১৫-২০ টাকায় খাসি, ৮০-১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি হতো
Published: 7th, June 2025 GMT
শৈশবের ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। পুরো গ্রামের মানুষ মিলে আনন্দ করতাম। ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি করা হতো ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে। সে সময়ের ৮০ থেকে ১০০ টাকার গরু বর্তমানে দেড় থেকে দুই লাখে টাকায় বিক্রি হয়। গরু কোরবানি শেষে বিকেলে বাউল-ভাটিয়ালিগানের আয়োজন হতো।
জীবনের ৮০ বছর পার করে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের ঈদগুলোর কথা মনে পড়ে। এখন থাকি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার টিঅ্যান্ডটি রোডের বাড়িতে। আছেন স্ত্রী, সন্তান ও নাতিরা। বাবা আবদুল লতিফ ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর পাস করে ১৯৭৪ সালে ঈশ্বরগঞ্জ কলেজে প্রভাষক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিই। ২০০৮ সালে অবসরে গেছি।
ষাটের দশকের কথা। তখন আমার স্কুলশিক্ষক বাবা ৩২ টাকা ৫০ পয়সা বেতন পেতেন। কোরবানির ঈদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় খাসি কেনা হতো। সচ্ছল ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কোরবানি দেওয়া হতো। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ঈদগাহে নামাজে যেতাম। বড়দের সালাম করলে সিকি, আধুলি সালামি পেতাম। আমাদের ছেলেবেলায় মা-চাচিরা ঈদের জন্য হাতে সেমাই বানাতেন দুই দিন আগে থেকেই। কিন্তু এখন বাজার থেকে কিনে আনা সেমাই ঝটপট রান্না হয়। হাতে তৈরি সেমাইয়ের মধ্যে যে আবেগ জড়িয়ে থাকত, তা এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারবে না। সকাল সকাল কোরবানি হতো। মাংস কাটার পর প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস দিয়ে আসতাম। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবন থাকলেও সচ্ছল পরিবারগুলো কোরবানি দিত।
আরও পড়ুনতখন কোরবানি ছিল একান্ত ঘরোয়া, আজ কোথাও কোথাও তা প্রতিযোগিতার৩ ঘণ্টা আগেআমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল ভারতের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামে। ঈদের দিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতাম। এলাকায় বাউল, ভাটিয়ালি ও ভাইওয়াগানের আসর বসত। তখন টিভি ও এখনকার মতো মুঠোফোন ছিল না। বিনোদন ছিল লোকজ গান। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমা চলত ময়মনসিংহ শহরের অলকা সিনেমা হলে। যখন হাইস্কুলে পড়ি, ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসতাম। তখন খুবই আনন্দ হতো।
আমাদের শৈশব-কৈশোরে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনগুলো খুব মজবুত ছিল। আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। কিন্তু এখন ঈদ ফিকে মনে হয়। সব আছে, কিন্তু আনন্দ নেই। আগে লোকদেখানো ছিল না, এখন মনে হয় সব লোকদেখানো।
যে আমি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কয়েকজন মিলে গরু কেনা দেখেছি, সে আমার পরিবার এবার ৯০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। সামাজিক বন্ধন যদি বাড়ত, উৎসবে মানুষের আনন্দ আরও বাড়ত।
(অনুলিখন: মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ)
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১০০ ট ক য় ৮০ থ ক পর ব র ক রব ন আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে এ অবস্থা দেখা যায়। ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কেও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। মহাসড়ক দুটিতে যানজটে আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঈদে ঘরমুখী মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। রাতে বেশ কয়েকটি স্থানে যানবাহন বিকল হয়ে মহাসড়কের দুই দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ, যাত্রী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটিতে যানবাহনের চাপ থাকায় থেমে থেমে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দীর্ঘ ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই হেঁটে এগিয়ে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের গাড়ি ধরতে চাইছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে চলাচল করছে যানবাহন।
পরিবহন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বৃহস্পতিবার শিল্পাঞ্চলগুলোর পোশাক কারখানায় ছুটি হওয়ায় লাখো মানুষ একই সঙ্গে নিজেদের গন্তব্যে যাত্রা করেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এতে রাতভর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট তৈরি হয়। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের দীর্ঘ সময় যানবাহনে বসে থাকতে হচ্ছে। গরম ও যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন শিশু, নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠরা।
শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ডবাজার থেকে সালনা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম জানান, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি যানবাহনের গতি সচল রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্যাসেঞ্জার তোলায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। যানবাহনের চাপ ও রাতে কয়েকটি স্থানে পরিবহন বিকল হওয়ায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে।