শ্রীলঙ্কা-ফিলিপাইনসহ আরো ৭টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন করে আরো ৭টি দেশের পণ্যের ওপর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক আরোপ করবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন।

এর মধ্যে ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, ব্রুনেই ও মলদোভার ওপর ২৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা, ইরাক, আলজেরিয়া ও লিবিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

এই তথ্যগুলো ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল–এ প্রকাশিত চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। সেসব চিঠি মূলত তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের নেতাদের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন। তিনি লেখেন, “আমরা আপনাদের সঙ্গে অগ্রসর হতে চাই, তবে সেটা হবে কেবল আরো ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে।”

ট্রাম্প আরো বলেন, এসব শুল্ক হার এখনো যথেষ্ট নয় যাতে ওই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পুরোপুরি দূর করা যায়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যেসব পণ্য অন্য দেশের হয়ে অন্য মাধ্যমে পাঠিয়ে শুল্ক এড়ানোর চেষ্টা করা হবে, সেগুলোর ওপরও উচ্চ শুল্ক বসানো হবে। পাশাপাশি যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার জবাবে ওই দেশের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে।

এর আগে ১৪টি দেশকে শুল্কের চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এর মধ্যে তালিকায় রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার, লাওস, কাজাকিস্তান, মালয়েশিয়া। এই দেশগুলোর উপরে আমদানি শুল্ক হিসেবে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করা হয়েছে। আর এদের মধ্যে মিয়ানমার ও লাওসে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত হয়েছে ৪০ শতাংশ আর দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছে।

অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তিউনিশিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, বসনিয়া, হার্জিগোভিনিয়া, সার্বিয়া ও থাইল্যান্ড। এক্ষেত্রেও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ২৫ থেকে ৩৬ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়ার দেশগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু। তবে সবার নজর রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান অংশীদারদের উপরে যারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের চিঠি পায়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আরো বাণিজ্য চুক্তি প্রকাশের জন্য চাপে রয়েছে, এখনও পর্যন্ত ওয়াশিংটন কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই বাণিজ্য চুক্তি করেছে। চিনের সঙ্গে একইরকম শুল্ক কমানোর চুক্তি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা ও আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। পরে উত্তেজনা কমাতে শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে হোয়াইট হাউজ। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প।

তবে ফলাফল ট্রাম্পের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে অনেক কম। এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও চীনের সঙ্গে চুক্তি বাণিজ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য দেশগুলোকে বাণিজ্যচুক্তিতে আসার জন্য সময়সীমা নতুন করে বাড়িয়ে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত আলোচনার সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত