ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চলছেই: ৮ স্টেশনে দুদকের অভিযান
Published: 28th, May 2025 GMT
আসন্ন ঈদে ট্রেনযাত্রায় টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি ও হয়রানির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিম একযোগে দেশের আটটি রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়াগত কাজে নানা গলদ পাওয়া গেছে। বুধবার কমিশনের এনফোর্স ইউনিটের তত্ত্বাবধানে অভিযানগুলো পরিচালনা করা হয়।
রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সহজ ডট কমসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান টিকিট বিক্রি করছে। এবারের ঈদযাত্রা সামনে রেখে দুদক সহজ ডট কমের প্রধান কার্যালয়েও অভিযান পরিচালনা করেছে। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মো.
কমলাপুরে রেল স্টেশনে অভিযান: রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রীসেবা প্রদানে হয়রানি এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রেক্ষিতে বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রী ও অন্যান্যদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগারের অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। স্টেশনে অবস্থানরত ও যাত্রীদের জন্য খাবার পানি সরবরাহের কলগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ইজারা পদ্ধতিতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে যেখানে অতিরিক্ত মূল্য প্রদান করতে হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রীসেবা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ট্রেনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাটেনন্ডেটের অনুপস্থিতি রয়েছে এবং বরাদ্দ করা টয়লেট টিস্যু ও সাবান দেওয়া হয়নি। রেলওয়ে ডিজেল ওয়ার্কশপে বাজারমূল্যের থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
রাজশাহীতে অনলাইনে বিক্রিত টিকিট কালোবাজারে পাওয়া যাচ্ছে: রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবা প্রদানে হয়রানি এবং টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। টিমের সদস্যরা পরিচয় গোপন করে গ্রাহক সেজে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার, দায়িত্বরত আরএনবি’র সদস্য, আশেপাশের দোকান এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে টিকিট পাওয়া নিয়ে কথা বলে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ঈদযাত্রায় সম্পূর্ণ অনলাইনে বিক্রিত টিকিট কালোবাজারে পাওয়া যাচ্ছে বলে টিম তথ্য-প্রমাণ পায়।
সিলেট: সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীসেবা, টিকিট ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত কার্যক্রমে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীসেবার জন্য নির্ধারিত ১৮ প্রকার সামগ্রীর মধ্যে শুধুমাত্র এসি বগিতে সীমিত পরিসরে সাবান ও টিস্যু সরবরাহ করা হয়। এসব সামগ্রীর নামে মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অনবোর্ড যাত্রীসেবার জন্য আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রগতি এন্টারপ্রাইজ’ এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটেনন্ডেন্টদের নির্ধারিত ১৬ হাজার টাকা বেতন না দিয়ে বরং তাদের কাছ থেকে মাসে কয়েক হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। স্টেশনের পুরাতন প্লাটফর্ম ভেঙে পাওয়া সাড়ে তিন টন রড এক লাখ সতের হাজার টাকায় বিক্রি করে সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
রংপুর: রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান পরিচালনার সময় এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। অভিযানে স্টেশন এলাকায় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতাসহ চারটি ওয়েটিং রুমের মধ্যে তিনটি ওয়েটিং রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওয়েটিং রুম খুলে রাখার ব্যবস্থা, বাথরুমসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অভিযানের সময় এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করলে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে টিকিট বিক্রির সত্যতা পায়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্টেশনে দায়িত্বরত আরএনবির সদস্যরা বুকিং সহকারীদের সঙ্গে যোগসাজস করে টিকিট কালোবাজারির কাজগুলো করে। এছাড়া টিম কর্তৃক ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে যাত্রীদের টিকিট ছাড়াই বগিতে অবস্থান করার সুযোগ দেওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবা প্রদানে হয়রানি এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে ছদ্মবেশে পর্যবেক্ষণ করা হয়। রেলওয়ে বুকিং সহকারী দু’জনের কাছে বিধিবহির্ভূতভাবে টিকিট পাওয়া যায়, যাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া বেসরকারিভাবে পরিচালিত কমিউটার ট্রেনে টিকেটে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় বলে যাত্রীদের কাছ থেকে তথ্য পায় দুদক টিম। স্টেশনে আগত যাত্রীদের জন্য প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার এবং স্টেশন অপরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি টিমের নজরে আসে।
এছাড়া একই অভিযোগে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও জামালপুর সদর রেল স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে অনিয়নের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানে সংগৃহীত নথিপত্রের আলোকে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুদক টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদয ত র অভ য ন র সদস য অবস থ ন এনফ র স ব যবস থ র জন য সহ ন ন হয়র ন র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’