মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট, কলেজছাত্রীর ঘরে আগুন
Published: 14th, May 2025 GMT
মাদকসেবীদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ফেসবুকে মাদকবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় কলেজছাত্রীর ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে কলেজছাত্রীর বসতঘরের একাংশ ও মালপত্র পুড়ে গেছে। গত সোমবার গভীর রাতে সুনামগঞ্জ শহরতলির লক্ষ্মণশ্রী গুচ্ছগ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালীর একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুন দেওয়ার আগের দিন মাদকাসক্ত অবস্থায় ওই কলেজছাত্রীর ঘরের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেয় একই গ্রামের মেহেদী হাসান নামের এক যুবক। এরপর প্রতিবাদ জানিয়ে সহায়তা চাইতে ফেসবুকে একটি গ্রুপে পোস্ট দেন কলেজছাত্রী। পোস্ট দেওয়ার পর ওইদিন রাতেই হঠাৎ তারা দেখতে পান, তাদের ঘরে আগুন জ্বলছে। ভুক্তভোগী পরিবারের চিৎকার শুনে গ্রামের বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন। তারা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে ঘরের বাইরের অংশসহ টিন ও মালপত্র পুড়ে যায়।
ওই কলেজছাত্রীর পরিবারের দাবি, রাতের বেলায় ডিজেল বা পেট্রোল জাতীয় কোনো দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর ভাষ্য, গ্রামের মাদকসেবীদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ। ফেসবুক গ্রুপ সুনামগঞ্জ হেল্পলাইনে তাদের গ্রামের মাদকসেবীদের নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তাদের নানাভাবে বিরক্ত করছে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে একই গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান। সে এলাকায় মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। ওই কলেজছাত্রী বলেন, তাদের সন্দেহ মেহেদী হাসান তাদের ঘরে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, মেহেদী গতকাল বিকেলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গ্রামের একদিক থেকে অন্যদিকে প্রকাশ্যে ঘুরেছে ও মানুষকে গালাগাল করেছে। ভয়ে কেউই তাকে কিছু বলতে চায় না।
অভিযোগ ওঠা মেহেদী হাসানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন ফারজানা জান্নাত বলেন, তাঁর ভাই ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগায়নি। আগুন লাগানোর ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই কলেজছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছে। এ কারণে আগুনের ঘটনায় তাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আগ ন স ন মগঞ জ পর ব র র র পর ব র ম দকস ব ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া আর নেই
কারো মৃত্যু সংবাদ পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল আর করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া।
শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মনু মিয়ার চাচাতো ভাই আবদুর রউফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনু মিয়া। গত ১৪মে তাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এক রকম মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা হয়েছিল তার। তারপর বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর নিজ গ্রামে ফেরেন। এরপর ভালই ছিল, হঠাৎ তিনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন জানা যায় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপর আজ সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মনু মিয়া কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কারো কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ নিতেন না। এমনকি খাবারের বেলায়ও ছিল তার একই নিয়ম। নিজের বাড়ি থেকে খেয়ে রওনা না হতে পারলে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েও খেতেন নিজ খরচে।
মনু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৫ মার্চ। কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করছিলেন ১৯৭২ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি খবর খুঁড়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মনু মিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময় মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ডোবায় মনু মিয়ার ঘোড়াটির মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন।
ধারণা করা হয়, ঘোড়াটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা যায় ঘোড়াটি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে স্ত্রী ও স্বজনরা তার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন।
ঢাকা/রুমন/এস