জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ‘ঘোষণা’ পান্থকুঞ্জ পার্ক
Published: 30th, May 2025 GMT
আইন অমান্য করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে জনগণ। ‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা: জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকার’ শিরোনামের এই প্রতীকী মামলার গণশুনানি হয় গতকাল শুক্রবার। পান্থকুঞ্জ পার্কের সার্ক ফোয়ারা গেটে এ আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। দুই ঘণ্টার শুনানিতে ‘কৌঁসুলি ও সাক্ষীদের’ বক্তব্য গ্রহণ এবং সর্বশেষে ‘রায়’ ঘোষণা করেন বিচারকরা।
রায়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পান্থকুঞ্জ পার্ক জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং বাদীপক্ষের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিবাদী পক্ষসহ অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পান্থকুঞ্জ পার্কে জনগণের অবাধ প্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়। রায় বাস্তবায়ন এবং বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
করা হয়েছে।
গণশুনানিতে বিশিষ্ট নাগরিক, পরিবেশ আন্দোলনকারী, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা বিচারক ও সাক্ষী হিসেবে অংশ নেন। বিকেলে দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রতীকী আদালতে শোনানো হয় প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট অভিযোগ, পরিবেশ ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ এবং জনস্বার্থে করা নানা যুক্তি। গণশুনানিতে ‘বিচারক’ ছিলেন ড.
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শুনানির সূচি থাকলেও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হননি। আয়োজকরা মাইকে তা জানান দেন। পরে বিকেল ৪টায় শুনানি শুরু হলে অভিযোগপত্র পাঠ করেন গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব ও নাঈম উল হাসান। তারা জানান, এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক প্রকল্প আইন, সংবিধান, পরিবেশ ছাড়পত্র ও জনস্বার্থ– সবকিছুরই সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রকল্পে রয়েছে পিপিপি নীতিমালার অবমাননা, অর্থনৈতিক কারসাজি, দুর্নীতি ও বৈষম্যমূলক চুক্তি। এ ছাড়া পান্থকুঞ্জে গাছ কাটার কারণে পাখি, বাদুড় ও পতঙ্গদের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে বলে জানান তারা।
গণশুনানিতে সাক্ষ্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান, পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ, তেঁতুলতলা আন্দোলনের সৈয়দা রত্না, পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের সিরাজুদ্দিন তুহিন এবং শিল্পী সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির। আদিল বলেন, ‘এই প্রকল্প উন্নয়ন নয়, বরং জনগণ ও প্রকৃতির বিপরীতে একটি ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি। সরকার ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর, নাগরিক স্বার্থ উপেক্ষিত।’ পাভেল বলেন, ‘এই পার্কে প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যার মানে এক হাজার মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। গাছ কাটা ও নির্মাণকাজের ফলে অসংখ্য পাখি ও জীবের আবাসন ধ্বংস হয়েছে। প্রকৃতিতে এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে।’
শুনানি শেষে প্রতীকী আদালতের বিচারকমণ্ডলী রায় দেন। গণশুনানিতে অংশ নেওয়া কবি সাঈদ জুবেরী বলেন, ‘আমরা ছয় মাস ধরে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে, সড়ক বন্ধ না করে। কিন্তু সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তাহলে কি সড়ক অবরোধ করলেই কানে পৌঁছায়? কোনো সরকারই পরিবেশ ও প্রকৃতির বিষয়ে সচেতন নয়। এমনকি এই সরকারের মধ্যেও যারা সচেতন, তারাও প্রকৃতিবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এই গণশুনানি প্রমাণ করে, জনমতের গুরুত্ব সরকার যতটা দেখাতে চায়, বাস্তবে ততটা গুরুত্ব দেয় না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণশ ন ন ত প রকল প প রক ত ও প রক পর ব শ ব চ রক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’
বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’
ঢাকা/রায়হান/রাজীব