রপ্তানির নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এয়ার ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকায় সরাসরি পোশাক রপ্তানির নতুন পথ তৈরি করতে কার্গো ভিলেজের দুটি স্ক্যানার মেশিনই সচল করা হয়েছে। খালি করে রাখা হয়েছে ১৭০ ও ১২০ টন পণ্য ধারণ সক্ষমতার দুটি ওয়্যার হাউস। ওয়েট মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও চলছে জোরেশোরে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে এয়ার শিপমেন্ট শিগগির চালু করতে আরও কী কী কাজ করতে হবে, তার অগ্রাধিকার তালিকাও ঠিক করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে আগামী মাসেই চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

দুটি ইপিজেডের পাশাপাশি চট্টগ্রামে রয়েছে ৪০০-এর বেশি গার্মেন্ট কারখানা। আছে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোনও। কিন্তু এয়ার শিপমেন্টের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় এতদিন চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ঢাকায় নিয়ে তারপর এয়ার শিপমেন্ট করতে হতো। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে ভারত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নতুন করে। 
২০০৫ সাল থেকে ইত্তেহাদ এবং এয়ার এমিরেটসের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরাসরি কার্গো পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা চালু থাকলেও ২০২১ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়।
গত চার বছর চট্টগ্রাম থেকে বিশেষায়িত কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রীবাহী বিমানে করে পণ্য পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করায় বিকল্প পথ তৈরিতে জোর দিয়েছি আমরা। আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তাই কার্গো ফ্লাইট চালুর কার্যক্রম দ্রুতগতিতে শেষ করা হচ্ছে।’ কাজের ধাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাক থেকে কার্গো নামানোর পর সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী চেকিং করা হবে। এর পর সেটি কাস্টমস যাচাই-বাছাই করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিমানে পাঠানো হবে। তারপর পণ্য রপ্তানি হবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, চট্টগ্রামে এয়ার শিপমেন্টের ব্যবস্থা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা দরকার। তবে মনে রাখতে হবে, এ সেবা যেন আর্ন্তজাতিক মানের হয়। তা না হলে ক্ষতির সন্মুখীন হবেন ব্যবসায়ীরা।

এমিরেটস ও ইত্তেহাদের স্থানীয় এজেন্ট ভয়েজার এভিয়েশনের ম্যানেজার মোরশেদুল আলম বলেন, শুধু কার্গো ফ্লাইট চালু করলেই হবে না, রপ্তানি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) এবং ‘আরএ-থ্রি’ স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা জরুরি। ইউরোপে সরাসরি পণ্য পাঠাতে হলে এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বর্তমানে যে কার্গো স্টেশনটি রয়েছে, সেখানে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রপ্তানি পণ্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে আমদানি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় স্টেশনটি অনেকটাই অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। তবে এখন যে ওয়্যারহাউস ক্যাপাসিটি আছে, তা দিয়ে সপ্তাহে দুটি ওয়াইড বোর্ড কার্গো ফ্লাইট হ্যান্ডেল করা যাবে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম-চীন রুটে কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আলোচনা চলছে। 

সামনে আট চ্যালেঞ্জ
এদিকে চট্টগ্রামে বিমানবন্দর দিয়ে এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানির দুয়ার খুলতে আটটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বেবিচক। এগুলো হচ্ছে– রপ্তানি এলাকায় এখনও ওয়েইং মেশিন স্থাপন না করা, পচনশীল পণ্যের কোল্ডস্টোরেজ বিকল অবস্থায় থাকা, স্ক্যানিং মেশিন এরিয়ায় পুরকৌশল কাজ বাকি থাকা, বিমানবন্দরের পুরো আপারেশন পরিচালনার জন্য একটিমাত্র কাস্টমস সেটআপ থাকা, বিমানবন্দরের কার্গো ভবনের নিচতলায় সোনালী ব্যাংকের শাখাটি এখনও স্থানান্তর না হওয়া, রপ্তানি কার্গোর জন্য বিশেষায়িত জোন না থাকা, এখনও কার্গো ওয়্যারহাউস সম্প্রসারণ না হওয়া এবং কার্গো অপারেশনের জন্য স্থায়ী জনবলের অভাব। এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল ইট ফ ল ইট চ ল র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ত্রাণের ট্রাকের কাছে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা

গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণের ময়দা নিয়ে যাওয়া ট্রাকের কাছে ভয়াবহ হামলা হয়েছে। শনিবার দক্ষিণ গাজার আল মাওয়াসিতে ইসরায়েলের চালানো এ হামলায় পাঁচজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সব মিলিয়ে এক দিনে উপত্যকায় আরও ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েল অবরোধ শিথিল করে একাংশে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও উত্তর গাজায় তা পৌঁছাচ্ছে না। সেখানকার মানুষ এখনও অভুক্ত দিন পার করছেন।

অবরুদ্ধ উপত্যকায় ত্রাণের গাড়ি প্রবেশ শুরু হলেও বন্ধ হচ্ছে না হামলা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, গত দু’দিনে শতাধিক লক্ষ্যে তারা হামলা চালিয়েছে। এতে ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে গাজা সিটির পূর্বে তুফা এলাকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় চারজন নিহত হন। বিমান ও ড্রোন হামলার পাশাপাশি সামরিক অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গতকাল তারা মধ্য গাজার দায়ের আল বালাহতে সামরিক অভিযান শুরু করে। এ  পরিস্থিতিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৯০০ পার হয়েছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫৯৩ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আরও অন্তত ১০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে নিখোঁজ আছেন। 

৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ

গাজার চিকিৎসা সহায়তাবিষয়ক বিভাগের প্রধান শনিবার বলেছেন, উপত্যকায় গত তিন দিনে ৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও খাবারে তীব্র সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণে ত্রাণ পৌঁছলেও উত্তর গাজায় কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। কার্যত সার্বিক পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি বলে গাজা থেকে সংবাদকর্মীরা জানাচ্ছেন। আহমেদ আল নাজ্জার নামে গাজার এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ গাজায় সীমিত সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। অনেক পরিবার এখনও অভুক্তই থেকে গেছে। তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি। 

মানবঢাল বানাচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজার সাধারণ বাসিন্দাদের মানবঢাল বানানোর অভিযোগ উঠেছে। মাসুদ আবু সাইদ নামের এক ফিলিস্তিনি জানান, ২০২৪ সালের মার্চে খান ইউনিসে তাঁকে দুই সপ্তাহ ধরে মানবঢাল করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এটা খুব ভয়াবহ বিষয় ছিল। আমার শিশু-সন্তান ছিল; আমি তাদের কাছে যেতে চাচ্ছিলাম।’ তিনি জানান, তাঁকে জোর করে হামাসের টানেল খুঁজে বের করার কাজ দেওয়া হয়েছিল। 

আরও খাদ্য সরবরাহের আহ্বান

গাজার পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে ত্রাণ সরবরাহ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক অফিস জানায়, গাজায় প্রয়োজন ব্যাপক। সে তুলনায় অল্প পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজার দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক করে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কি আছে কানে স্বর্ণপামজয়ী সিনেমায়?
  • ইশরাকের শপথের উদ্যোগ নেই, ফের নগর ভবনে সমর্থকরা
  • গাজায় ত্রাণের ট্রাকের কাছে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা
  • শিল্প ও শ্রম খাতে দ্বন্দ্ব নিরসনে রাজপথ অবরোধ সঠিক নয়: সচিব
  • সাগরে লঘুচাপের শঙ্কা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ব্রাজিল কাপে সান্তোসের স্বপ্নভঙ্গ, নেইমারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত
  • কবি জসীম উদ্‌দীন ও কবর কবিতা