জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে একটি অন্ধকারের শক্তি আবার ক্ষমতায় বসবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন যদি না হয়, দেশে একটি অন্ধকারের শক্তি আবার ক্ষমতায় বসবে। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, যাতে নির্বাচন হয়।’

দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, ফ্যাসিবাদ হয়তো আবার ফিরে আসবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ফ্যাসিবাদ ফিরবে না। তারা যত অন্যায় করেছে, যত কুকীর্তি তাদের মধ্যে আছে, আচরণে–উচ্চারণে প্রতিনিয়ত যেসব প্রমাণ রেখে গেছে, সেই প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নতুন করে রাজনীতির কোনো ন্যারেটিভ তৈরি করাই সম্ভব নয়।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) কোনো দিনও বলতে পারবে না, এই ১৫ বছরে আমরা যা করেছি, ভালো করেছি। কোনো মানুষ গ্রহণ করবে না। যাঁরা এই আন্দোলন করেছেন, ২৪ থেকে একেবারে যত দূর যাই—যুবক ছেলেরা তাঁরা আরও ৫০ বছরের মতো গড়ে বেঁচে থাকবে; ওরা কোনো দিন তাদের ক্ষমা করবে না। আমরা নিজেরা যদি খাল কেটে কুমির ডেকে না আনি, তাহলে তাদের আসার সম্ভাবনা নেই।’

দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে, যাতে ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল মাসে নির্বাচন করা যায়। আচ্ছা, ফেব্রুয়ারি বললেই তো পারতেন, এপ্রিল বললেন কেন? কিছু কিছু কনফিউশন (বিভ্রান্তি) তাঁরা নিজেরাও তৈরি করছেন।’

যেসব সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়ার কথা বলেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি। তিনি বলেন, ‘আগামী দিন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা সংস্কার করবেন। কারও কারও মনে হচ্ছে, এখনই মানেনি, তখন তো মানবেই না। যদি কোনো কারণে টু–থার্ড মেজরিটি (দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থন) পেয়ে যায়, তাহলে তো তাঁদের কাছে কথা বলাই যাবে না। আমি মনে করি, কোনো দলই আগামী নির্বাচনে টু–থার্ড (সমর্থন) পাওয়া উচিত নয়।’

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা জাতীয় ঐক্যের এত বড় বড় স্লোগান তুলছেন, নিজেরাই তো ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেননি। জাতীয় ঐক্য মানে, মতপার্থক্য থাকলেও আমরা মূল প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো.

শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন প্রমুখ।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে নিহত সাংবাদিক বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার প্রধান অতিথির কাছ থেকে এই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহত দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এ টি এম তুরাবের ভাইয়ের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর অভ্যুত্থানে নিহত বাকি সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের হাতেও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সাগর–রুনি হত্যাকাণ্ড, ২০২২ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানসহ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের জন্য শোক প্রস্তাব করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এফইউজ অন ষ ঠ ন ক ষমত য় ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ দিনে হিলি বন্দরে ১ লাখ মেট্রিকটন চাল আমদানি

গত ৩৫ দিনে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দুই হাজার ২৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের চালের বাজারে। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম কমেছে প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬ টাকা।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় হিলি বন্দর ঘুরে জানা যায়, দেশের অস্থির চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ২ শতাংশ শুল্কে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। 

প্রতি টন চাল ৫২০ থেকে ৫৩০ ডলার, কিছু ক্ষেত্রে ৫৪০ ডলার মূল্যে আমদানি হচ্ছে। এসময় সবচেয়ে বেশি আসছে শম্পা কাটারি জাতের চাল।

হিলির খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন পাল বলেন, “ভারত থেকে চাল আসায় বাজারের অস্থিরতা কমছে। প্রতিটি জাতের চাল কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা করে কমেছে। ৫৫ টাকা কেজি দরের মোটা চাল বিক্রি করছি ৫১ থেকে ৫২ টাকা, আবার ৭৪ টাকার শম্পা কাটারি চাল খুচরা বিক্রি করছি ৬৮ কেজি হিসেবে। আশা করছি আগামীতে আরো কমবে।”

আমদানিকারক নুর ইসলাম বলেন, “২ শতাংশ শুল্কে আমরা চাল আনছি। ৫২০-৫৪০ ডলার দরে আমদানি হচ্ছে। এতে বাজারে দামের প্রভাব স্পষ্টভাবে পড়ছে।”

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গত ১২ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৩৫ দিনে ভারত থেকে ২৪২১টি ট্রাকে এক লাখ চার হাজার ৮৫৯ মেট্রিকটন চাল এসেছে। দেশের বাজারে চালের চাহিদা থাকায় দ্রুত খালাস প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হচ্ছে।

ঢাকা/মোসলেম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ