Prothomalo:
2025-05-29@02:04:30 GMT

কোরআনের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি

Published: 26th, May 2025 GMT

লোকমান হাকিম—এক নামেই পৃথিবীব্যাপী পরিচিত। তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা মানুষকে চুম্বকের মতো টানত। কোরআনে তাঁর নামে রয়েছে একটি পূর্ণ সুরা—সুরা লোকমান, ৩১তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। ৩৪টি আয়াত নিয়ে এই সুরা। তিনি ছিলেন আফ্রিকার নাওবা গোত্রের কৃষ্ণাঙ্গ, সুদান-মিসরীয় বংশোদ্ভূত, নাম লোকমান বিন আনকা বিন সাদুন। আরবে এসেছিলেন ক্রীতদাস হয়ে। জাবের (রা.

) বলেন, তিনি ছিলেন খর্বাকৃতির, মোটা ঠোঁটের অধিকারী। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হলেও তাঁর কথার জাদুতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত।

প্রজ্ঞার রহস্য

একবার এক বিশাল সমাবেশে লোকমান হাকিম জ্ঞানগর্ভ কথা বলছিলেন। একজন প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি সেই লোক, যিনি আমার সঙ্গে অমুক বনে ছাগল চরাতেন?’ লোকমান হাকিম হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিই সে।’ লোকটি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘তাহলে এত সম্মান কীভাবে পেলেন? সবাই আপনার কথা শুনতে ছুটে আসে!’ লোকমান বললেন, ‘দুটি কাজ—সব সময় সত্য বলা আর অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলা।’ আরেক বর্ণনায় তিনি যোগ করেন, ‘দৃষ্টি সংযত রাখা, প্রয়োজনের বাইরে কথা না বলা, হালাল জীবিকায় তুষ্ট থাকা, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা, সত্যে অটল থাকা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা, মেহমানের আপ্যায়ন করা এবং প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ। তুমিও এগুলো করলে এমন মর্যাদা পাবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসিরের বরাতে তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি শফি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ১,০৫৫)

দাউদ (আ.)-এর আগে লোকমান হাকিম মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা শেখাতেন। দাউদ (আ.) নবী হওয়ার পর তিনি এই কাজ বন্ধ করে দেন।আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫

লোকমান হাকিম কে ছিলেন

বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মুহাম্মদ বিন জারির আত-তাবারি, ইমামুদ্দিন বিন কাসির ও আবুল কাসেম আস-সুহাইলি বলেন, লোকমান হাকিম ছিলেন আফ্রিকান। (তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা লোকমান, আয়াত ১২-এর ব্যাখ্যা)

সাইদ বিন মুসাইয়িব (রা.) বলেন, ‘তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ, পুরু ওষ্ঠাধরবিশিষ্ট, প্রজ্ঞাবান, তবে নবী নন।’ (আহকামুল কোরআন, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল-আন্দালুসি, ৬/২৮৬)

ইবনে আব্বাস, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ও সাইদ ইবনুল মুসাইয়িবের বরাতে সুফিয়ান সাওরি বলেন, ‘তিনি নবী নন, আল্লাহর সৎ বান্দা ছিলেন।’ অধিকাংশ আলেম মনে করেন, তিনি ছিলেন আল্লাহর ওলি। (কাসাসুল কোরআন, ৮/১৬; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ২/১২৪)

দাউদ (আ.)-এর আগে লোকমান হাকিম মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা শেখাতেন। দাউদ (আ.) নবী হওয়ার পর তিনি এই কাজ বন্ধ করে দেন।

একবার এক বিশাল সমাবেশে লোকমান হাকিম জ্ঞানগর্ভ কথা বলছিলেন। একজন প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি কি সেই লোক, যিনি আমার সঙ্গে অমুক বনে ছাগল চরাতেন?’ লোকমান হাকিম হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিই সে।’আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

ছেলের জন্য উপদেশ

লোকমান হাকিম তাঁর ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন, তা আল্লাহর এত পছন্দ হয় যে কোরআনে স্থান পায়। সুরা লোকমানে বর্ণিত ১০টি উপদেশ হলো—

১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা: ‘হে ছেলে, আল্লাহর সঙ্গে শরিক কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মহা অন্যায়।’ (আয়াত: ১৩)

২. পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো আচরণ: ‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি…।’ (আয়াত: ১৪)

৩. অন্যায় থেকে বিরত থাকা: ‘হে ছেলে, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়…আল্লাহ তা–ও উপস্থিত করবেন।’ (আয়াত: ১৬)

৪. নামাজ আদায়: ‘হে ছেলে, নামাজ কায়েম করো।’ (আয়াত: ১৭)

৫. সৎ কাজের আদেশ, মন্দ কাজের নিষেধ: ‘সৎ কাজে আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ করো।’ (আয়াত: ১৭)

৬. বিপদে ধৈর্য: ‘বিপদ–আপদে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ।’ (আয়াত: ১৭)

৭. মানুষকে অবজ্ঞা না করা: ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না।’ (আয়াত: ১৮)

৮. অহংকার না করা: ‘পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ কোরো না।’ (আয়াত: ১৮)

৯. বিনয়ী হওয়া: ‘পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো।’ (আয়াত: ১৮)

১০. নিচু কণ্ঠে কথা বলা: ‘কণ্ঠ নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (আয়াত: ১৮)

লোকমান হাকিমের এই উপদেশগুলো কেবল তাঁর ছেলের জন্য নয়, সব মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—সত্য আর সংযমই মানুষকে মর্যাদার শিখরে নিয়ে যায়।

লেখক: আলেম

আরও পড়ুনআল্লাহর অলৌকিক উট১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল কম ন হ ক ম আল ল হ উপদ শ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ‘বাকযুদ্ধ’

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ দ্রুত অবসানের আশা ক্রমশ ম্লান হতে যাওয়ায় ‘বাকযুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে ওয়াশিংটন ও মস্কো। খবর আল জাজিরার।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিয়েভের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ‘আগুন নিয়ে খেলছেন’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করার পর, মস্কোর একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ট্রাম্পকে তিরস্কার করেছেন এবং আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধই একমাত্র ‘সত্যিকার খারাপ জিনিস।’ ট্রাম্প এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুতিনের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবার্তায় বলেছিলেন যে, তার হস্তক্ষেপ ছাড়া ‘রাশিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যেই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটতো’। 

আরো পড়ুন:

পুতিন ‘আগুন’ নিয়ে খেলছেন: ট্রাম্প

পুতিন পাগল হয়ে গেছেন: ট্রাম্প

মঙ্গলবার (২৭ মে) ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে বলেন, “ভ্লাদিমির পুতিন যা বুঝতে পারেন না তা হলো, আমি না থাকলে রাশিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যেই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে যেত এবং আমি বলতে চাইছি সত্যিই খারাপ কিছু। তিনি আগুন নিয়ে খেলছেন।” 

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে মেদভেদেভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি কেবল একটি সত্যিকার খারাপ জিনিস সম্পর্কে জানি- তা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আমি আশা করি ট্রাম্প এটি বুঝতে পেরেছেন!”

মেদভেদেভ বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং পুতিনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। মেদভেদেভ ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনি তার কঠোর মন্তব্যের জন্য পরিচিত।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি বারবার সতর্ক করে বলেছেন যে, মস্কো তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পুতিন পারমাণবিক সংঘর্ষের সম্ভাবনাও তুলে ধরেন। সেসময় তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতা সতর্ক করে দেন যে, কেউ যদি ইউক্রেনের সমর্থনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এটি ঘটতে পারে।

এর আগে গত রবিবার (২৫ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতির জোড়ালো আহ্বান ও শান্তিচুক্তির জন্য ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতার মধ্যেও ইউক্রেনে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে পুতিন ‘একেবারে পাগল’ হয়ে গেছেন।

ট্রাম্প তার রবিবারের পোস্টে বলেন, “রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার সবসময়ই খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তার সঙ্গে কিছু ঘটেছে। তিনি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন! তিনি অপ্রয়োজনে অনেক মানুষকে হত্যা করছেন- শুধু সৈনিক নয়, বেসামরিক নাগরিকও। কোনো কারণ ছাড়াই ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হচ্ছে।” 

তবে, রবিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের সমালোচনাকে ‘আবেগজনিত অতিরিক্ত চাপ’ বলে উড়িয়ে দেন।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার কিয়েভ আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছে। রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলের চারটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে।

সুমির গভর্নর ওলেহ হ্রাইহোরভ ফেসবুকে লিখেছেন, নোভেনকে, বাসিভকা, ভেসেলিভকা এবং ঝুরাভকা গ্রাম রাশিয়া দখল করেছে, যদিও বাসিন্দাদের অনেক আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, তারা নিকটবর্তী বিলোভোদি গ্রামটিও দখল করেছে, যা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে আরো অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে বলে আসছিলেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা সুমি অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করছে, যার প্রধান শহরটি রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) এরও কম দূরে অবস্থিত।

ইউক্রেনীয় বাহিনী গত বছর রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশের জন্য সুমি অঞ্চলকে লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করেছিল। গত মাসে কুরস্কে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক বিতাড়িত হওয়ার আগে ইউক্রেনীয় বাহিনী সেখানে বিশাল এলাকা দখল করেছিল।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মস্কো থেকে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘আয়নাবাজি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়নাবাজি
  • ভুয়া নিয়োগে একযুগ ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি
  •  বলয় নাটকের জোড়া মঞ্চায়ন
  • আমি কখনোই এনসিপিকে সমর্থন করব না: সায়ান
  • রসিকের অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে ৭ দিনের আল্টিমেটাম 
  • ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতির ‘গডমাদার’, গাজায় বসতি নিয়ে কী তাঁর ভাবনা
  • রাজবাড়ীতে হাটের আধিপত্য নিয়ে হামলায় আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৪
  • ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ‘বাকযুদ্ধ’