্ত্র। সংস্কারের প্রস্তাবে মনে হচ্ছে, সব দোষ সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগের, তা নয়। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আগের মতো সরকারকে ‘ফুয়েরার’ বানানো যাবে না। সামনের অভ্যুত্থান তো বিচার বিভাগের মধ্যে হবে। এখনও ৩০-৩২ জন ফ্যাসিবাদের দোসর বসে আছে।
নিম্ন আদালতে ২০২৩ সালে গায়েবি সাজা দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, বিকাশ রায় নামে ঢাকার এক বিচারক রাতে আদালত বসিয়ে ২ হাজার মানুষকে সাজা দিয়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সময় দর্শক সারি থেকে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি না।’ তখন সালাহউদ্দিন বলেন, বলা উচিত।
ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘যেসব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে রাখতে পারে। নির্বাচনে জয়ী হলে বাস্তবায়ন করবে। ইশতেহারে রাখলে ভবিষ্যতে আদালত বাতিল করতে হলে ভাববে।’
সাবেক এ সচিব বলেন, ‘উচ্চকক্ষের ধারণা বিএনপিই দিয়েছে। বিএনপিই বলেছে, সংসদীয় কমিটিতে শুনানি করে বিভিন্ন নিয়োগ করা হবে। কিন্তু ভোটের আনুপাতিক উচ্চকক্ষের ধারণায় বিএনপি একমত নয়।’ মাহাদী আমিন বলেন, বিএনপিই সংস্কার শুরু করেছে।
প্রয়োজনে গণভোট
জামায়াতের সেলিম উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন। আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ নয়, নিম্নকক্ষও দরকার– এটাই মূল সংস্কার। আনুপাতিক নির্বাচন ছাড়া ওপরে ওপরে সংস্কার করে লাভ হবে না। নির্বাচনের জন্য পাগল না হলে সংস্কারে ঐকমত্য জরুরি। যদি আনুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য না হয়, তাহলে এ বিষয়ে গণভোটে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
আনুপাতিক নির্বাচন নন-নেগোশিয়েবল
আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষের প্রস্তাবকে নন-নেগোশিয়েবল বা আপসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বিএনপির প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে নয়, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ হতে হবে। মৌলিক সংস্কারের জন্য গণপরিষদ প্রয়োজন।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য হলে নির্বাচন নিয়ে কারও আপত্তি থাকবে না দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ফলে দেশ নির্বাচনের দিকে এক ধাপ এগিয়েছে। নির্বাচনের জন্য মৌলিক সংস্কার করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিকেন্দ্রীকরণের মতো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি না হলে অন্যান্য বিষয়ে ঐকমত্য করেও গণতান্ত্রিক ধারা সচল হবে না।
আনুপাতিক উচ্চকক্ষ ছাড়া ভন্ডুল সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা
উচ্চকক্ষের অধিক ক্ষমতার বিরোধিতা করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এতে দ্বৈতশাসন তৈরি হবে। নিম্নকক্ষ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে। তাই শাসনের ক্ষমতা তাদেরই দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধান শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে বাধা দিতে পারেনি। তাই সাংবিধানিকভাবেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন তিনি।’
সংস্কারের পথরেখার জন্য ঐক্যের ভিত্তি জরুরি মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হতে হবে। নইলে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংস্কারে সবাই একমত। কিন্তু সমস্যা বিস্তারিত সংস্কারে। যেমন– সবাই দ্বিকক্ষ সংসদ চায়। কিন্তু উচ্চকক্ষ কীভাবে হবে, তাতে একমত হতে পারছে না। নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে উচ্চকক্ষ হলে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা ভন্ডুল হয়ে যাবে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ হতে হবে। শেখ হাসিনা সংবিধান রেখেই ফ্যাসিস্ট হয়েছিলেন। তাই মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন।’
অন্যরা যা বললেন
জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণপরিষদের পক্ষে ঐকমত্য নেই। তবে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য রয়েছে।’ মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সংবিধানে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিষয় রয়েছে। পুনর্লিখনই শ্রেয়। কিন্তু ঐকমত্য কীভাবে হবে? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কেন ঐকমত্য হয়নি?’
হাসনাত কাউয়ুম বলেন, ‘সংস্কার করলেই হবে না, তা টিকিয়ে রাখার পথ তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ বাতিল করতে না পারে।’ রাশেদ খান বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার না হলে জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হবে। তবে নির্বাচন দিতে হবে।’
বিএনপির পক্ষে অবস্থান নেন ববি হাজ্জাজ। উচ্চকক্ষের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা করা ঠিক হবে না। এনসিসির পরিবর্তে নির্বাচকমণ্ডলী বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রপতির কাছে সাংবিধানিক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে, মত দেন তিনি।
সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, সংস্কার নিয়ে সংখ্যাতত্ত্ব খেলা হচ্ছে। কেউ কেউ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে গর্ব করে বলছেন– ‘১৬৬ সুপারিশের ১৪৭টিতে একমত হয়েছি।’ কিন্তু মৌলিক সংস্কারে একমত না হলে, এসব বলে কী লাভ?
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল আইন উপদ ষ ট ভ ট র অন প ত র প রস ত ব ন ম নকক ষ ব চ রপত ব এনপ র ক র কর ন বল ন র জন য সদস য ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে
বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।
অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।
বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরীউল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা