ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত হওয়া শীর্ষ ইরানি কর্মকর্তাদের অন্যতম।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া ইসরায়েলের এ হামলায় আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।

সালামি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১৯ সালে মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইআরজিসির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন সালামি। দীর্ঘ সামরিক জীবনে তিনি ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

সালামি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১৯ সালে মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইআরজিসির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন সালামি। দীর্ঘ সামরিক জীবনে তিনি ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সালামির সামরিক অভিজ্ঞতা, যা ছিল ওই সময়ের অনেক ইরানি সামরিক নেতার ক্ষেত্রেই সত্য। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে বহু সংঘাতে লড়েছেন সালামি, নেতৃত্বও দিয়েছেন নানা পর্যায়ে। এ যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাই তাঁকে আইআরজিসির মধ্যে একটি ‘যোদ্ধা নেতৃত্বের’ বৈধতা এনে দেয়, যা পরে তাঁর পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

২০০৫ সালে সালামি আইআরজিসির অ্যারোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন। এ পদে থাকাকালীন তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁকে আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ পদে উন্নীত করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরানি সামরিক কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার মতো সালামিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার জন্য ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ফেলে। এর এক বছর আগেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একই কারণে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

তবু এটা বলা কঠিন, ইসরায়েলের এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তাকাঠামো এবং পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কাঠামো এখনো কার্যকর ও সংগঠিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। —রেজা এইচ আকবরি, ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিংয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক

২০২২ সালে ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে অভিযান পরিচালনার জন্য কানাডাও সালামির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আইআরজিসির প্রধান হিসেবে সালামির নেতৃত্বে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষবলয়কে শক্তিশালী করে তোলে। এ বলয়ে ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও ইরাকের কয়েকটি শিয়া গোষ্ঠী।

এক বক্তব্যে সালামি বলেছিলেন, ‘আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে শুধু কোনো একটি স্থানে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করব। আমাদের যুদ্ধ স্থানীয় নয়, আমাদের পরিকল্পনা বিশ্বশক্তিগুলোকেও পরাজিত করার।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত১৩ জুন ২০২৫মৃত্যু ও প্রতিক্রিয়া

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএর খবরে বলা হয়, ‘বেদনা ও শোকাহত হৃদয়ে আমরা আইআরজিসির প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামির অন্যায় হত্যাকাণ্ড ও শাহাদাতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করছি।’

আইআরজিসির প্রধান হিসেবে সালামির নেতৃত্বে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষবলয়কে শক্তিশালী করে তোলে। এ বলয়ে ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও ইরাকের কয়েকটি শিয়া গোষ্ঠী।

সালামি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম। তাঁর মৃত্যুর পর ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা চালায়; যেসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সালামির বড় অবদান ছিল।

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ ২০ সামরিক কমান্ডার নিহত১৩ ঘণ্টা আগে

সালামির মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আহমদ বাহিদির নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিংয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক রেজা এইচ আকবরি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি সামরিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, বহু ভাষায় পারদর্শী, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ও সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলে নেতৃত্ব দেন—তাঁদের হত্যা করা মানে জ্ঞানগত এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করা।’

তবে রেজা সতর্ক করে বলেন, ‘তবু এটা বলা কঠিন, ইসরায়েলের এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তাকাঠামো এবং পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কাঠামো এখনো কার্যকর ও সংগঠিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে১৫ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইরানে নতুন করে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানে বিস্ফোরণ১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ইন স ল ম আইআরজ স র পর য য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ