নির্বাচন না হলে অন্ধকারের শক্তি আবার ক্ষমতায় বসবে: মাহমুদুর রহমান মান্না
Published: 10th, July 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে একটি অন্ধকারের শক্তি আবার ক্ষমতায় বসবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন যদি না হয়, দেশে একটি অন্ধকারের শক্তি আবার ক্ষমতায় বসবে। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, যাতে নির্বাচন হয়।’
দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, ফ্যাসিবাদ হয়তো আবার ফিরে আসবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ফ্যাসিবাদ ফিরবে না। তারা যত অন্যায় করেছে, যত কুকীর্তি তাদের মধ্যে আছে, আচরণে–উচ্চারণে প্রতিনিয়ত যেসব প্রমাণ রেখে গেছে, সেই প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নতুন করে রাজনীতির কোনো ন্যারেটিভ তৈরি করাই সম্ভব নয়।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) কোনো দিনও বলতে পারবে না, এই ১৫ বছরে আমরা যা করেছি, ভালো করেছি। কোনো মানুষ গ্রহণ করবে না। যাঁরা এই আন্দোলন করেছেন, ২৪ থেকে একেবারে যত দূর যাই—যুবক ছেলেরা তাঁরা আরও ৫০ বছরের মতো গড়ে বেঁচে থাকবে; ওরা কোনো দিন তাদের ক্ষমা করবে না। আমরা নিজেরা যদি খাল কেটে কুমির ডেকে না আনি, তাহলে তাদের আসার সম্ভাবনা নেই।’
দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে, যাতে ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল মাসে নির্বাচন করা যায়। আচ্ছা, ফেব্রুয়ারি বললেই তো পারতেন, এপ্রিল বললেন কেন? কিছু কিছু কনফিউশন (বিভ্রান্তি) তাঁরা নিজেরাও তৈরি করছেন।’
যেসব সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়ার কথা বলেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি। তিনি বলেন, ‘আগামী দিন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা সংস্কার করবেন। কারও কারও মনে হচ্ছে, এখনই মানেনি, তখন তো মানবেই না। যদি কোনো কারণে টু–থার্ড মেজরিটি (দুই–তৃতীয়াংশ সমর্থন) পেয়ে যায়, তাহলে তো তাঁদের কাছে কথা বলাই যাবে না। আমি মনে করি, কোনো দলই আগামী নির্বাচনে টু–থার্ড (সমর্থন) পাওয়া উচিত নয়।’
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা জাতীয় ঐক্যের এত বড় বড় স্লোগান তুলছেন, নিজেরাই তো ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেননি। জাতীয় ঐক্য মানে, মতপার্থক্য থাকলেও আমরা মূল প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো.
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে নিহত সাংবাদিক বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার প্রধান অতিথির কাছ থেকে এই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহত দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এ টি এম তুরাবের ভাইয়ের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর অভ্যুত্থানে নিহত বাকি সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের হাতেও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সাগর–রুনি হত্যাকাণ্ড, ২০২২ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানসহ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের জন্য শোক প্রস্তাব করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এফইউজ অন ষ ঠ ন ক ষমত য় ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে: মির্জা ফখরুল
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচিত সরকারই একমাত্র দেশ চালাবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।’
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যেকটি বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়। নির্বাচনের জন্য এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে তো। মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় সংসদের মাধ্যমে। এগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, ইলিয়াস আলীসহ ১৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এগুলো বলা প্রয়োজন।
বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, এমন খবর পত্রিকায় এসেছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাঁর দল তিন দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, তাঁদের জন্ম সংস্কারের জন্য। আজ যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে, তাহলে এটি অন্যায়ভাবে বলা হবে।
জুলাই সনদের কথা প্রথম যখন উঠল, তখনই বিএনপি সরকারকে মতামত দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরকারের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে আমরা পুরো মতামত দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সামান্য লেখাপড়া করেছি। আপনারা শব্দের মারপ্যাঁচ করে কোথায়, কোনদিকে নিয়ে যেতে চান, সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা তিনবার সরকার চালিয়েছি।’
আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায় সরকার, বিবেচনা করছে বিএনপি৮ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। এই সময় এখনো পার হয়ে যায়নি।
সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, পুশইনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। জনমত সৃষ্টি করা দরকার। সরকার যেন ভারতের সঙ্গে দর–কষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। এ ছাড়া পানির হিস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। পানি বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুনডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ ২০ ঘণ্টা আগে