মাদকসেবীদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ফেসবুকে মাদকবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় কলেজছাত্রীর ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে কলেজছাত্রীর বসতঘরের একাংশ ও মালপত্র পুড়ে গেছে। গত সোমবার গভীর রাতে সুনামগঞ্জ শহরতলির লক্ষ্মণশ্রী গুচ্ছগ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। 

ভুক্তভোগী ছাত্রী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা সুনামগঞ্জ শহরের ওয়েজখালীর একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুন দেওয়ার আগের দিন মাদকাসক্ত অবস্থায় ওই কলেজছাত্রীর ঘরের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেয় একই গ্রামের মেহেদী হাসান নামের এক যুবক। এরপর প্রতিবাদ জানিয়ে সহায়তা চাইতে ফেসবুকে একটি গ্রুপে পোস্ট দেন কলেজছাত্রী। পোস্ট দেওয়ার পর ওইদিন রাতেই হঠাৎ তারা দেখতে পান, তাদের ঘরে আগুন জ্বলছে। ভুক্তভোগী পরিবারের চিৎকার শুনে গ্রামের বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন। তারা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে ঘরের বাইরের অংশসহ টিন ও মালপত্র পুড়ে যায়।

ওই কলেজছাত্রীর পরিবারের দাবি, রাতের বেলায় ডিজেল বা পেট্রোল জাতীয় কোনো দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর ভাষ্য, গ্রামের মাদকসেবীদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ। ফেসবুক গ্রুপ সুনামগঞ্জ হেল্পলাইনে তাদের গ্রামের মাদকসেবীদের নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তাদের নানাভাবে বিরক্ত করছে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে একই গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান। সে এলাকায় মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। ওই কলেজছাত্রী বলেন, তাদের সন্দেহ মেহেদী হাসান তাদের ঘরে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। 

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, মেহেদী গতকাল বিকেলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গ্রামের একদিক থেকে অন্যদিকে প্রকাশ্যে ঘুরেছে ও মানুষকে গালাগাল করেছে। ভয়ে কেউই তাকে কিছু বলতে চায় না। 

অভিযোগ ওঠা মেহেদী হাসানের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন ফারজানা জান্নাত বলেন, তাঁর ভাই ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে আগুন লাগায়নি। আগুন লাগানোর ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই কলেজছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছে। এ কারণে আগুনের ঘটনায় তাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’ 

সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আবুল কালাম বলেন, খবর পেয়ে ওই কলেজছাত্রীর বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে জানতে পেরেছে ওই কলেজছাত্রীর পরিবার ও মেহেদী হাসানের পরিবারের মধ্যে পূর্ববিরোধ ছিল। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ আরও তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন স ন মগঞ জ পর ব র র র পর ব র ম দকস ব ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মুখরক্ষার যুদ্ধবিরতি কি স্থায়ী শান্তি আনবে

যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চলছিল এবং উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছিল, তখন হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ চূড়ান্ত হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক ছিল যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ভয় বাড়ছিল। ভারতের প্রথম দফার মিসাইল হামলা ছিল অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর। এরপর তারা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে।

এই পর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই টান টান ছিল যে মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। নিশ্চিত ছিল শুধু একটাই বিষয়। সেটি হলো, কাশ্মীরে নিজেদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের যে গভীরে ঢুকে হামলা চালানোর কৌশল ছিল, তা বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। এই লড়াইয়ের সময় ভারতের যেসব যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটি নাকি তিনটি ফরাসি রাফাল জেট ছিল, সেটি বড় কথা নয়।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান  যুদ্ধবিরতি যেভাবে হলো ১০ ঘণ্টা আগে

মূল বিষয় হলো, প্রতিটি রাফালের দাম যেখানে ২৫ কোটি ডলারের বেশি, সেখানে এই ‘অত্যাধুনিক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান’ বাস্তবে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভারত যেভাবে ভেবেছিল, এই বিমান তার সামরিক ক্ষমতা দেখাবে, সেটা হয়নি; বরং পাকিস্তান যে অস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, সেগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও পাকিস্তান বিমানবাহিনী এত দক্ষতার সঙ্গে তা ব্যবহার করেছে যে রাফাল কার্যত অকেজো হয়ে গেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমান জে-১০ সি, যা কিনতে রাফালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ খরচ পড়ে। তবু এই বিমান দিয়ে তারা ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ এক ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। কারণ, এই দুই দেশের হাতে মিলিয়ে প্রায় ৩০০টি কৌশলগত ও কৌশলগত-পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেগুলো ছোড়ার নানা ধরনের পদ্ধতিও তাদের রয়েছে। ফলে যদি এই উত্তেজনা এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে একটুখানি ভুল হিসাব বা ভুল সিদ্ধান্ত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?

দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?

সবকিছু কি আবার পুরোনো চিত্রে ফিরে যাবে? ঠিক যেমনটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে—ভারতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়, তারপর দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে, যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়, এরপর আবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। অনেক পাকিস্তানি তো বটেই, অনেক ভারতীয়ও হয়তো এই দৃশ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কারণ, কয়েক বছর পরপর এমন উত্তেজনা দেখা দেয়।

গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এবার পাকিস্তানের অনেক গভীরে ঢুকে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালায়। এটি আগের চেয়ে অনেক বড় পদক্ষেপ।

ভারতের অনেক পাঠক হয়তো মনে করতে পারেন, এই লেখায় ‘ভারতকে বাধ্য করা হয়েছে’, এই কথা ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কারণ, তাঁরা যা শুনছেন, তা মূলত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যম ও পরিচ্ছন্ন, ছাঁকাছাঁকি করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। কিন্তু তাঁদের এটা ভেবে দেখা উচিত, ভারতের সরকার গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কী অবস্থানে ছিল।

যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং দুই দেশকে ‘কমনসেন্স’ ও ‘চমৎকার বুদ্ধিমত্তা’ দেখানোর জন্য অভিনন্দন জানান, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি টুইট ছিল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ। রুবিও বলেন, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে (যার মধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানও রয়েছেন) আলোচনা করেছেন।

রুবিও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচক্ষণতা, ধৈর্য আর নেতৃত্বগুণের’ প্রশংসা করেন। কারণ, তাঁরা শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ছিল, ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বসে বহু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।’

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে১৮ ঘণ্টা আগে

এই আলোচনা কোথায় বা কখন হবে, তখনো তা ঠিক হয়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি আবুধাবিতে হতে পারে। যেখানেই হোক না কেন, কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আগে ভারত বলেছিল, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ না করলে, কোনো আলোচনাই হবে না।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাধারণত যখন এমন কিছু হয়, তখন দুই পক্ষই এটাকে ‘নিজেদের জয়’ বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে একমাত্র ভারতই তার অবস্থান বদলেছে। কারণ, পাকিস্তান আগেই বারবার বলেছে, তারা আলোচনায় বসতে চায়। যদি সত্যিই এই সংলাপ হয় আর ভারত যদি মাঝপথে পিছিয়ে না আসে, তাহলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষই হবে প্রকৃত বিজয়ী।

আব্বাস নাসির ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক

ডন থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ দফার প্রথম ও চতুর্থ দাবি না মানায় বাকৃবিতে রেললাইন অবরোধ
  • ‘বাবা এখন কারিনার সঙ্গে অনেক সুখী’
  • রাজশাহীতে নার্সদের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০
  • এমপি আনার হত্যার ১ বছর: মরদেহের খণ্ডাংশের আশায় পরিবার
  • সৌদি আরব পৌঁছেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজের প্রতিবাদে আবারও আন্দোলন
  • কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজের প্রতিবাদে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
  • আনচেলত্তিই ব্রাজিলের নতুন কোচ
  • ভারত-পাকিস্তানের মুখরক্ষার যুদ্ধবিরতি কি স্থায়ী শান্তি আনবে