বর্ষা মৌসুম আসার আগেই গ্রামে গ্রামে চোখে পড়ত নৌকা তৈরি কিংবা মেরামতের কাজ। সেই ভেজা বা শুকনো কাঠ, তারপিন আর আলকাতরার গন্ধে ভরা ঘাটপাড় এখন আর নেই। এর মাঝেও অনেকে ধরে রেখেছেন নৌকা তৈরির এই পেশা।
বিয়ানীবাজারের নৌকার অনেক কারিগর পেশা বদলে কেউ কাঠমিস্ত্রী হয়েছেন, কেউ চালাচ্ছেন অটোরিকশা। অনেকে ছোটখাটো ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এর মাঝে ব্যতিক্রম দুবাগ ইউনিয়নের মইয়াখালী গ্রামের আলতাফ হোসেন আতা। চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পারিবারিক এই পেশা ধরে রেখেছেন। এ থেকে বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয় তার।
আলতাফ হোসেন আতা জানান, দাদার কাছ থেকে নৌকা তৈরির কলাকৌশল আয়ত্ত করেন তাঁর বাবা প্রয়াত কুতুব উদ্দিন। তিনি ১২ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে দীক্ষা নেন। আয় রোজগার ভালো হওয়ায় ছেলেকেও শিখিয়েছেন নৌকা তৈরির কারিগরি।
আলতাফ হোসেন আতার ছেলে পারভেজ আহমদ এখন বাবাকে নৌকা তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। আতা বলেন, এক যুগ আগেও নৌকার চাহিদা খুব কম ছিল। বহু এলাকায় কৃষিকাজে মানুষের অনীহা, গবাদিপশু লালন-পালন ছেড়ে দেওয়ায় নৌকা তৈরি হতো হাতেগোনা। এ সময়ে সংসার চালাতে হতো খুব কষ্টে। বহুবার এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেও পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা ভেবে সম্ভব হয়নি। আতা জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে থেকে একটু করে দিন ফিরতে শুরু করে নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে। মানুষজন চাষাবাদ ও গবাদিপশু লালন-পালনে মনোযোগী হওয়ায় নৌকার চাহিদা বাড়তে থাকে। এখন বছরে ৪০টির মতো নতুন নৌকা তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৫টি পুরাতন নৌকা মেরামত করতে হয়। বলতে গেলে সারা বছরই থাকে ব্যস্ততা।
আলতাফ হোসেন আতা ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরিতে প্রতি হাতের মজুরি নেন এক হাজার ১০০ টাকা। বিশ হাতের ওপরে হলে মজুরি আরও বেশি। অর্ডার এলে কাঠসহ মজুরি মিলিয়ে একেকটি ১৬ হাত লম্বা নৌকা তৈরি করে দেন ৩৫ হাজার টাকায়।
নৌকা তৈরির এই কারিগর জানান, এখন জারুল গাছ নেই। তাই জারুল গাছের নৌকার চাহিদা থাকলেও সেটি পূরণ করা যায় না। গাছটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেজন্য জারুল গাছের বিকল্প হিসেবে কেউ কেউ রেইনট্রি ব্যবহার করেন।
মইয়াখালী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি রস্তুম আলী গ্রামের পথ দেখিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে এ রাস্তা তৈরি হয়েছে। এর আগে গ্রামের বাজারে বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যাওয়া যেতো না। এখন বাড়িতে অটোরিকশা আসে। নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। আতা দীর্ঘদিন ধরে নৌকা তৈরির কাজ না পেয়ে খুব কষ্টে ছিল। এখন তার ভাগ্য পাল্টে গেছে।
একই গ্রামের বদরুল ইসলাম বলেন, বড়লেখার হাকালুকি হাওর এলাকা থেকে নৌকা তৈরি করতে আতার কাছে মানুষ আসে। শুধু বিয়ানীবাজার নয়, তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বড়লেখা, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়ও।
আলতাফ হোসেন আতা বলেন, বাবা-দাদার পেশা ধরে রাখতে পারায় টাকাও রোজগার করছেন, পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বছরে একবার হলেও এক মাসের জন্য বড়লেখার হাকালুকি এলাকায় যেতে হয় নৌকা মেরামতের জন্য। তাঁর ইচ্ছা পেশাটি যেন তার ছেলে ধরে রাখেন।
এ সময় পাশে থাকা পারভেজ আহমদ বলেন, এখন পাঁচ গ্রাম ঘুরে নৌকার কারিগর পাওয়া যায় না। বাবার কাজের চাপ বেশি। তাই তিনি তাঁকে সহযোগিতা করতে করতে তাঁর মতো করে নৌকা তৈরি শিখছেন।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।
শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।