তিন কন্যাসন্তান জন্মদানের পরে এক  চিত্রনাট্যকার গুলতেকিন খান। কিন্তু জন্মের তিন দিনের ব্যবধানে সন্তানকে হারিয়েছিলেন তিনি। সন্তানকে নিয়ে দেওয়া তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু প্রকাশিত হলো।

বিয়ের পর হলি ক্রস কলেজে ভর্তি হই। প্রথম বর্ষের শেষ দিকে বুঝতে পারি, আমি মা হতে যাচ্ছি। আমাদের প্রথম কন্যা নোভার জন্মের পর এইচএসসি পরীক্ষার এক-দেড় মাস আগে নোভাকে নিয়ে আমেরিকা রওনা দিই। (তবে হুমায়ূন আহমেদ ‘হোটেল গ্রেভার ইন’-এ লিখেছিলেন, তাঁর লেখা চিঠি পড়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে আমেরিকাতে রওনা হয়েছিলাম, সেটা সত্যি ছিল না)। সবাইকে চিঠি লিখেও যখন আমি আমেরিকা যেতে রাজি হইনি, তখন আমার দাদা প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকে একটি চিঠি লেখেন তিনি।

চিঠিতে কী লেখা ছিল জানি না, তবে দাদা আমাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত রেখে বলেন, ‘বিদেশভ্রমণও শিক্ষার একটি বড় অংশ।’ দাদার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস আমার ছিল না। যা–ই হোক, ব‍্যক্তিগত কারণে পরীক্ষার এক মাস আগে আমেরিকা চলে যাই। হুমায়ূন আহমেদের পিএইচডির পর এক বছর পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করে আমাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে হাইস্কুলের কিছু কোর্স ছিল। আমি তিনটি কোর্স করেছিলাম, সেগুলো হলো ম্যাথ, ফিজিকস ও কেমিস্ট্রি; সবগুলোতেই ৯০ নাম্বার পেয়েছিলাম। ওঁ বলেছিল, এ ধরনের কোর্স করতে পারলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব হয়তো। কিন্তু পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপের পাঁচ মাসের মাথায়ই ব‍্যক্তিগত কারণে দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে ফেরার দেড় মাসের মধ‍্যে আমাদের তৃতীয় কন্যা বিপাশার জন্ম হয় পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হাসপাতালে)।

আরো পড়ুন:

নায়ক ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

যোদ্ধা বাবার কন্যা হিসেবে গর্বিত আনুশকা

কয়েক বছর পার হয়ে ১৯৮৭ সালে নানা রকম ঝামেলা পার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কয়েক মাস পার হতেই আমি বুঝতে পারি, আবারও মা হতে যাচ্ছি। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। আমার শাশুড়িকে দেখেছি, তিনি তাঁর বড় ছেলেকে সংসারের সব ঝামেলা থেকে দূরে রাখতেন। তাই আমিও তা–ই করি। তিন কন্যা তিন স্কুলে পড়ত, অনেক ঝামেলা করে তাদের এক স্কুলে (হলি ক্রসে) এনেছি।

সকালে উঠে ওদের স্কুলের জন্য তৈরি করা বেশ কঠিন। স্কুলের কাপড় পরার পরই আমাকে দ্রুতগতিতে ৬টি বেণি করতে হয়! ওদের স্কুলে পাঠিয়ে দুপুরের খাবারের কথা ভাবতে হয়। ভাজাভুজি, ভাত, ডাল আকবরের মা রান্না করলেও মাছ, মুরগি অথবা মাংস আমাকেই রান্না করতে হয়। কন‍্যাদের বাবা রান্না ভালো না হলে খেতে পারেন না এবং প্রায়ই বন্ধুদের নিয়ে খেতে পছন্দ করেন।

আমার দাদা ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস, মা-ও ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স পড়তেন। আর আমি কি সারা জীবন ম‍্যাট্রিক পাস হয়ে থাকব? অনেক কষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন আবার পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে? হুমায়ূন আহমেদের তখন ৩ নম্বর ধারাবাহিক নাটক লেখার কথা হচ্ছিল। আমি তাঁকে অনুরোধ করি নাটকের কাজ কিছুদিন পরে করতে। সে রাজি হলো না, তাঁর নাকি তখনই লিখতে ইচ্ছে করছিল! আমাদের মধ্যে কথা ছিল এ রকম, তাঁর পড়াশোনার সময় আমি সাহায্য করেছি, তাই আমার পড়াশোনার সময় সে আমাকে সাহায্য করবে। কিন্তু সে তাঁর কথা রাখছে না। এদিকে আমার আগের প্রেগন্যান্সিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। খাওয়া নিয়ে তো অসুবিধা হচ্ছিলই, তার সঙ্গে অন‍্য আরও কিছু উপসর্গ ছিল। একটু পরপর মুখে থুতু জমা হতো! বাসায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ক্লাসের সময় কী করব? তখনো টিস্যু বক্স দেশে পাওয়া যেত না। আমি বড় একটি কাঁধে ঝোলানো ব‍্যাগে অনেক পুরোনো পত্রিকা রাখতাম, থুতু কাগজে ফেলে পলিথিনের ব্যাগে রাখতাম। শরীরের গঠনের জন্য অনেক দিন পর্যন্ত কিছু বোঝা যায়নি। তারপরও আমি খুব চওড়া সুতির ওড়না পরতাম।

হুমায়ূন আহমেদের সব নাটকের শুটিংয়ে আমি যেতাম। এবারের নাটকে আমাদের ৩ নম্বর কন‍্যাও অভিনয় করছিল। এর মধ্যে ঈদে সবার জন্য যখন নতুন কাপড় কেনা হলো, তখন চতুর্থ কন‍্যা, রাত্রির জন‍্যও জামা কেনা হলো।

হুমায়ূন আহমেদকে ইউএসআইএস থেকে আমেরিকাতে তিন মাসের জন্য পাঠানো হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে লেখক আসবেন সেখানে। তাঁর পোশাক সাধারণত আমি কিনি। স্যুটকেসের দায়িত্ব নিয়েছেন মুনির ভাবি, তাঁরা নিউমার্কেটের খুব কাছে থাকেন (যদিও ‘মে ফ্লাওয়ার’, হুমায়ূন আহমেদের ব‍্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখায় ‘স্যুটকেস আমার কেনা’ লিখেছেন)।

হুমায়ূন আহমেদ তখন খুবই ব্যস্ত; কারণ, তিন মাসের নাটক লিখে, অভিনয় পর্বগুলো দেখে তিনি যাবেন। আমাকেও নাটক পড়ে দেখতে হবে আগের পর্বগুলোর রিপিটেশন যেন না থাকে।

আমার কন‍্যার জন্মের তারিখ পার হয়ে গেছে (প্রতিবারই এমন হয়), আমরা দুজনই ডাক্তারের কাছে গেলাম। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ডাক্তার সাহেব, আর কিছুদিন পরই আমি দেশের বাইরে যাব। আমি কি বাচ্চাকে দেখে যেতে পারব না? ডাক্তার সাহেব বললেন, কালকে সকাল ৮টার মধ্যে আমার ক্লিনিকে চলে আসবেন।

তত দিনে একজন প্রকাশক লেখককে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছেন। আমি ৮টার অনেক আগেই রেডি। একটু পরপর বলছি, ৮টা প্রায় বেজে যাচ্ছে। অবশেষে আমরা ক্লিনিকে পৌঁছালাম ৮টা ৫ মিনিটে। ডাক্তারের নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট পর! শুনলাম, উনি ঠিক ৮টায় চলে গেছেন। আমাকে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন নাটকের আউটডোর শুটিংয়ে। কয়েকজন অল্প বয়সী ডাক্তার এবং নার্স কিছুক্ষণ পরপর আমার পালস, হার্টবিট এবং বাচ্চার হার্টবিট চেক করছেন। সাড়ে ১১টার দিকে একজন ডিউটি ডাক্তার অথবা নার্স ডাক্তারকে ফোন করে বললেন, বাচ্চার হার্টবিট ইরেগুলার!

আমার সাথে আত্মীয়স্বজন কারা ছিলেন, কিছুই মনে পড়ছে না। কারণ, সকাল থেকেই আমার কিছু ভালো লাগছিল না! কেন যেন খুব মন খারাপ লাগছিল। শুনলাম, ডাক্তার সাহেব ২টা থেকে ৩টার মধ্যে এসে অপারেশন করবেন। উনি এলেন রাত ৯টার দিকে। ততক্ষণে হুমায়ূন আহমেদ আউটডোরের কাজ শেষ করে দলবল নিয়ে ক্লিনিকে চলে এসেছেন। এর পরের ঘটনা আমার তেমন মনে নেই, শুধু মনে আছে, আমাকে কেউ একজন ইনজেকশন দিয়েছেন।

মাঝরাতে মনে হলো, একটি পুরুষ কণ্ঠে কেউ বলছেন, এই যে শুনতে পাচ্ছেন? আপনার তো ছেলে হয়েছে! তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি!

সকালে ঘুম ভাঙে, দেখি, চেয়ারে বসে আছেন লেখক সাহেব। আমার খুব কাছে এসে বললেন, ‘গুলতেকিন, তোমার তো রাজপুত্রের মতো ছেলে হয়েছে! কী চাও তুমি?’ আমি ক্লান্ত গলায় বলি, ‘কিছু না।’

‘তোমাকে খুব সুন্দর একটা ডায়মন্ডের আংটি কিনে দেব!’ আমি মনে মনে ভাবি, ‘ছেলে হলে কেন ডায়মন্ডের আংটি দেবে?’

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর একজন নামকরা ডাক্তার আমার পাশের চেয়ারে বসেন।

বলেন, ‘আপনি বোধ হয় শুনেছেন, আপনার ছেলে এমএএসে ভুগছে! আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড তৈরি করেছি। কিন্তু আপনি তো তার “মা”, তাই আপনিও ওর কাছে বসে একটু দোয়া করেন!’

আমি কিছু না বুঝে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি।

উনি আমাকে বুঝিয়ে বলেন। অনেক সময় বাচ্চারা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি যদি মায়ের পেটে থাকে, তখন একটি খাবার খায়। ওই খাবারটি তার নিজের পুপ! বেশি খেয়ে ফেললে এবং সাকশন মেশিন দিয়ে তখনই বের না করলে বাচ্চার অবস্থা খুব খারাপ হয়! মেডিকেল টার্মে এটাকে বলা হয় ‘ম্যাকুনিয়াম অ্যাসপিরেশন সিনড্রোমা’। উনি মাথা নিচু করে বসে থাকেন।

আমি ধীরে ধীরে উঠে বসি। একজন নার্সকে বলি আমাকে বাচ্চার কাছে নিয়ে যেতে। আমি হেঁটে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠি। বিশাল একটি ঘরে ছোট্ট একটি কাচঘেরা বাক্সে ঘুমিয়ে আছে আমার ছেলে! আমি তাকে ছুঁতে চেষ্টা করি কিন্তু পারি না! কী দোয়া করব আমি? ফিরে আসি অন‍্য একটি ঘরে।

তিন দিন বয়সে ব্রেন হোমারেজে সে চলে যায় না–ফেরার দেশে! এই তিন দিনে আর কী কী হয়েছিল, আমি জানি না। শুধু মনে আছে, আমার কোলে একটি ধবধবে সাদা টাওয়াল রাখা হয়েছিল। তারপর আমি নিজেকে আবিষ্কার করি আমার পরিচিত ঘরে।

তিন দিন পর তার কুলখানি হয়। বাসাভর্তি মানুষ, আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অভিনয়জগতের অনেক মানুষ। আমাকে কুলখানির তেহারি দেয়, নিজের ছেলের কুলখানির খাবার আমি খেতে পারিনি, আমার বমি আসে।
আমার ঘরে একা বসে থাকি। একেকজন একেক রকম সান্ত্বনা দেয়। একজন বলেন, নিষ্পাপ শিশু মারা গেলে বেহেশতে যায় এবং মাকেও সাথে নিয়ে যায়।

আমি সারা দিন বিছানায় বসে ভাবি, আমি জেনেশুনে কখনো কোনো অন‍্যায় করিনি! আল্লাহর কাছে ছেলেও চাইনি! কেন আল্লাহ আমাকে তাহলে এত কষ্ট দিলেন?

হুমায়ূন আহমেদ চলে যান আমেরিকাতে। আর তিন–চার দিন পর আমার ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা!
পরীক্ষার দিন, বাচ্চারা সবাই স্কুলে। আমি বসে ভাবতে থাকি, কী করা উচিত? আমি বেস্ট ফ্রেন্ড রিংকুকে ফোন করি।
: রিংকু, তুমি পরীক্ষা দিতে যাবার সময় আঙ্কেলকে বলো আমাকেও তুলে নিতে!
: সত্যি আপনি যাবেন?
: হ‍্যাঁ, যাব। যদি বসে থাকতে হয়, তাহলে বসেই থাকব! তবে একটি শর্ত আছে! আমার রোল নাম্বার তোমার চেয়ে চারজনের পর। আমি তোমার পেছনে বসব কিন্তু তুমি কখনো পেছন ফিরে তাকাবে না!
: কেন?
: পরে বলব।
আমরা চারতলায় যাব।
ইতিমধ্যেই আমার খবর ছড়িয়ে গিয়েছে। আমাকে চারতলায় যেতে দেবে না কেউ! নিচে সিক বেডে বসে পরীক্ষা দিতে বলছেন সবাই।
আমি হেঁটে হেঁটে চারতলায় গিয়ে সিট নাম্বার মিলিয়ে বসি।
চারটা প্রশ্নের উত্তর লেখার কথা। আমি লিখছি আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কেন, তা জানি না!
চারটার থেকে সাড়ে তিনটার উত্তর লিখলাম। তারপর পেছনের সিঁড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নামলাম!
আমার সন্তানেরা যেন আমাকে দেখে শেখে যে জীবনে যতই ঝড় আসুক, পড়াশোনা শেষ করতেই হবে!

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ম য় ন আহম দ র র আম র দ ন পর র জন য আম দ র আম র ক পর ক ষ আম র প র সময় বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিপ্লবের এক বছর পর আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে

এক বছরের সামান্য কিছু আগের কথা। বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম দমন অভিযান চালান, তখন রংপুর শহরে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন আবু সাঈদ। তাঁর দুই হাত ছিল প্রসারিত।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হন। পরিবার জানায়, আহত হয়ে পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন সেই গণ–অভ্যুত্থানের একজন শহীদ; যেখানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। শেষ পর্যন্ত ওই আন্দোলনেই শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

শেখ হাসিনা পরে পালিয়ে ভারতে চলে যান। দেশকে নৈরাজ্যের দ্বারপ্রান্তে রেখে তিনি পালিয়েছেন; কিন্তু তখনো দেশে ছিল আশার আলো।

শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশকে আরও ন্যায়সংগত ও কম দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পুনর্গঠন করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বসাতে সহায়তা করেন। এ সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল দেশকে বিশৃঙ্খলা থেকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে যাওয়া।

কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ধীরগতিতে অনেক বাংলাদেশি হতাশ। তাঁরা ভাবছেন, তবে কি আবু সাঈদের মতো বিক্ষোভকারীরা বৃথাই নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, চাকরির স্বল্পতা ও প্রবলভাবে জেঁকে বসা প্রশাসনের মতো পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনরোষ আংশিক বাড়িয়ে দিয়েছিল এসব সমস্যা।

গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ দ্রুত কার্যকর করা—শিক্ষার্থীদের জোর দাবি। তাঁরা চাইছেন, গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার জন্য শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলের অভিযুক্ত নেতা–কর্মী, পুলিশ সদস্যসহ অন্যদের দ্রুত শাস্তি হোক।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ‘আমাকে কষ্ট দেয়’ উল্লেখ করে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, দেশ নৈতিকভাবে উন্নত হবে, বৈষম্য শেষ হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, হত্যাকারীরা শাস্তি পাবেন এবং সেই শাস্তি অপরাধীদের আতঙ্কিত করবে; কিন্তু এ রকম কিছুই ঘটেনি।’

রমজান আলী আরও বললেন, মুহাম্মদ ইউনূস না থাকলে পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হতো।

নতুন সূচনা

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দেশের সংস্কারকাজের ভার মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে এসে পড়েছে। এটি এমন এক দেশ; যা (নানা বিষয়ে) এখনো বিভক্ত। সেখানে আবার প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই ছিল মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম কাজ। গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী লুটপাট, বিশৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। তবে দেশ বর্তমানে আগের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল হলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, হিন্দু সংখ্যালঘু ও শেখ হাসিনার সমর্থকদের ওপর চালানো সহিংসতা দমনে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে একই সময়ে ‘ইসলামি কট্টরপন্থীরা’ নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়েছেন।

বড় পরিসরে সংস্কার কর্মসূচি শুরু করা ছিল মুহাম্মদ ইউনূসের পরবর্তী লক্ষ্য। তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশ বাহিনীর মতো ক্ষেত্রগুলোতে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য ১১টি কমিশন গঠন করেছিলেন। শেখ হাসিনা যেসব প্রতিষ্ঠানকে নিজের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করেছিলেন, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে চাপ মোকাবিলায় সেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর শক্তিশালী করাই ছিল (সংস্কার কর্মসূচির) প্রধান লক্ষ্য।

৫ আগস্ট হাসিনার পতনের বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষ সমবেত হন। সন্ধ্যার হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁরা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ শোনেন। তাঁর কথায় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন; কিন্তু এসব উদ্‌যাপনের আড়ালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাগ-ক্ষোভ লুকিয়ে ছিল। কারণ, ২০২৪-এর জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি।

কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে। এ পরিস্থিতিতে আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, ‘এখন সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে।’ গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে অসন্তোষ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে তাঁর পায়েও গুলি লেগেছিল।

‘আমাদের স্বপ্নগুলো অপূর্ণ রয়ে গেছে’ মন্তব্য করে আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্রনেতারা যে তাগিদ নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনাগুলো শুরু করেছিলেন, তা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে।

গত সপ্তাহে মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংস্কার করা একটি ভোটব্যবস্থার আওতায় দেশে নির্বাচন হবে; কিন্তু এর আগেই বিস্তারিত অনেক বিষয়ের সমাধান বাকি; যা রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের কারণে সুরাহা করা যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাঁর সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ‘সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত’ দেশ পেয়েছে। তবে দেশ সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠছে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূসের দায়িত্ব পালনের অর্ধেকের বেশি সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ নিয়ে আলাপ–আলোচনায় কেটে গেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়ার পর দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গুরুত্বের সঙ্গে বলে আসছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজের বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য সংস্কারের ভার নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রথমে আরও বিস্তৃত পরিসরে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে কষ্ট দেয়। আমরা ভেবেছিলাম, দেশ নৈতিকভাবে উন্নত হবে, বৈষম্য শেষ হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, হত্যাকারীরা শাস্তি পাবেন এবং সেই শাস্তি অপরাধীদের আতঙ্কিত করবে; কিন্তু এ রকম কিছুই ঘটেনিরমজান আলী, আবু সাঈদের বড় ভাই

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল দুই মাস ধরে সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে।

অগ্রগতির আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘কোনো ধরনের তিক্ত বিবাদ ছাড়াই’ তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, সেই সীমা নির্ধারণের মতো বিষয়গুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজনৈতিক বিভাজন

সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের নেতাদের নির্বাচিত করতে পারাটা প্রায় ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ প্রধানত দুটি রাজনৈতিক পরিবার দিয়ে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শেখ মুজিবুর রহমান (শেখ হাসিনার বাবা) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা শুরু করেন (স্বাধীন হওয়ার পর)।

স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন গুরুত্বপূর্ণ সেনা কর্মকর্তা ও পরে রাষ্ট্রপতি হওয়া জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেছিলেন। বর্তমানে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লন্ডনে বসবাসরত তাঁর ছেলে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার আগ পর্যন্ত দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নিয়মিতভাবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। জালিয়াতির ভোট আখ্যা দিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ দেখা না যেতে পারে। কারণ, দেশে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নতুন রাজনৈতিক দলগুলো গ্রাম ও মফস্‌সল এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার থেকে পদত্যাগ করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হাল ধরেন। সমর্থন জোগাড় করতে গত জুলাইতে দলটির নেতারা বিভিন্ন জেলায় ‘দেশ গড়ার’ পদযাত্রা করেন।

তরুণ ভোটাররা সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যবর্তী বয়স প্রায় ২৬ বছর (অর্থাৎ দেশের অর্ধেক মানুষ ২৬ বছরের কম বয়সী, বাকি অর্ধেক ২৬ বছরের বেশি বয়সী। এককথায়, জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ)। দেশের অনেক তরুণ শুধু হাসিনার শাসনামল দেখেই বেড়ে উঠেছেন।

গত বছরের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ খান সাগর। তিনি বলেন, ‘প্রজন্ম হিসেবে আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে ভালো কোনো বোঝাপড়া নেই। কারণ, আমরা এটি দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই নাগরিকেরা যাতে কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন, তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করা উচিত।’

ঢাকার বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক থাহিতুন মরিয়ম। তাঁর আশঙ্কা, অন্য দশটির মতো আরেকটি সাধারণ সমস্যাও অমীমাংসিত রয়ে যেতে পারে। তা হলো এ দেশের প্রথাগত (রক্ষণশীল) সমাজে নারীর প্রান্তিকীকরণের সমস্যার হয়তো সমাধান হবে না। তিনি আরও বলেন, বড় ধরনের সামাজিক পরিবর্তন না এলে শুধু নির্বাচন ও সংস্কারের মাধ্যমে প্রকৃত বদল আসবে না; বরং এগুলো আবারও ‘পুরুষকেন্দ্রিক, পুরুষপ্রধান রাজনৈতিক বাস্তবতা’ তৈরি করবে।

গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ দ্রুত কার্যকর করা শিক্ষার্থীদের জোর দাবি। তাঁরা চাইছেন, গত বছর বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার জন্য শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলের অভিযুক্ত নেতা-কর্মী, পুলিশ সদস্যসহ অন্যদের দ্রুত শাস্তি হোক।

২০২৪ সালের বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক নারী শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল; কিন্তু তাঁরা এখন প্রকাশ্য ভূমিকা থেকে নিজেদের সরিয়ে ফেলেছেন। তবে মরিয়ম বলেন, তিনি এখনো আশা করেন, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে প্রমাণিত হবে।

মিশ্র অনুভূতি

৫ আগস্ট হাসিনার পতনের বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। সন্ধ্যার হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁরা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ শুনেছেন।

ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত বছরের গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁরা জাতীয় বীর হিসেবে গণ্য হবেন এবং ‘শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আইনি সুরক্ষা’ দেবে সরকার। তাঁর এ কথায় উপস্থিত দর্শক–শ্রোতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

কিন্তু এসব উদ্‌যাপনের আড়ালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাগ–ক্ষোভ লুকিয়ে ছিল। কারণ, ২০২৪–এর জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি।

আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী জানান, তাঁর ভাইকে গুলি করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন; কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনাই এ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

রমজান আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ এ অভ্যুত্থানের একজন সুপরিচিত শহীদ।’ তিনি আরও বলেন, যদি তাঁর মামলাই যথাযথভাবে পরিচালনা করা না হয়, তবে বাংলাদেশ কি কখনো কোনো সুবিচার পাবে?

হত্যাকাণ্ডে নিজ ভূমিকার জন্য ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিতিতে মামলা চলছে। গত সপ্তাহে তিনি ভারত থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে ছাত্রদের বিপ্লবকে নিজেদের ‘কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্রের জন্য সহিংস বাধা’ হিসেবে তিনি আখ্যায়িত করেন।

এদিকে কিছু অধিকারকর্মী বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নতুন বাংলাদেশে স্পষ্ট কোনো দিশা নেই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলী সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার আটকে গেছে। এ সরকারকে একদিকে সংস্কারহীন নিরাপত্তা খাত সামলাতে হচ্ছে। ‘‘সহিংস ধর্মীয় গোষ্ঠী’’ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে কখনো কখনো বাংলাদেশের অধিকার রক্ষার চেয়ে হাসিনার সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে।’

বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক দৈনন্দিন জীবনের বড় রকমের সমস্যাতেও রয়েছেন। কারণ, অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালে তা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

আবদুল কাদের (৩৭) বললেন, ঢাকা শহরে তাঁর এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর মেরামতের দোকানের আয় গণ–অভ্যুত্থানের পর ১০ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, অস্থিরতার কারণে গ্রাহকেরা সতর্ক হয়ে পড়েছেন। তবে তিনি আশা করেন, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে কিছুটা স্বস্তি তৈরি হতে পারে।

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে মানুষের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই কিংবা যাঁর কাছে আছে, তিনি খরচ করতে চাইছেন না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিবার নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন প্রিন্স উইলিয়াম
  • মহাখালীতে পেট্রলপাম্পে আগুনে একজন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে
  • ঢাবির হলে চিকিৎসাহীন মৃত্যুর দায় কার
  • সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে থাকুন রফিকুন নবী 
  • মাছের ঘের দখল নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে একজন নিহত
  • সোনালি সাফল্যের আড়ালে ধূসর বাস্তবতা
  • গোমস্তাপুরে ২ শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন
  • পাথর লুটে জড়িত বড় নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না
  • ‘রুকন না হলে চাকরি থাকবে না’ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যাখ্যা
  • বিপ্লবের এক বছর পর আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে