জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার ‘কৃষক লীগ নেতা’ আসামির দাবি, তিনি ‘জামায়াত নেতা’
Published: 28th, May 2025 GMT
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাঠগড়ায় আজ বুধবার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান। তাঁরা দুজনই ধানমন্ডি থানার কিশোর রিয়াজ (১৩) হত্যা মামলার আসামি।
এই মামলায় দুজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান দুজনই জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
পিপির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর বিচারক জানতে চান, আসামি আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের পক্ষে কেউ বক্তব্য দেবেন কি না।
এই দুজনের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা রিমান্ডের বিরোধিতা করে আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি। আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানও কোনো কথা বলেননি।
তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সোহানুর রহমান নামের এক আসামির আইনজীবী আদালতে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সোহানুর রহমানকে রিয়াজ হত্যা মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা করছি। কারণ, সোহানুর রহমান আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতা নন। তিনি আমাদের জামায়াতে ইসলামীর নেতা।’
সোহানুর রহমানের আইনজীবীর এই বক্তব্যের পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনাইদ আহ্মেদ পলকসহ অন্য আসামিরা অবাক হন। সবাই তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সোহানুরকে দেখতে থাকেন।
এ পর্যায়ে সোহানুরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আমার মক্কেল সোহানুর রহমান, কেবল জামায়াতের নেতা নন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। দিনের পর দিন আন্দোলন করেছেন। আর তিনি যে জামায়াতের নেতা, সেটার সপক্ষে কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে হয়রানি করার জন্য ১৩ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’
সোহানুরের আইনজীবী আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সোহানুর রহমানের রিমান্ড শুনানি স্থগিত রাখা হোক। তিনি কোন দলের সমর্থক কিংবা তাঁর সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে আসার পর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হোক।’
একপর্যায়ে সোহানুরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তাঁর মক্কেল। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনের মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। এটি দুঃখজনক।
তখন বিচারক ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপির বক্তব্য জানতে চান। পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘সোহানুরের আইনজীবী যা-ই দাবি করুন না কেন, মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের কৃষক লীগের নেতা।
পিপির বক্তব্য শোনার পর আদালতকক্ষে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চান বিচারক। তখন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শিকদার আদালতকে বলেন, ‘সোহানুর রহমানের বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য বরিশালের স্থানীয় পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদন আসার পর সোহানুর রহমান কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি বরিশালের স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন এমপির ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।’
আদালত সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে সোহানুর রহমানের রিমান্ড আবেদনের বিষয়টি স্থানীয় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে সোহানুর রহমানের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সোহানুর রহমান জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি রাজধানীর বঙ্গবাজার উত্তর ওয়ার্ডের আওতাধীন এনেক্সকো টাওয়ার ইউনিটের সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁকে হয়রানির জন্য এ মামলার আসামি করা হয়েছে।’
সোহানুর জামায়াত, নাকি কৃষক লীগের নেতা
মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয় কিশোর রিয়াজ। এর ১৪ দিন পর সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় তার মা শাফিয়া বেগম গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৩২ নম্বরে সোহানুর রহমানের নাম রয়েছে।
এজাহারে দাবি করা হয়, সোহানুর কৃষক লীগের নেতা।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম লিখিতভাবে পিবিআইকে জানিয়েছেন, সোহানুর বরিশালের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী। তিনি স্থানীয় কৃষক লীগের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। তবে তাঁর কোনো পদ-পদবি নেই।
জানতে চাইলে পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, সোহানুর মামলার আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর কয়েকজন এসে তাঁর কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। পরে আদালতেও দাবি করা হয়েছে যে সোহানুর জামায়াতের নেতা। স্থানীয় পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোহানুর কৃষক লীগের সক্রিয় কর্মী।
পিবিআইয়ের কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, সোহানুর জামায়াতের নেতা বলে দাবি করছেন তাঁর আইনজীবীসহ জামায়াতের লোকজন। দাবিটি খতিয়ে দেখা হবে।
সোহানুর রহমানের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছে, কেবল তিনি (সোহানুর) নন, তাঁর পরিবারও জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আসামিপক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সোহানুর রহমান ঢাকার বঙ্গবাজারের আলম হোসিয়ারি স্টোরের জ্যেষ্ঠ সেলসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে, সোহানুর জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন। বরিশালের সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে তোলা একটা ছবি তাঁর জন্য কাল হয়েছে।
সোহানুর রহমানের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছবি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব ছবিতে তিনি জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছেন, মিছিলে অংশ নিয়েছেন বলে তাঁর পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলার সঙ্গে সোহানুরের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স হ ন র র আইনজ ব স হ ন র রহম ন র প রথম আল ক বর শ ল র স কর মকর ত ক ঠগড় য় র একজন অন য য় ন র জন র জন য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় জুয়েল মিয়া (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরিফ (২০) নামের আরও একজন।
শনিবার (১ নভেম্বর ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফতুল্লার পঞ্চবটি মেথর খোলার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের জুয়েল মিয়া (৪০) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের মো. শাহ আলমের ছেলে।
তিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। নিহত জুয়েল বর্তমানে ফতুল্লার মুসলিম নগরে সালাম আহমেদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে রাস্তা পারাপারের সময় ময়দা ও আটা বোঝাই দুটি ট্রাকের মাঝখানে পড়ে দুজন আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুয়েল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহত আরিফুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক আবু রায়হান নুর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুটি ট্রাক থানায় নিয়ে যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত)আনোয়ার হোসেন জানান,দূর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে দুটি ট্রাক থানায় নিয়ে এসেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।