সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য ছাত্রদল করতেন বলে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য তাঁদের কথা শুনতে চাননি—এই অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুধু তা–ই নয়, ছাত্রদলের রাজনীতিও উপাচার্যের অপছন্দ বলে মন্তব্য করেছেন এই বিএনপি নেতা। ছাত্রদলের নেতাদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের  কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। উপাচার্যের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও একই আদর্শে বিশ্বাসী বলে ধারণা রুহুল কবির রিজভীর।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রিজভী এসব কথা বলেন। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য এ প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব, আপনার কাছে গিয়েছিল ছাত্রদলের নেতারা বিচার চাইতে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্রনেতাদের। কেন? আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তাদর্শন কী, তা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। আপনি পছন্দ করেন না, ওখানে জাতীয়তাবাদের পক্ষের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে যারা ছাত্র সংগঠন করে।’

‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোকসেদুল মুমিন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাকিম বিল্লাহ।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনি আর আপনার প্রক্টর দুজনই একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন। নদীর চর দখলের মতো যদি আপনারা গ্যাংয়ের প্রধান হন, তাহলে তো তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না। আপনাদের মাথায় যে দর্শন, ওইটাই প্রটেক্ট (রক্ষা) করার জন্য কাজ করছেন।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যে আদর্শেই বিশ্বাস করুক, ওটা তাঁর ব্যক্তিগত; কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক, ওনার কাছে প্রতিটি ছাত্রসংগঠন, প্রতিটি ছাত্র সমান মর্যাদা পাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু তিনি যদি তার বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই শান্তিপূর্ণ হবে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আমরা জানি না আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের আমরাও সমর্থন করেছি। এখনো করে যাচ্ছি; কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে, তখন তাদের সাদরে বরণ করেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেল, তাদেরকে আপনারা উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘উপমহাদেশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মতো করে দেশ চালাবেন? ফ্যাসিবাদকে অনেকে শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে। তাই ডানে-বামে সব দিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন, নাহলে কেউ রক্ষা পাবেন না। বিশেষ রাজনৈতিক দল বা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে জনগণ ধরে ফেলবে।’

ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। পুলিশ তিন ভবঘুরেকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে সাম্যর মতো একজনকে কে হত্যা করবে? ভবঘুরেরা তাকে কেন হত্যা করবে?’

বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে সে (সাম্য) ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ, শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে একটা পোস্ট দিয়েছে যে সে জাতীয় সংগীতের পক্ষে। (তার হত্যার পেছনে) এটাই কী কারণ—সে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে খুন হতে হয় আবরার ফাহাদকে।’

রিজভী বলেন, ‘আজ জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। এ জন্যই বলেছি, নিশ্চয় এর (সাম্য হত্যা) পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে।’

সরকারের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সাম্যের রাজনৈতিক শত্রু কারা, আমরা একটু আভাস পাচ্ছি। তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এর পরিণত ভয়াবহ হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র উপ চ র য র র জন ত র জন য হত য র কর ছ ন আপন র আদর শ ব এনপ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় শ্রীশ্রী সর্বজনীন দুর্গামন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা এই মানববন্ধন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এ সময় লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক পরেশ চন্দ্র শীল ও তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের মুক্তির দাবিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার–নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয়।

মানববন্ধনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে বুলডোজার দিয়ে খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির উচ্ছেদ এবং মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

খিলক্ষেতের মন্দির ভাঙার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান প্রসেনজিৎ কুমার হালদার। তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে বিষয়টি সমাধান করতে হবে। তা না হলে ৭২ ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে খিলক্ষেত অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। ভাঙা মন্দির পুনর্নির্মাণে সহায়তা দিতেও সরকারের প্রতি দাবি জানান প্রসেনজিৎ কুমার।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষে প্রদীপ কান্তি দে, সুশান্ত অধিকারী, তন্ময় মৌলিক, তিয়াশ সরকার, সুদীপ্ত প্রামাণিক, সাজেন কৃষ্ণ বল, পিজুস দাস, পলাশ সেন, পিংকু ভট্টাচার্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানববন্ধনে যাওয়া দোকান কর্মচারীকে পিটুনি
  • পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
  • যশোরে অধিগ্রহণ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিলেন জমিমালিকেরা
  • জমির মালিককে না জানিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধ
  • চবি বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি
  • বন্দরে সরকারি খাল ও বাজার অবমুক্তির জন্য  মানববন্ধন
  • মন্দির ভেঙে দেওয়ার ঘটনা মনকেও ভেঙে দিয়েছে: ঐক্য পরিষদের সভাপতি
  • নোয়াখালীতে মাদ্রাসাছাত্র ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • আকিজ সিমেন্ট ও ফিড ফ্যাক্টরীর বায়ু দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন 
  • খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন