ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানের বিপ্লবী গার্ডপ্রধান হোসেইন সালামি কে ছিলেন
Published: 14th, June 2025 GMT
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত হওয়া শীর্ষ ইরানি কর্মকর্তাদের অন্যতম।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া ইসরায়েলের এ হামলায় আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।
সালামি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১৯ সালে মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইআরজিসির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন সালামি। দীর্ঘ সামরিক জীবনে তিনি ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
সালামি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১৯ সালে মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আইআরজিসির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন সালামি। দীর্ঘ সামরিক জীবনে তিনি ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সালামির সামরিক অভিজ্ঞতা, যা ছিল ওই সময়ের অনেক ইরানি সামরিক নেতার ক্ষেত্রেই সত্য। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে বহু সংঘাতে লড়েছেন সালামি, নেতৃত্বও দিয়েছেন নানা পর্যায়ে। এ যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাই তাঁকে আইআরজিসির মধ্যে একটি ‘যোদ্ধা নেতৃত্বের’ বৈধতা এনে দেয়, যা পরে তাঁর পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
২০০৫ সালে সালামি আইআরজিসির অ্যারোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন। এ পদে থাকাকালীন তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁকে আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ পদে উন্নীত করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াইরানি সামরিক কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার মতো সালামিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার জন্য ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ফেলে। এর এক বছর আগেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একই কারণে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
তবু এটা বলা কঠিন, ইসরায়েলের এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তাকাঠামো এবং পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কাঠামো এখনো কার্যকর ও সংগঠিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। —রেজা এইচ আকবরি, ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিংয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক২০২২ সালে ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে অভিযান পরিচালনার জন্য কানাডাও সালামির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
আইআরজিসির প্রধান হিসেবে সালামির নেতৃত্বে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষবলয়কে শক্তিশালী করে তোলে। এ বলয়ে ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও ইরাকের কয়েকটি শিয়া গোষ্ঠী।
এক বক্তব্যে সালামি বলেছিলেন, ‘আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে শুধু কোনো একটি স্থানে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করব। আমাদের যুদ্ধ স্থানীয় নয়, আমাদের পরিকল্পনা বিশ্বশক্তিগুলোকেও পরাজিত করার।’
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত১৩ জুন ২০২৫মৃত্যু ও প্রতিক্রিয়াইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএর খবরে বলা হয়, ‘বেদনা ও শোকাহত হৃদয়ে আমরা আইআরজিসির প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামির অন্যায় হত্যাকাণ্ড ও শাহাদাতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করছি।’
আইআরজিসির প্রধান হিসেবে সালামির নেতৃত্বে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষবলয়কে শক্তিশালী করে তোলে। এ বলয়ে ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও ইরাকের কয়েকটি শিয়া গোষ্ঠী।সালামি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম। তাঁর মৃত্যুর পর ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা চালায়; যেসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সালামির বড় অবদান ছিল।
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ ২০ সামরিক কমান্ডার নিহত১৩ ঘণ্টা আগেসালামির মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আহমদ বাহিদির নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিংয়ের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক রেজা এইচ আকবরি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি সামরিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, বহু ভাষায় পারদর্শী, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ও সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলে নেতৃত্ব দেন—তাঁদের হত্যা করা মানে জ্ঞানগত এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করা।’
তবে রেজা সতর্ক করে বলেন, ‘তবু এটা বলা কঠিন, ইসরায়েলের এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরানের সামরিক ও নিরাপত্তাকাঠামো এবং পারমাণবিক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কাঠামো এখনো কার্যকর ও সংগঠিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে১৫ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইরানে নতুন করে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানে বিস্ফোরণ১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ইন স ল ম আইআরজ স র পর য য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ