শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।

গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রাণক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুত সংস্কারে বিলম্ব, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:

নির্বাচন বিতর্ক

ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে এখনো নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। গত সপ্তাহে দলটি বলেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী পরিকল্পনা ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘কঠিন’ হবে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।

গত বছরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের উদ্যেোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিয়ে বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সংস্কার নিয়ে অচলাবস্থা

হাসিনার বিদায়ের পর অধ্যাপক ইউনূস যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংস্কারের অগ্রগতি ধীরগতিতে চলছে। তাঁর সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম দফার সংলাপে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।

তবে সাংবিধানিক সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত আরও জটিল কিছু প্রস্তাব নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের রাজপথে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।

এই অস্থিরতা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

আরও পড়ুনইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়ার মধ্যেই বাংলাদেশে বিক্ষোভ২৬ মে ২০২৫হাসিনার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা

চলতি মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলটিকে কার্যত বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি২৩ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন ত ক ঐকমত য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবর্তনশীল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি করতে হবে: আমীর খসরু

আগামীর রাজনীতি আগের মতো হবে না। সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি করতে হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং এটা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে গণঅভ্যুত্থানের যে শক্তিগুলো ছিল, প্রথমত ছাত্র-জনতার সবার সমর্থন, দ্বিতীয়ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং তৃতীয়ত দেশের সামরিক বাহিনী। শেখ হাসিনার পতনের পেছনেও এই তিনটি শক্তি কাজ করেছে।’

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাস, গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা আয়োজন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপরিষদ নামের একটি সংগঠন।

আমির খসরু বলেন, ‘দশ মাস পর এসে জাতীয় ঐক্যে বিভেদ ও বিভাজন পরিলক্ষিত হয়েছে এবং তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সবাই সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিলেও কোথায় ঐকমত্য, তা প্রকাশিত নয়। সবাই মুখিয়ে আছে কোথায় ঐকমত্য তা জানার জন্য। কিন্তু প্রেক্ষাপট অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামীর রাজনীতি আগের মতো হবে না। সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনশীল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি করতে হবে। যেসব দল বা ব্যক্তি এসব বুঝবে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। যারা ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটছে তারা নির্বাচন চায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের গণতান্ত্রিক পথে ফেরাতে সমস্যা কোথায়?’

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সমন্বয়ক শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্তর্জাতিক শুল্কের কারণে ব্যবসায়ে ব্যয় বেড়েছে
  • চার মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে বাম দলগুলো
  • পরিবর্তনশীল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি করতে হবে: আমীর খসরু
  • সাম্প্রতিক ঘটনাবলি জাতীয় ঐকমত্য গঠনে আমাদের কী ইঙ্গিত দেয়
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু জুনের প্রথম সপ্তাহে
  • সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু জুনের প্রথম সপ্তাহে
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা জুনে
  • জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ প্রস্তুত সম্ভব: আলী রীয়াজ
  • সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইন করার তাগিদ