যখন ‘আল্লাহ’ নামটি উচ্চারিত হয়, তখন যেন হৃদয়ে এক অদৃশ্য শান্তি নেমে আসে। এই নামে আছে স্রষ্টার মহিমা, সৌন্দর্য আর রহমতের পূর্ণতা। এটি শুধু একটি নাম নয়; বরং সব সৌন্দর্য ও কল্যাণের উৎস, যা আকাশ-পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেয় আর মানুষের হৃদয়কে খোদাভীতিতে ভরিয়ে তোলে। ‘আল্লাহ’ হলো সেই নাম, যা আসমা-উল-হুসনার সব গুণকে একত্র করে, যার ধ্বনিতে সৃষ্টি তাঁর প্রশংসা গায়। কিন্তু কেন এই নাম এত মহান? কীভাবে এটি আমাদের জীবনের সুর হয়ে ওঠে? আসুন, এই নামের গভীরতায় ডুব দিই।

‘আল্লাহ’ সর্বশ্রেষ্ঠ নাম

‘আল্লাহ’ নামটি কোরআন ও সুন্নাহতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে। ড.

ইউসুফ আল-কারাদাভি তার আসমা উল হুসনা বইয়ে লিখেছেন, কোরআনে এই নাম ২ হাজার ৬৯৭ বার উল্লেখিত হয়েছে, যা অন্য কোনো আসমানি কিতাবে এমন ঘন ঘন পাওয়া যায় না। এই নাম মানুষকে তাঁর স্রষ্টার সঙ্গে যুক্ত করে, যারা তাঁকে জানে না, তাদের পরিচয় করায়, যারা ভুলে যায়, তাদের স্মরণ করায়; আর যাদের বিশ্বাস দুর্বল, তাদের হৃদয়কে শক্তি দেয়।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর জন্য রয়েছে সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো, সুতরাং তাঁকে সেগুলো দিয়ে ডাকো।’(সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮০)

ইমাম গাজ্জালি তাঁর আল-মাকসাদ আল-আসনা গ্রন্থে বলেন, ‘আল্লাহ’ সেই নাম, যা ইলাহি গুণগুলোর পূর্ণতা প্রকাশ করে। এটি একমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবহৃত হয়, অন্য কাউকে এই নামে ডাকা যায় না, হোক তা বাস্তবে বা রূপকভাবে। রহমান, রহিম, আলিম বা কাদিরের মতো অন্য নামগুলো কখনো কখনো অন্যের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে; কিন্তু ‘আল্লাহ’ একমাত্র তাঁর নিজস্ব। এটি সব গুণের সমষ্টি, যা তাঁকে সব ন্যূনতা থেকে ঊর্ধ্বে রাখে।

আরও পড়ুনআল্লাহকে ভয় ও ভালোবাসার মধ্যে ভারসাম্য রাখা১৪ মে ২০২৫

আসমা-উল-হুসনার কেন্দ্রবিন্দু

আল্লাহর নামগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহ’ হলো সবচেয়ে ব্যাপক। শাইখ আবদুর রহমান ইবনে সাদি তাঁর তাফসিরে লিখেছেন, এই নাম আল্লাহর সব ইলাহি গুণ ও পূর্ণতার প্রতীক। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর জন্য রয়েছে সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো, সুতরাং তাঁকে সেগুলো দিয়ে ডাকো’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮০)। এই আয়াতে ‘আল্লাহ’ নামটি সব আসমা-উল-হুসনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখিত। আমরা বলি, রহমান বা আজিজ আল্লাহর নাম; কিন্তু কখনো বলি না যে, আল্লাহ রহমানের নাম। এটিই প্রমাণ করে যে ‘আল্লাহ’ সব নামের উৎস।

কোরআনে এই নাম ২ হাজার ৬৯৭ বার উল্লেখিত হয়েছে, যা অন্য কোনো আসমানি কিতাবে এমন ঘন ঘন পাওয়া যায় না।ড. ইউসুফ আল-কারাদাভি, আসমা উল হুসনা

শাইখ সালমান আল-আওদা তাঁর মা’আল্লাহ বইয়ে বলেন, এ নামটি সৃষ্টির হৃদয়ে ভালোবাসা, ভয় আর আশার জন্ম দেয়। এটি তাঁর প্রতি ভক্তি ও ইবাদতের পথ দেখায়। যখন আমরা ‘আল্লাহ’ বলি, তখন আমাদের হৃদয় তাঁর মহিমার সামনে নত হয়, আর আমরা তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় খুঁজি।

তাওহিদের কণ্ঠে আল্লাহ

‘আল্লাহ’ নামটি তাওহিদের মূলমন্ত্র। এটি কালিমা তাইয়িবার প্রাণ—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এই নামে সৃষ্টি তাঁর প্রশংসা গায়, আকাশ-পৃথিবী তাঁর মহিমা কীর্তন করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর এমন কিছুই নেই যা তাঁর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করে না; কিন্তু তোমরা তাদের তাসবিহ বুঝতে পারো না।’ (সুরা ইসরা: ৪৪)। এই নাম মানুষের হৃদয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জাগায়, তাঁর কাছে আশ্রয়ের পথ দেখায়।

প্রত্যেক মানুষ, প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর ওপর নির্ভরশীল। তিনি সৃষ্টির সূচনাকারী, তিনিই তাদের প্রতিপালক। শাইখ সালমান আল-আওদা লিখেছেন, ‘আমাদের হৃদয় তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়; কারণ, তিনি আমাদের সব চাহিদার উৎস। তাঁর নাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কাজে আশ্রয়।’

আল্লাহর নাম প্রত্যেক মুসলমানের জীবনের অংশ। প্রতিদিনের আজানে, নামাজে, দোয়ায় এই নাম আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। ঈদের দিন যখন আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির ধ্বনি তুলি, তখন এই নাম আমাদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। আমাদের গ্রামের মসজিদে, শহরের মেহমানখানায়—সর্বত্র এই নামের প্রতিধ্বনি।

আরও পড়ুনআল্লাহকে যে পাইতে চায়১৩ মার্চ ২০২৫

কলমের শিল্পে আল্লাহর নাম

আমাদের তরুণরা যখন ক্যালিগ্রাফি শিখছেন, তখন তাঁরা এই নামের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে আরবি ক্যালিগ্রাফির ক্লাসগুলোতে ‘আল্লাহ’ নামটি প্রথম শেখানো হয়। কারণ, এটি শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলন। ‘আল্লাহ’ নামটি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, এটি শিল্পেরও প্রাণ। হিলাল কাজান তাঁর ফিমেল ক্যালিগ্রাফার্স: পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট বইয়ে লিখেছেন, মুসলিম ক্যালিগ্রাফাররা এই নামটিকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আসমা উল হুসনার ক্যালিগ্রাফি, বিশেষ করে ‘আল্লাহ’ নামটি মসজিদের গম্বুজ থেকে কোরআনের পাণ্ডুলিপি পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।

আল্লাহর নামের এই শিল্প বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। ঢাকার বায়তুল মোকাররম বা লালবাগের মসজিদের দেয়ালে আরবি ক্যালিগ্রাফি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তাঁর জন্য রয়েছে সবচেয়ে সুন্দর নামগুলো’ (সুরা ত্বহা, আয়াত: ৮)। এই নাম আমাদের দোয়ার শক্তি, আমাদের ইবাদতের প্রাণ। প্রতে৵ক মুসলমানের হৃদয়ে এই নামের ধ্বনি বেঁচে আছে। যখন আমরা এই নাম উচ্চারণ করি, তখন আমরা তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাই, আর জীবনের সব সংকটে শান্তি খুঁজি। তাই আসুন, প্রতিটি শ্বাসে তাঁর নাম স্মরণ করি। কারণ, তিনিই আমাদের সবকিছু।’

 সূত্র: আল–জাজিরা ডটনেট। অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুন আল্লাহকে নিয়ে আলাপ২৮ মে ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ম আম দ র র জ বন র এই ন ম র আল ল হ স ন দর র জন য র রহম ক রআন সবচ য় রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি বেশি

রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা ইমদাদ উল্লাহ। ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গাবতলী পশুর হাট থেকে মাঝারি আকারের একটি গরু কেনেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ইমদাদের সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি হাটের হাসিল আদায় কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এ বছর হাটে গরুর দরদাম নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ইমদাদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রেতা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম চেয়েছিলেন। গরুটি পছন্দ হওয়ায় দেড় লাখ টাকা দাম বলি। পরে আরও ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বনিবনা হয়।’ বাজারে গরুর দাম স্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর হাটগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল থেকে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। গতকাল হাট শুরুর প্রথম দিন বিকেলে গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। প্রথম দিনের তুলনায় হাটে গরু-ছাগল বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন হাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও হাটে কোরবানির পশু আনা বিক্রেতারা। ক্রেতারাও দাম নিয়ে তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনকোরবানির পশু বিক্রি আজ, দুই সিটিতে ১৯ হাট২০ ঘণ্টা আগে

সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী হাটের নির্ধারিত এলাকা ছাড়িয়ে ইট-বালু বিক্রির জায়গাতেও (গদি) ত্রিপলের ছাউনি ও প্যান্ডেল খাটিয়ে গরু রাখা হয়েছে। সারা দেশ থেকে গরু নিয়ে আসা পাইকার, ব্যবসায়ী ও খামারিরা নিজেদের গরু এসব ছাউনির নিচে বেঁধে রেখেছেন। হাটে প্রবেশের মূল ফটকে ক্রেতাদের সমাগম দেখা গেছে। কেউ পছন্দের গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন, কেউ আবার কোরবানির পশু কিনতে হাটে ঢুকছিলেন।

বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় শতাধিক ক্রেতাকে পছন্দের পশু কিনে ওই ফটক দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব গরু ৭২ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে কিনেছেন বলে জানালেন ক্রেতারা।

মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা বাবুল খন্দকার পছন্দের খাসি কিনে হাসিল ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর ভাই সেলিম খন্দকার হাসিল জমা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। সঙ্গে ছিল বাদামি রঙের মাঝারি আকারের চেয়ে কিছুটা বড় আকারের একটি খাসি। দাম জানালেন ২৩ হাজার টাকা।

বাবুল খন্দকার বলেন, ‘প্রথমে গাবতলী হাটে এসেছি। এখানে এসেই এই খাসি আর এর দাম পছন্দ হয়ে গেছে। তাই দেরি না করে কিনে ফেলেছি।’ এরই মধ্যে হাসিল পরিশোধ করে পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবুলের ভাই সেলিম। ভাইকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘সুযোগ থাকলে আজকেই গরুটাও কিনে ফেললে ভালো হতো।’

সিরাজগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী আলতাফ মিয়া জানালেন, এবার তিনি মোট ২৪টি গরু হাটে এনেছেন। তিনি রোববার রাতে হাটে পৌঁছান।

গতকাল বিকেলে তাঁর তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এর একটি ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। অন্য দুটির একটি ১ লাখ ৩০ হাজার, অপরটি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ