জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ধানমন্ডিতে মো. রিয়াজ (২৩) হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরু মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এদিকে পলক অক্সফোর্ড ডিকশনারি চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাদের মক্কেলরা শাস্তি যাতে না বাড়ে সে জন্য আগস্টের আগ পর্যন্ত তারা কেউই মিডিয়াতে কথা বলতে চাচ্ছেন না। 

রিয়াজ হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, নুরু মিয়া এবং সোহানুর রহমান আজাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার। আদালত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে এবং রিমান্ড শুনানির দিন আজ বুধবার ধার্য করেন। এ দিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রথমে আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এর চার আসামির রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। সোহানুর রহমান আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী জহিরুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অপর আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। তবে তারা শুনানি করেননি। পরে আদালত সোহানুর রহমান আজাদ বাদে অপর তিন আসামির দুই দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। সোহানুর রহমান আজাদের রিমান্ডের বিষয়ে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।

রিয়াজ হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাব এলাকা থেকে জিগাতলায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মো.

রিয়াজ (২৩)। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বছরের ১৭ আগস্ট বিকেলে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসা. শাফিয়া বেগম ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।  

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু-ইনু-মেননসহ ৯ জন
এছাড়াও এ দিন যাত্রাবাড়ী থানার বিভিন্ন মামলায় সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। 

গ্রেপ্তার দেখানো অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনু, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ নেত্রী রজনী আক্তার টুসী।

এ ছাড়া সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, আনিসুল হককে একই থানার একটি হত্যা মামলায় ও আরেকটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। 

গ্রেপ্তার দেখানো আসামিদের মধ্যে আমির হোসেন আমুকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, ইনু ও মেননকে একটি হত্যাচেষ্টা এবং দুটি হত্যা মামলায়, পলককে একটি হত্যাচেষ্টা এবং আরেকটি হত্যা মামলায়, মনিরুল ইসলাম মনুকে দুটি হত্যা মামলায়, কামরুল ইসলাম ও আতিকুল ইসলামকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায়, জাহাঙ্গীর আলম ও টুসীকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সবগুলো মামলা যাত্রাবাড়ি থানার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

একই কাঠগড়ায় হেভিওয়েট নেতারা
এ দিন আদালতে একই কাঠগড়ায় আগে পরে সিরিয়ালে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের হেভিওয়েট সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা। সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনু, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম এবং আওয়ামী নেত্রী রজনী আকতার টুসি সবাইকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ দিন আদালতে হাজিরের সময় প্রত্যেকের হাতে হ্যান্ডকাফ, বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে আনা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়। আজ আদালতে কোনো কথা বলেনি আসামিরা। আদালত কার্যক্রম শেষে হাজতে নেওয়ার সময়ে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করলেও মুখ খোলেননি কেউ। ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তারের শুরুতে আদালতে কথা বললেও এখন চুপ তারা। আদালতে কথা কম বলছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও। 

নাম গোপন রাখার শর্তে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতার এক আইনজীবী সমকালকে বলেন, আগস্টের আগ পর্যন্ত উনারা কেউই মিডিয়াতে কথা বলতে চাচ্ছেন না। মিডিয়াতে কথা বললেই শাস্তি বাড়িয়ে দেয়। এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও নিশ্চুপ আছেন আদালতে। যেটা বলা প্রয়োজন শুধু এতটুকুই বলছেন। 

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী সমকালকে বলেন, ‘আসামিরা আর কত মিথ্যা কথা বলবে? বক্তব্য যেটাই দেবে সেটাই মিথ্যা। তারা বলে আমরা নির্দোষ, আমরা হত্যা করিনি। আমি জড়িত নই। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। এক মিথ্যা আর কত বলবে? তাদের নির্দেশ ও মদদেই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তারা যে দোষী এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একই অবস্থা আইনজীবীদেরও। 

কারাগারে অক্সফোর্ড ডিকশনারি চেয়েছেন পলক 
কারাগারে পড়ার জন্য আজও দুইটি বই চেয়েছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। বই দুইটি হলো অক্সফোর্ড ডিকশনারি ও আযান ব্রানের লেখা ইংলিশ বই ডোন্ট ওয়ারি বি গ্রাম্ফি। পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

জানা যায়, ডোন্ট ওয়ারি বি গ্রাম্পি বইটি আত্মোন্নয়নমূলক। বইটিতে ১০৮টা ছোট গল্প আছে। এর আগে গত ২৬ মে আদালতে পলক ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি), দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি), দণ্ডবিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উন্নয়নের দর্শন এবং জাতীয় সংসদে জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক- এই পাঁচ বই চান।

আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি বলেন, ‘আগের ৫টা বই ও এই নতুন দুইটা বই আমরা একসঙ্গে পাঠাব। উনার (পলকের) পরিবার যখন কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যাবে সেসময়ে আমরা বইগুলো পরিবারের কাছে পৌঁছে দেব।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ ন র রহম ন আজ দ স ব ক মন ত র হত য চ ষ ট র ল ইসল ম আস ম দ র ম দ পলক আগস ট র ন কর ন জ র কর আস ম র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অপর চার আসামি হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।

দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।

আরও পড়ুন১০ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর০৪ মার্চ ২০২১

এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।

আরও পড়ুনআজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত লেখক মুশতাক২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল
  • ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ
  • ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এখনো কেন গুলি করছেন’
  • ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান
  • জামিন পেলেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াতসহ ৬ জন
  • জামিন পেলেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াতসহ ৬ আসামি