ঢাবি ভিসি-প্রক্টর একটি আদর্শে বিশ্বাসী, তাই ছাত্রদলের কথা শুনতে চান না: রিজভী
Published: 15th, May 2025 GMT
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য ছাত্রদল করতেন বলে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য তাঁদের কথা শুনতে চাননি—এই অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুধু তা–ই নয়, ছাত্রদলের রাজনীতিও উপাচার্যের অপছন্দ বলে মন্তব্য করেছেন এই বিএনপি নেতা। ছাত্রদলের নেতাদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। উপাচার্যের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও একই আদর্শে বিশ্বাসী বলে ধারণা রুহুল কবির রিজভীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রিজভী এসব কথা বলেন। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য এ প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব, আপনার কাছে গিয়েছিল ছাত্রদলের নেতারা বিচার চাইতে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্রনেতাদের। কেন? আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তাদর্শন কী, তা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। আপনি পছন্দ করেন না, ওখানে জাতীয়তাবাদের পক্ষের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে যারা ছাত্র সংগঠন করে।’
‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোকসেদুল মুমিন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাকিম বিল্লাহ।
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনি আর আপনার প্রক্টর দুজনই একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন। নদীর চর দখলের মতো যদি আপনারা গ্যাংয়ের প্রধান হন, তাহলে তো তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না। আপনাদের মাথায় যে দর্শন, ওইটাই প্রটেক্ট (রক্ষা) করার জন্য কাজ করছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যে আদর্শেই বিশ্বাস করুক, ওটা তাঁর ব্যক্তিগত; কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক, ওনার কাছে প্রতিটি ছাত্রসংগঠন, প্রতিটি ছাত্র সমান মর্যাদা পাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু তিনি যদি তার বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই শান্তিপূর্ণ হবে না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আমরা জানি না আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের আমরাও সমর্থন করেছি। এখনো করে যাচ্ছি; কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে, তখন তাদের সাদরে বরণ করেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেল, তাদেরকে আপনারা উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘উপমহাদেশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মতো করে দেশ চালাবেন? ফ্যাসিবাদকে অনেকে শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে। তাই ডানে-বামে সব দিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন, নাহলে কেউ রক্ষা পাবেন না। বিশেষ রাজনৈতিক দল বা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে জনগণ ধরে ফেলবে।’
ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। পুলিশ তিন ভবঘুরেকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে সাম্যর মতো একজনকে কে হত্যা করবে? ভবঘুরেরা তাকে কেন হত্যা করবে?’
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে সে (সাম্য) ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ, শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে একটা পোস্ট দিয়েছে যে সে জাতীয় সংগীতের পক্ষে। (তার হত্যার পেছনে) এটাই কী কারণ—সে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে খুন হতে হয় আবরার ফাহাদকে।’
রিজভী বলেন, ‘আজ জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। এ জন্যই বলেছি, নিশ্চয় এর (সাম্য হত্যা) পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে।’
সরকারের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সাম্যের রাজনৈতিক শত্রু কারা, আমরা একটু আভাস পাচ্ছি। তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এর পরিণত ভয়াবহ হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র উপ চ র য র র জন ত র জন য হত য র কর ছ ন আপন র আদর শ ব এনপ স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল
সোনারগাঁয়ে পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে গোপনে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান–সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট স্কুলের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম এবং একাধিক অভিযোগের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ইউনিয়নকে যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে মাসুম ও মনিরুজ্জামান নিজেদের ইচ্ছেমতো সব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়। পরে এলাকাবাসী মালামাল ভর্তি গাড়ি আটক করে। কিন্তু এখন উল্টো ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করে বিক্রি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
স্কুলের মতো পবিত্র জায়গায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী রাতেই মালামাল আটকে দিয়ে প্রমাণ করেছে—এ এলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই প্রশাসন যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
এলাকাবাসীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও পরিচালনা কমিটিতে সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম জানান, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে আমাদের বিতর্কিত করতে বিক্রি করা মালামাল চুরির ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মিটিং করেছি৷
অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, আমরা স্কুলের একটি কমিটি করে বিক্রি করেছি। তবেমাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো অনুমতি নেই নি। বিক্রি করার পর গাড়িতে উঠাতে রাত হয়ে যায়। এখানে কোনো চুরির ঘটনা ঘটে নি।
উল্লেখ্য, গত (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের নির্দেশে রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে পঞ্চমীঘাট স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়। যা স্থানীয় এক ভাঙ্গারীর পিক-আপ ভ্যানে নেয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।