নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু-ইনু-মেননসহ ৯ জন
Published: 28th, May 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ধানমন্ডিতে মো. রিয়াজ (২৩) হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরু মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিকে পলক অক্সফোর্ড ডিকশনারি চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাদের মক্কেলরা শাস্তি যাতে না বাড়ে সে জন্য আগস্টের আগ পর্যন্ত তারা কেউই মিডিয়াতে কথা বলতে চাচ্ছেন না।
রিয়াজ হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, নুরু মিয়া এবং সোহানুর রহমান আজাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার। আদালত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে এবং রিমান্ড শুনানির দিন আজ বুধবার ধার্য করেন। এ দিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রথমে আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এর চার আসামির রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। সোহানুর রহমান আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী জহিরুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অপর আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। তবে তারা শুনানি করেননি। পরে আদালত সোহানুর রহমান আজাদ বাদে অপর তিন আসামির দুই দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। সোহানুর রহমান আজাদের রিমান্ডের বিষয়ে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।
রিয়াজ হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাব এলাকা থেকে জিগাতলায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মো.
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু-ইনু-মেননসহ ৯ জন
এছাড়াও এ দিন যাত্রাবাড়ী থানার বিভিন্ন মামলায় সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার দেখানো অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনু, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ নেত্রী রজনী আক্তার টুসী।
এ ছাড়া সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, আনিসুল হককে একই থানার একটি হত্যা মামলায় ও আরেকটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
গ্রেপ্তার দেখানো আসামিদের মধ্যে আমির হোসেন আমুকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, ইনু ও মেননকে একটি হত্যাচেষ্টা এবং দুটি হত্যা মামলায়, পলককে একটি হত্যাচেষ্টা এবং আরেকটি হত্যা মামলায়, মনিরুল ইসলাম মনুকে দুটি হত্যা মামলায়, কামরুল ইসলাম ও আতিকুল ইসলামকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, জাহাঙ্গীর আলম ও টুসীকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সবগুলো মামলা যাত্রাবাড়ি থানার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
একই কাঠগড়ায় হেভিওয়েট নেতারা
এ দিন আদালতে একই কাঠগড়ায় আগে পরে সিরিয়ালে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের হেভিওয়েট সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা। সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনু, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম এবং আওয়ামী নেত্রী রজনী আকতার টুসি সবাইকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ দিন আদালতে হাজিরের সময় প্রত্যেকের হাতে হ্যান্ডকাফ, বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে আনা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়। আজ আদালতে কোনো কথা বলেনি আসামিরা। আদালত কার্যক্রম শেষে হাজতে নেওয়ার সময়ে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করলেও মুখ খোলেননি কেউ। ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তারের শুরুতে আদালতে কথা বললেও এখন চুপ তারা। আদালতে কথা কম বলছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও।
নাম গোপন রাখার শর্তে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতার এক আইনজীবী সমকালকে বলেন, আগস্টের আগ পর্যন্ত উনারা কেউই মিডিয়াতে কথা বলতে চাচ্ছেন না। মিডিয়াতে কথা বললেই শাস্তি বাড়িয়ে দেয়। এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও নিশ্চুপ আছেন আদালতে। যেটা বলা প্রয়োজন শুধু এতটুকুই বলছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী সমকালকে বলেন, ‘আসামিরা আর কত মিথ্যা কথা বলবে? বক্তব্য যেটাই দেবে সেটাই মিথ্যা। তারা বলে আমরা নির্দোষ, আমরা হত্যা করিনি। আমি জড়িত নই। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। এক মিথ্যা আর কত বলবে? তাদের নির্দেশ ও মদদেই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তারা যে দোষী এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একই অবস্থা আইনজীবীদেরও।
কারাগারে অক্সফোর্ড ডিকশনারি চেয়েছেন পলক
কারাগারে পড়ার জন্য আজও দুইটি বই চেয়েছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। বই দুইটি হলো অক্সফোর্ড ডিকশনারি ও আযান ব্রানের লেখা ইংলিশ বই ডোন্ট ওয়ারি বি গ্রাম্ফি। পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, ডোন্ট ওয়ারি বি গ্রাম্পি বইটি আত্মোন্নয়নমূলক। বইটিতে ১০৮টা ছোট গল্প আছে। এর আগে গত ২৬ মে আদালতে পলক ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি), দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি), দণ্ডবিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উন্নয়নের দর্শন এবং জাতীয় সংসদে জুনাইদ আহ্মেদ পলক- এই পাঁচ বই চান।
আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি বলেন, ‘আগের ৫টা বই ও এই নতুন দুইটা বই আমরা একসঙ্গে পাঠাব। উনার (পলকের) পরিবার যখন কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যাবে সেসময়ে আমরা বইগুলো পরিবারের কাছে পৌঁছে দেব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ ন র রহম ন আজ দ স ব ক মন ত র হত য চ ষ ট র ল ইসল ম আস ম দ র ম দ পলক আগস ট র ন কর ন জ র কর আস ম র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে সাজাভোগ শেষে বেনাপোল দিয়ে ফিরলেন ৩৬ জন
বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে ভারতে যাওয়া ৩৬ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ও শিশুকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগের পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ওই ৩৬ জনকে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা যশোর, রাজশাহী, খুলনা, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, নাটোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কক্সবাজার, ঢাকা, নেত্রকোনা, রংপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর লক্ষীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। আইনি সহায়তা দিতে রাইটস যশোর, জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার, মহিলা আইনজীবি সমিতি এবং জাস্টিস ও শিশু সুরক্ষা সংস্থা এই ৩৬ বাংলাদেশিকে বেনাপোল পোর্ট থানা থেকে গ্রহণ করেছেন।
দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে তারা ভারতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের হাতে তারা আটক হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
জাস্টিজ অ্যান্ড কেয়ারের যশোর শাখার সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আব্দুল মুহিত সমকালকে জানান, ভালো কাজের প্রলোভনে দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে দালালের মাধ্যমে ওই ৩৬ জন ভারতের কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় যায়। সেখানে বিভিন্ন বাসাবাড়ি বা অন্যান্য কাজ করার সময় পুলিশ তাদের আটক করে। এ সময় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠায়। পরে আইনি সহায়তা দিতে ভারতীয় একাধিক মানবাধিকার সংস্থা তাদের আদালত থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগের পর দুদেশের সরকারের সহযোগিতায় বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে ওই ৩৬ জন দেশে ফেরার সুযোগ পায়। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা যদি পাচারকারীদের শনাক্ত করে আইনি সহায়তা চায়, তাহলে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের উপপরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বলেন, ভারত ফেরত ৩৬ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ও শিশুকে আমরা গ্রহণ করেছি। কার্যক্রম শেষে বেনাপোল পোর্ট থানায় তাদের সোপর্দ করা হয়েছে। সেখান থেকে এনজিও সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ও রাইটস যশোর মহিলা আইনজীবি সমিতি ও শিশু সুরক্ষা সংস্থা তাদের গ্রহণ করেছে। পরে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কাজ চলছে।