জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে খুলনায় আগেভাগেই  মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। খুলনার ছয় আসনের দুটিতে বিএনপির একজন করে প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও অন্য চারটিতে একাধিক নেতা তৎপরতা চালাচ্ছেন। 

অন্যদিকে চার মাস আগেই ছয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডও চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান। আগামী নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পেতে এলাকায় তৎপর তিনি। পাশাপাশি এ আসনে দলীয় ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল। এলাকার লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি তিনি দলীয় নেতাকর্মীকে পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন।

খুলনা-২ (খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে এখন পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। এরই মধ্যে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও নগর বিএনপির সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন এই বিএনপি নেতা। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগার লবী অন্য আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। শফিকুল আলম তুহিন বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব।  

খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনে দলীয় ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, মাঠ পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করছি। আমরা জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। 

খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন– কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ মল্লিক ও কেন্দ্রীয় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ। এর মধ্যে হেলাল ২০১৮ সালে ও তাজ ২০০৮ সালে এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। 

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া, ফুলতলা) আসনে এতদিন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ, আমেরিকা প্রবাসী টিকু রহমান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শফি মোহাম্মদ খান। তবে গত ৩০ মে থেকে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আসগার লবী। তিনি দাবি করেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে বলেছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি।

খুলনা-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান পাঁচজন। তারা হলেন– জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

মোমরেজুল ইসলাম, জিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও দৈনিক ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার আলদীন এবং পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. আব্দুল মজিদ। 

জামায়াতে ইসলামী

জামায়াতে ইসলামী গত ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার তিনটি আসনের প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এর কয়েকদিন আগে অন্য তিনটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
তারা হলেন খুলনা-১ আসনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা-৩ আসনে মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা-৪ আসনে জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে খুলনা-১, ২, ৩ ও ৪ আসনের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নতুন মুখ। খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতলেও ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে হারেন। অন্যদিকে খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ হেরেছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে।

খুলনা-৫ ও ৬ আসনে জামায়াতের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় আমিরের উপস্থিতিতে এ দুটি নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেছে দলটি। তবে অন্য চার আসনের প্রার্থীরাও বসে নেই। তারা নির্বাচনী এলাকায় দলকে আরও সংগঠিত ও বিস্তৃত করার পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামায়াত প্রার্থীরা গণসংযোগ, বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। আমরা জনগণের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

অন্যান্য দল

জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেনি। নতুন দল এনসিপি একাধিক আসনে প্রার্থী দেবে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে এখনও তাদের নির্বাচনী প্রচারণা দৃশ্যমান হয়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আসন র প র র থ ব এনপ র স ২০১৮ স ল ল ইসল ম ৬ আসন এ আসন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
  • ভক্তের কাছ থেকে পাওয়া ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি কী করেছেন সঞ্জয় দত্ত