রাজধানীর পল্লবীতে মেট্রো স্টেশনের নিচের ফুটপাতে এক ব্যক্তির গতি রোধ করে ধারালো অস্ত্রের মুখে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়েছেন তিন ছিনতাইকারী। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম আল-আমিন রানা। তিনি রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন পল্লবী এলাকায়।

আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো সহায়তা পাননি।

ভিডিওতে দেখা যায়, পিঠে ব্যাগ থাকা এক ব্যক্তি মুঠোফোন হাতে মেট্রো স্টেশনের নিচের সড়কের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁর পেছন পেছন আসছিলেন তিনজন। তাঁদের একজন ওই ব্যক্তির আগে চলে যান। ওই ব্যক্তি ফুটপাতের সংকীর্ণ স্থানে যেতেই তিনজন তাঁর গতি রোধ করেন। তাঁরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ছিনতাইকারীদের একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করেন। তারপর তিনজনই দৌড়ে একটি অটোরিকশায় উঠে পালিয়ে যান।

ভুক্তভোগী আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন রাতে কাজ শেষে খিলক্ষেত থেকে বাসে করে মিরপুরের পল্লবী মেট্রো স্টেশনের কাছে নামেন তিনি। এরপর হেঁটে বাসার দিকে যাওয়ার পথে তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের মুখে তাঁর হাতে থাকা আইফোনটি ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাঁর হাতে ও পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এক ছিনতাইকারী। এতে তিনি আহত হন। মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার পর তিনি ছিনতাইকারীদের পেছন পেছন দৌড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছিনতাইকারীরা অটোরিকশায় করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর সেদিন রাতেই পল্লবী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান আল-আমিন। তিনি বলেন, তবে এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি।

আল-আমিন বলেন, একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) মুঠোফোন নম্বর থানা থেকে তাঁকে দেওয়া হয়। বলা হয়, এই এসআই ঘটনাটি তদন্ত করবেন। কিন্তু পুলিশের দিক থেকে আর কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজে গতকাল রোববার ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন, পুলিশকে তা দেখান। আজ সোমবার সকালেও ওই এসআইয়ের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। এসআই তাঁকে বলেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে আসছেন।

থানা থেকে আল-আমিনকে যে এসআইয়ের নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তিনি হলেন জয় দাশ। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পল্লবী এলাকাটি খুবই জনবহুল। তাঁরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আল-আমিন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন—এমন ঘটনা তিনি জানেন না। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গতকালই এই থানায় যোগ দিয়েছেন। ঘটনাটির বিষয়ে তিনি এখনো কিছু জানেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ফ টপ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়নাবাজি

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগ্য হওয়া দূরে থাক, কখনও নিয়োগ পরীক্ষা দেননি। অথচ চাচার সহযোগিতায় জালিয়াতি করে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। এরই মধ্যে দুটি পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন যুগ্ম-পরিচালক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। একটি মামলায় পুলিশি তদন্তে ধরা পড়ার পর বুধবার তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাঁর চাচা বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সবার তথ্য পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামের এক ব্যক্তি আসলেই ২০১৩ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি পান। একই সময়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয় তাঁর। আসল আনসারী বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান না করে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি এখন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী হিসেবে এতদিন যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে আসছেন তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা উল্লেখ আছে গাজীপুর। যদিও তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। জালিয়াতি করে এই জাতীয় পরিচয়পত্রও পরে বানিয়েছেন। তাঁর প্রকৃত নাম মো. শাহজালাল বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বুধবারও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে আসেন। তবে দুপুরের দিকে নিয়োগ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি হওয়ার পর আর দেখা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ। যতদূর শুনেছেন তিনি বাসায়ও যাননি। তাঁর চাচা শাহজাহান মিঞারও টেলিফোন বন্ধ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রকৃত আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী সমকালকে বলেন, তাঁর আপন বোনজামাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করেন। কোনো একটি কাজে সম্প্রতি রাজশাহী অফিসে যান। সেখানে একই নামের নেমপ্লেট দেখে ছবি তুলে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে দেন। তাঁর এই ব্যতিক্রম নামের সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়ায় খুনসুটি করে বলেছিলেন– ‘‘এতদিন পৃথিবীতে মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে একজন ছিল। এখন আরেকজনকে পাওয়া গেল।’ 

তিনি জানান,  বুধবার  পরিচিত কয়েকজন দুপুরের পর নকল আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর  নিয়োগ বাতিলের খবর জানান।

জানা গেছে, কোনো একটি মামলার তদন্তের জন্য আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর বিষয়ে খোঁজখবর করছিল পুলিশ। তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন অসংগতি উঠে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া তথ্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত তথ্যে কোনো মিল নেই। সোমবার পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকে এই তথ্য দেয়। প্রাথমিক যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য পায় জালিয়াতির মাধ্যমে ছবি টেম্পারিং করে তাঁকে এই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। যখন এই নিয়োগ হয়েছে, ওই সময় নিয়োগ শাখায় কর্মরত ছিলেন আপন চাচা শাহজাহান মিঞা। ফলে দেরি না করে আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর শাহজাহান মিঞাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, পুলিশের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া একজন নারী কর্মকর্তার বাবার ভুয়া সনদ প্রমাণিত হওয়ার তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গেও শাহজাহান মিঞার নাম এসেছিল। এর আগে একজন নির্বাহী পরিচালক টেম্পারিং করে বয়স বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। তিনটি ঘটনার সময়ই গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে কারণে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া প্রতিটি নিয়োগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও এখনও এ বিষয়ে অফিস আদেশ হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মো. শাহজাহান মিঞার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মস্কো থেকে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘আয়নাবাজি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়নাবাজি
  • মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় ছবি দেওয়া নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধার
  • যশোরে শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা
  • সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকসহ ১৭ গরু লুট
  • পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ১৩ বছর পর এক আসামি গ্রেপ্তার
  • ঝিনাইদহে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীর দোকানে মিলল অস্ত্র ও ককটেল
  • দিনাজপুরে ধানখেত থেকে সাঁওতাল তরুণের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার