সীমান্তগেট খুলে ৫৪ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিল বিএসএফ
Published: 26th, May 2025 GMT
ভারতের হরিয়ানা ও গুজরাটে বসবাসকারী ৫৪ জনকে সীমান্তের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফ। রবিবার (২৫ মে) বিকাল ৪টার দিকে মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন কুসুমপুর ও বেনীপুর সীমান্ত দিয়ে তাদের পাঠানো হয়। পরে কুসুমপুর ও বেনীপুর বিওপির পৃথক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১৯ জন নারী ও ২৪ জন শিশু।
রবিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ৯টায় মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক ও কোয়ার্টার মাস্টার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আটকরা হলেন, খুলনার দাকোপ থানার কামারখোলা গ্রামের হাকিম সিকদার (৫২), হাকিম শিকদারের ছেলে শাহাজান সিকদার (২১), নড়াইলের কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের আপন মল্লিক (৫১), একই গ্রামের মালেক হাওলাদারের ছেলে মনি হাওলাদার (২৮), লালমনিরহাট সদরের খোরারপুল গ্রামে শাহজাদার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২), জাহাঙ্গীর আলমের ভাই জিয়ারুল (২৩) ও রাসেল (২১), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার জয়মঙ্গল গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (২৬), একই গ্রামের জাকারিয়া হোসাইন (২৮) ও একই উপজেলার তেলীপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলী (৫০)। সকলের নাম-পরিচয় জানানো হয়নি।
আরো পড়ুন:
কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
সুনামগঞ্জে কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার
আটককৃতদের বরাতে বিজিবি জানিয়েছে, ভারতের গুজরাট থেকে নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে ফেরার জন্য সীমান্তে আসে ৪৫ জন। পরে গত শনিবার (২৪ মে) তারা বিএসএফের হাতে আটক হয়। এক পর্যায়ে সীমান্ত পিলার নং ৬২/২-এস এবং ৬২/৩-এস এর মধ্যবর্তী গেট খুলে দিয়ে বিএসএফ আটককৃতদের বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। পরে কুসুমপুর বিওপির হাবিলদার শিশির হালদারের নেতৃত্বে বিজিবি তাদের আটক করে।
একইভাবে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধীন বেনীপুর বিওপি এলাকায় সীমান্ত গেট খুলে দিয়ে ৯ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএফ।
আটককৃতদের বরাতে বিজিবি জানিয়েছে, শনিবার (২৪ মে) ভারতের হরিয়ানা পুলিশ ৯ জনকে আটক করে। পরে বাসযোগে তাদের মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধীন জীবননগর সীমান্তের ওপারে বিএসএফ ক্যাম্পে রেখে যায় হরিয়ানা পুলিশ। রবিবার (২৫ মে) বিকাল ৪টার দিকে সীমান্তের ৬২/২-এস এবং ৬২/৩-এস পিলারের মধ্যবর্তী গেট খুলে বিএসএফ ওই ৯ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। পরে তারা বিজিবির হাতে আটক হয়।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সীমান্তের গেট খুলে দিয়ে ৫৪ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে তারা বিজিবির টহল দলের হাতে আটক হয়। আটক ব্যক্তিরা ভারতের হরিয়ানা ও গুজরাটে বসবাস করতেন। ভারতে আটক হওয়ার পর তাদের সীমান্ত গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বিএসএফ। আটকদের চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে আটক আরো ১৩ জন
একই দিন ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধীন নিমতলা, শ্যামকুড় ও মাটিলা বিওপির পৃথক অভিযানে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এর মধ্যে পাঁচজন নারী ও দুইজন শিশু। আটকরা কুড়িগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। আটকৃতদের মধ্যে ৮ জনকে মহেশপুর থানায় ও বাকি ৫ জনকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আটককৃতদের অধিকাংশই জীবননগর থানার এখতিয়ারাধীন এলাকায় আটক হয়েছেন। তাদের জীবননগর থানার মামলায় আসামি করা হতে পারে। মহেশপুর থানার অধীনে আমরা ৮ জনকে পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’’
ঢাকা/সোহাগ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ জ বননগর থ ন আটক হয় ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৬৮ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
সিলেট ও সুনামগঞ্জের তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৬৮ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বুধবার ভোরে সিলেট-জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে ৫২ জন এবং সুনামগঞ্জের ছাতক সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ১৮, নারী ২২ এবং শিশু ২৮। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদের সবাইকে আটক করে বিজিবি জৈন্তাপুর থানা ও ছাতক থানায় হস্তান্তর করেছে। এ নিয়ে ৪ মে থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৯০১ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
বিজিবি জানায়, আটক অধিকাংশই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া যশোরের অভয়নগর এবং বাগেরহাটেরও কয়েকজন আছেন। সিলেট ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক জানান, আটক সবার প্রাথমিক পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে, তারা বাংলাদেশি।
লালমনিরহাটের তিন উপজেলার ছয় সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৬৫ নারী, পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিএসএফ। গত বুধবার গভীর রাতে তাদের ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিজিবি ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বাধায় ৬৫ জনের কেউ প্রবেশ করতে পারেনি।
আজ দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে এই ৬৫ নারী-পুরুষ-শিশু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে খোলা জায়গায় অবস্থান করছেন। ভোরে এই ৬৫ জনের মধ্যে এক ব্যক্তি তাঁর শিশু সন্তানের জন্য দুধ সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ সীমান্তের লোকালয়ে আসেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের দুধ, কলা ও পানি দিয়ে সহায়তা করেন। ওই ব্যক্তির বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানান, নোম্যান্স ল্যান্ডে আটকে পড়া অন্তত ১৩ জন ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা। ভারত সরকার তাদের জোর করে ধরে এনে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এদিকে নোম্যান্স ল্যান্ডে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে নিতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার দুর্গাপুর বিওপির চওড়াটারী সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আবার বসার আশ্বাস দিয়ে বিএসএফ চলে যায়।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হলে তাদের সানন্দে গ্রহণ করা হবে। কিন্তু আটকে পড়া সবাই আসামের বাসিন্দা। আসামে তাদের সুস্পষ্ট ঠিকানা রয়েছে। তারা ভারতে প্রত্যাবর্তন করতে চায়। বিএসএফ রাতের আঁধারে তাদের পুশইন করছে। এটা অমানবিক।