ইতিহাসবিদরা ২০২৫ সালের ১৩ জুন দিনটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। এদিন বিশ্ব এমন এক সীমা অতিক্রম করেছে, যা থেকে তারা সহজে পিছিয়ে আসতে পারবে না। ইসরায়েল ১৩ জুন ভোরে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্তব্ধ করে দিয়েছে এবং বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে। এতে রাজধানী তেহরান ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কেন্দ্র তাবরিজসহ কমপক্ষে ১২টি প্রদেশে হামলা চালানো হয়।

ইসরায়েলি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের নাম ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করে। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে দেশটির দশকব্যাপী ছায়া সংঘাতের মধ্যে সবচেয়ে সরাসরি যুদ্ধের ঘটনা বলে বিবৃতি দিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুটি উদ্দেশ্য তুলে ধরতে চেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন– ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও তাদের প্রতিরোধ করা হবে বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল আশা করছে– নাটকীয় উত্তেজনা তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি স্বার্থের জন্য আরও সুবিধাজনক একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি গ্রহণে চাপ তৈরি করবে। যার মধ্যে রয়েছে দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত অপসারণ। ঠিক যেমন নেতানিয়াহু সামরিক শক্তির মাধ্যমে হামাসকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় লক্ষ্যই শেষ পর্যন্ত কেবল একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ স্থায়ী করতে পারে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষীণ ছিল। শুক্রবারের ঘটনাগুলো বিপজ্জনকভাবে ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। আক্রমণের মাত্রা, সাহস ও প্রভাব এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইরানের প্রতিক্রিয়া একটি আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করে, যা তার যুগ যুগ ধরে নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ছে। 

২০১১ সালের আরব বসন্তের পর থেকে সৌদি-ইরানের মধ্যে একটি শীতল যুদ্ধ শুরু হয়। কারণ প্রতিটি দেশ তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চীনা মধ্যস্থতায় সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেমে যায়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্মুখ ও গোপন উভয় উপায়েই যুদ্ধের সূচনা ঘটে। এটি এমন একটি সংঘাত, যা এখন আগামী বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের গতিপথ নির্ধারণের হুমকি তৈরি করেছে। এই সংঘাত এখন আরও তীব্র হবে কিনা– তা মূলত একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তিনি হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বকে মৌলিকভাবে হুমকির মুখে দেখেন, তাহলে তেহরানের প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি ভূখণ্ডের বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে।

তেল আবিবের গোয়েন্দা বাহিনীর মূল্যায়নে দাবি করা হয়েছে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনের পথে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে এ দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, তবুও এটি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল। একই সময়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করা এবং একটি সংশোধিত পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সমর্থন করেছিলেন, তিনি এগুলো আশঙ্কাজনক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়ে ভালো বলে তুলে ধরেছিলেন। ইরান তার নিজস্ব মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে আলোচনা ভেস্তে যায়।
মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর বিরোধিতা করলেও সীমিত আকারে ইসরায়েলি হামলার পক্ষে নীরব অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, এ ধরনের হামলা আলোচনার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এবং একটি বার্তা পাঠাতে পারে যে, ইরান শক্তিশালী অবস্থান থেকে আলোচনা করছে না, ঠিক যেমন ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের অবস্থান তৈরি করেছেন।
ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিলম্বিত করতে সফল হয়েছিল কিনা, নাকি তেহরানকে তা ত্বরান্বিত করতে প্ররোচিত করেছিল– তা এখনও অনিশ্চিত। যা স্পষ্ট তা হলো, সংঘর্ষ একটি নতুন পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তার পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া শুরু করে, তাহলে কারও কারও মতে ইসরায়েলের অভিযান বরং এর নির্মাণকে ত্বরান্বিত করার সমতুল্য হতে পারে। অথচ এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বোমা তৈরি বন্ধ করা।

ইব্রাহিম আল-মারাশি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোসের মধ্যপ্রাচ্য-ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক।

মোহাম্মদ ইসলামি
পর্তুগালের মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ত কর কর ছ ল ইসর য আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের  অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হ‌লেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী  আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

জানা গে‌ছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়। 

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।    

মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।   

ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে  অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • ‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
  • আলোচিত ষোড়শী আইনার পারিশ্রমিক কত?