ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব দেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেনি, সেসব দেশের ওপর তিনি বাড়তি হারে শুল্ক (ট্যাক্স) বসাবেন। এই শুল্ক ৮ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

এই ঘোষণা শুনে অনেক দেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে; কারণ এতে তাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই তারা ভাবছে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান গোষ্ঠীর দশটি দেশ খুব দ্রুত ও সক্রিয়ভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।

এই দেশগুলোর নেতারা খুব ভালোভাবে বুঝেছেন, গত কয়েক দশকে অর্থনীতিতে তাঁদের দেশ অনেক এগিয়ে গেছে।

একসময় জাপানের অর্থনীতি আসিয়ানের চেয়ে অনেক বড় ছিল, এখন সেটি প্রায় সমান–সমান। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে আসিয়ানের সম্মিলিত অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাংলাদেশের সামনে পথ কী১৬ মে ২০২৫

ইতিমধ্যেই ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আসিয়ান বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চেয়েও বেশি অবদান রেখেছে।

আসিয়ানের এই অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মুক্ত বাণিজ্য। ২০০৩ সালে আসিয়ানের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাদের ৬১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ২.

৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

তবে আসল সাফল্যের রহস্য ছিল শক্তিশালী নেতৃত্ব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো—দুই ভিন্ন ধরনের নেতা হলেও তাঁরা একসঙ্গে কাজ করে আসিয়ানকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন।

আজকের দিনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম (মালয়েশিয়া), প্রাবোও সুবিয়ান্তো (ইন্দোনেশিয়া), তো লাম (ভিয়েতনাম) এবং লরেন্স ওং (সিঙ্গাপুর)। তাঁদের কেউ কেউ দীর্ঘ সময় রাজনীতির বাইরে ছিলেন; কিন্তু এখন তাঁরা একসঙ্গে কাজ করছেন।

আসিয়ানের নেতারা নিজেদের দেশ এবং গোটা অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতি রাখার জন্য সব সময় মিলেমিশে, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন। ইন্দোনেশীয় ভাষায় এই পরামর্শ ও ঐকমত্যের নীতিকে বলা হয় ‘মুস্যায়াওয়ারাহ’ ও ‘মুফাকাত’।

আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান হতে পারে০৪ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে রাজনীতি নিয়ে হিংসা, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়, কিন্তু আসিয়ানে এমনটা খুব একটা হয় না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য সব সময়ই যুদ্ধ ও অশান্তিতে থাকে। এমনকি ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মতো বড় দেশগুলোর নেতারাও একে অপরের সঙ্গে কথাই বলেন না।

কিন্তু আসিয়ান ৪৮ বছর ধরে নিয়মিত বৈঠক করছে। তাদের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১,০০০টি মিটিং হয়। এই নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমেই তারা গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে শিখেছে।

কেউ কেউ বলে আসিয়ান খুব ধীরে চলে, কিন্তু এই ধীর-স্থির ও মিলে-মিশে চলার নীতিই আসিয়ানকে এতগুলো বছর, এমনকি অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও একসঙ্গে টিকিয়ে রেখেছে।

এখন ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জবাবে আসিয়ান একসঙ্গে কাজ করছে। যদিও ট্রাম্প প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা করে শুল্ক ধরেছেন। যেমন কম্বোডিয়ার জন্য ৪৯ শতাংশ আর সিঙ্গাপুরের জন্য ১০ শতাংশ। তবে আসিয়ান দেশগুলো বুঝেছে, এক সঙ্গে থাকলেই শক্তি বাড়ে।

তাই কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে তারা ট্রাম্প ও আসিয়ানের ১০ দেশের নেতাদের নিয়ে একটি সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছে।

এর আগেও আসিয়ান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও জোরালো ও ভবিষ্যৎমুখী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চায়। তারা এমন একটা সহযোগিতা চায় যাতে উভয় পক্ষ লাভবান হবে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও উচ্চ-মূল্যের খাতগুলোতে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কে সি’র খেলা: পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কি ক্ষয়িষ্ণু?১২ এপ্রিল ২০২৫

কারণ আসিয়ানের সেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্র বড় মুনাফা করে এবং সেখানে আমেরিকার বিনিয়োগও অনেক। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

তবে আসিয়ান এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে না। তারা চীন ও গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সঙ্গে নতুন এক সম্মেলন করেছে।

এই ধরনের সম্মেলন এবারই প্রথম। এতে বোঝা যাচ্ছে, শুধু আমেরিকার দিকে নয়, আসিয়ান তার ভবিষ্যৎ গড়তে নানা দিকেই তাকাচ্ছে।

বিশ্ব যখন ট্রাম্পের একপক্ষীয় শুল্ক নীতির বিরোধিতা করছে, আসিয়ান তখন মুক্ত বাণিজ্যেই আস্থা রাখছে।

এখন তারা নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে চায় এবং গোষ্ঠীর ভেতরে পণ্য চলাচল সহজ করতে চায়। তাদের নিজেদের মধ্যে বর্তমানে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত চলাচল জারি আছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হয়তো স্বল্পমেয়াদে আসিয়ানের অর্থনীতিকে কিছুটা ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু এই সংকটই আসিয়ানকে আরও এক জোট হতে, নিজেদের মধ্যে ও অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে আসিয়ান আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে।

এ ছাড়া আসিয়ান দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতেও চায়। যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের শতাংশ হিসেবে একটু কমেছে (২০০৩ সালে ছিল ২৫ %, আর ২০২৩ সালে তা হয়েছে ২১.৫ %), তবে তার কারণ বাইরের দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অনেক বেড়েছে।

এখন তারা নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে চায় এবং গোষ্ঠীর ভেতরে পণ্য চলাচল সহজ করতে চায়। তাদের নিজেদের মধ্যে বর্তমানে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত চলাচল জারি আছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হয়তো স্বল্পমেয়াদে আসিয়ানের অর্থনীতিকে কিছুটা ক্ষতি করতে পারে।

কিন্তু এই সংকটই আসিয়ানকে আরও এক জোট হতে, নিজেদের মধ্যে ও অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে আসিয়ান আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে।

সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

কিশোর মাহবুবানি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর-এর এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর অনারারি ফেলো।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইন দ ন শ য় আস য় ন র একসঙ গ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন

সিরিজের নির্ধারক ম্যাচে টানা ১৫ বার টস ভাগ্য মুখ ফেরাল না ভারতের দিকে। ফলে লন্ডনের ওভালে শুরু থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই নামতে হলো শুভমান গিলদের। আকাশে ছিল মেঘ, উইকেট ছিল সবুজ। এমন সহায়ক কন্ডিশনে টস জিতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওলি পোপ। যিনি এই ম্যাচে ইনজুরিতে থাকা বেন স্টোকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

মজার ছলে শুভমান গিল আগেই বলেছিলেন, এই সিরিজে তার সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে টস! আর তা আবারও সত্যি হলো। সিরিজজুড়ে ‘হেড’ ডাকার পরও টস জয় থেকে বঞ্চিত গিল এবারও হেরে গেলেন।

এই ম্যাচে অবশ্য ভারত একাদশে চারটি পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল প্রত্যাশিত। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে বিশ্রামে আছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, চোটে ছিটকে গেছেন ঋষভ পন্ত এবং তরুণ আনশুল কাম্বোজকে জায়গা করে দিতে হয়েছে অভিজ্ঞদের। এদের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, ধ্রুব জুরেল এবং ফিট হয়ে ফেরা আকাশ দীপ। তবে চতুর্থ পরিবর্তনটি বেশ কৌশলগত। অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুরের বদলে দলে এসেছেন ব্যাটার করুণ নায়ার। উল্লেখ্য, শার্দুল আগের দুটি টেস্টে মাত্র ২৭ ওভার বোলিং করেছেন।

আরো পড়ুন:

সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ

শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ

অন্যদিকে, ইংল্যান্ড আগেই তাদের একাদশ ঘোষণা করে রেখেছিল। দলে জায়গা হয়নি স্টোকস, জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনের। তাদের জায়গায় খেলছেন জ্যাকব বেথেল, জশ টাঙ, জেমি ওভারটন ও গাস অ্যাটকিনসন।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওভালে ২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ (তার মধ্যে ৪টি টেস্ট) অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক ম্যাচেই টসজয়ী অধিনায়ক প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছেন। এবং তার মূল কারণ, এই উইকেট থেকে পেসাররা বেশ সাহায্য পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এই মাঠে সিমাররা নিয়েছেন ৬১৭টি উইকেট, বিপরীতে স্পিনাররা পেয়েছেন মাত্র ৭৯টি।

এই টেস্টে শুরুতেই পিছিয়ে থাকলেও ভারতের চোখ থাকবে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার দিকে। আর ইংল্যান্ড চাইবে কন্ডিশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ভারতকে চাপে ফেলে দিতে। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড এই ম্যাচে কোনোরকমে ড্র করতে পারলেই সিরিজ জিতে যাবে। অন্যদিকে এই ম্যাচ জিতলে সিরিজ হার ঠেকাতে পারবে ভারত।

এ রিপোর্ট লেখার সময় ভারত ২৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান সংগ্রহ করেছে এবং বৃষ্টির কারণে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছে। ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১০ রানের মাথায় আউট হন জয়সওয়াল। অ্যাটকিনসনের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি ব্যক্তিগত ২ রানে। আর ৩৮ রানের মাথায় ক্রিস ওকসের বলে বোল্ড হয়ে যান লোকেশ রাহুল। ৪টি চারে ১৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

ইংল্যান্ড একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।

ভারত একাদশ:
যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, সাই সুদর্শন, শুভমান গিল (অধিনায়ক), করুণ নায়ার, রবীন্দ্র জাদেজা, ধ্রুব জুরেল (উইকেটকিপার), ওয়াশিংটন সুন্দর, আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও মোহাম্মদ সিরাজ।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো