আমার গন্তব্য তুমি
আব্দুল্লাহ নেওয়াজ
স্বাধীন তো আমি সবসময় ছিলাম,
পরাধীন তো হয়েছি তোমার জন্য
ভালো তো তোমায় সবাই বাসে,
আমি তো বাসি পাওয়ার জন্য
ক্লান্ত তো আমিও হই কিন্তু
হাঁটি তোমার দেওয়া সুখের জন্য
গন্তব্য তো সবারই আছে,
আমার গন্তব্য তুমি…।
নিরাপদ আকাশ
শারমিন নাহার ঝর্ণা
উত্তপ্ত রোদ ছুঁয়ে দিচ্ছে সজীব পাতার শরীর
পাখিদের মিষ্টি মধুর গান
থেমে যাচ্ছে মিসাইলের বিকট শব্দে
আতঙ্কিত চোখ খুঁজে বেড়ায় ঘন সবুজ,
শুভ্রনীল আকাশের বুকে বেদনার অনল
কোথায় হারালো নিরীহ পাখির ঝাঁক?
নিরানন্দ শহরজুড়ে হিংস্রতার মহাউৎসব।
আমিও উড়তে চাই পাখিদের সঙ্গে
নিরাপদ একটা নীল আকাশ পেলে,
সমস্ত কোলাহল ছেড়ে সুখে ডানা মেলে।
বৃষ্টি নামুক
তুহীন বিশ্বাস
আমার শহরটাতে বৃষ্টি নামুক মুষলধারে
নকল ধুয়ে বেরিয়ে আনুক আসলটারে,
যেমনি করে শুদ্ধ মানুষ সব বেঁচে থাকে
সুগন্ধি তাই ছড়িয়ে পড়ুক জীবন বাঁকে।
আসুক তবে বৃষ্টির ফোঁটা চৌচির মাঠে
পুণ্যের ফসল জমিয়ে থাকুক কর্ম পাঠে,
অন্তর পোড়া দুর্গন্ধে সমাজ নষ্ট করে
ছাইগুলো তাই উড়ে যাক হঠাৎ ঝড়ে।
তোমার শহর আমার মতো সাজাও যদি
সুখের আমেজে ভাসবে তুমিও নিরবধি,
বিষের বাঁশিটা ছাড় এবার তওবা করে
নইলে কিন্তু পচতে হবে সারা জনম ভরে।
নদী ও নারী
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
নারী, এক প্রবহমান নদী,
উৎস এক প্রবহমান নীরবতা থেকে।
জন্ম নেয়, বয়ে চলে আকাশের নীলে,
পৃথিবীর বুকে, মানুষের ভেতরে।
কখনও পবিত্র, তীর্থ, শুদ্ধি
আবার কখনও বিরাট, খরস্রোতা, ক্ষুধার্ত।
নিজেই সৃষ্টির বুকে সংগীত বাজায়,
আবার বুকে লুকিয়ে রাখে কান্না।
তুমি নদীর মতো বয়ে যাও
সীমারেখা ভেঙে পথ তৈরি কর।
তোমার প্রেম জলের মতো ঠান্ডা,
আবার আগুনের মতো জ্বলন্ত।
তোমার দুঃখ বৃষ্টির মতো ঝরে
তুমি কেবল স্রোত নও, তুমি তীরও
যেখানে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখে কেউ,
আবার কেউ হারায় সবকিছু।
কেন আড়ালে থাক
মহসিন আলম মুহিন
আশা দিয়ে তুমি আড়ালে চলে গেলে,
কীসের ছুতায়, কী দোষ খুঁজে পেলে।
ভরা ভাদরে বল কেন আছ দূরে সরে,
নদী যৌবনা, তবুও মিশে না কেন সাগরে।
নয়নের জলে বেদনারা ভিজে ভিজে সিক্ত–
ফল নাহি মেলে, সবই লাগে যেন রিক্ত।
ফুল আসে, কেন ফল নাই গাছের ডালে,
ঘুংঘুর পরা পাখিরা বসে না কেন চালে।
কেন আড়ালে থেকে বিরহের দাও জ্বালা,
তোমারই বিহনে অন্তর পুড়ে হলো কালা।
মেঘে ঢাকা চাঁদ যায় না দেখা চোখ ভরে,
বিষাদ লাগে, সারাক্ষণ মনটা শুধুই পোড়ে।
আমি আর নৈঃশব্দ্য
রবিন ইসলাম
আমি আর নৈঃশব্দ্য—
চুপচাপ হই মুখোমুখি।
জাগে না কোনো সুর, বাজে না কোনো বাঁশি,
শুধু শূন্যতা বয়ে আনে বাতাস—
তাতে নেই শব্দ, নেই ছন্দ, নেই অনুরণন।
আমি আর নৈঃশব্দ্য—
এই ধূসর বিকেলে কেউ ফেরে না পেছনে,
কেউ রাখে না হাত, কেউ ডাকে না নামে।
সব শব্দ গেছে পলায়ন করে,
রয়ে গেছে শুধু এক অদৃশ্য স্তব্ধতা।
তবু দাঁড়িয়ে থাকি আমি—
নৈঃশব্দ্যের চোখে চোখ রেখে।
আমার ভেতরে তার আশ্রয়,
তার ভেতরে আমার অস্তিত্ব।
শুধু আমরা—
আমি আর নৈঃশব্দ্য।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জাসদের সব অংশের ঐক্য করে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবো: ব্যারিস্টার ফারাহ খান
জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেছেন, ‘জাসদ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। একটি বা দুটি আসনের জন্য বড় বড় দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। আমরা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সব অংশকে এক করে এবার ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবো।’
শনিবার দুপুরে রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ঐক্যের লক্ষ্যে বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় মূখ্য উদ্যোক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফারাহ খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে স্বপ্নের সোনার বাংলার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার পরে দেশের গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল, মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এমন স্বাধীনতা চাইনি বলেই সিরাজুল আলম খান দাদার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠিত হয়েছিল। সেসময় এই জাসদ একটি বটগাছের ভূমিকায় থাকলেও ব্যক্তি স্বার্থে আজ তা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে পরগাছা হয়ে গেছে। তাই এখন সময় এসেছে, জাসদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
সারা দেশে ঐক্য করার জন্য জাসদের সব অংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার অংশ হিসেবে খুলনা ও বরিশালের পর রংপুরের সভায় ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন, ‘‘জাসদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ছিল গণতন্ত্র রক্ষা করা, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো- আমাদের জন্মের এই ৫৩ বছরে আমরা আমাদের কোনো সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারিনি। আমাদের নেতারা সিলেকশনের মাধ্যমে পদে বসেছেন। কিন্তু এবার আমরা কর্মীরা মিলে জাসদে ইতিহাস গড়ব। আমরা কর্মীরা নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নেতা নির্বাচন করব। ‘ব্রাকেট বন্দি’ জাসদকে ঐক্যবদ্ধ জাসদে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সরকার আমাদের ওপর বিভিন্ন সময় অন্যায়-অবিচার করলেও আমরা কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপি, আবার কখনও এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করেছি, নিজেদের হাতকে শক্তিশালী করতে পারিনি।’’
ব্যারিস্টার ফারাহ খান আরও বলেন, ‘আমরা যদি বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারি, তবে কেন ঐক্যবদ্ধ জাসদ হতে পারব না। কেন সব ভুল ও মান-অভিমান ভুলে নিজেদের ভাইদের সঙ্গে আমরা এক হতে পারব না। আমাদের জাসদের কোনো অংশ বা নেতারা নতুন প্রজন্ম তৈরি করেননি। সিরাজুল আলম খান সেটি উপলব্ধি করে নিজে উদ্যোগী হয়ে আমাকে তার জীবদ্দশায় এই দলের রাজনীতিতে প্রবেশ করিয়েছেন। আমি নিউক্লিয়াস প্রধান স্বাধীনতার রুপকার জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি। জাসদের ঐক্য নিয়ে তার সঙ্গে আমার বিস্তর কথা হতো, আমি তাকে কথা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বড় দলের নেতারা আমাদের একটি-দুটি আসন দেয়, আর আমরা তাতেই খুশি হয়ে যায়। কিন্তু জাসদই হতে পারতো এই দেশের মূল কান্ডারী। তাই এবারে আমাদের লক্ষ্য হোক, জাসদের ঐক্য।’
বীরমুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাসদ নেতা সাব্বির আহমেদ, আব্দুল হাই, আলহাজ আমিনুল ইসলাম রাজু, শফিয়ার রহমান, ইসমাইল হোসেন বাদল, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মুকুল প্রমুখ। এসময় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা জাসদের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবন্ধ জাসদ গড়ে তোলার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।