লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রাজস্ব আদায়
Published: 26th, May 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির ১০ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা প্রায় ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এনবিআরকে পরবর্তী দুই মাসে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত এনবিআরের সাময়িক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থবছরের ১০ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময় রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় ১ লাখ ১১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এ খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯৪ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘সাধারণত মে-জুন মাসে রাজস্ব আদায় সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচির কারণে মে মাসে বড় ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আগামী মাসে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
চলতি মাসে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা বেশ কয়েকদিনের কর্মসূচিতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে রাজস্ব কার্যক্রম। এতে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস এবং বিভিন্ন স্থলবন্দরে শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এতে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, চলতি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
চলতি অর্থবছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এনবিআরের কার্যক্রমে গতি কমে যায়। ডিসেম্বর থেকে কিছুটা গতি পেলেও এপ্রিল-মে মাসে আন্দোলনের ফলে আবারও রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। ফলে গতকাল থেকে রাজস্ব আদায় ও শুল্ক কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক রূপ নিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস