Prothomalo:
2025-06-19@10:30:38 GMT

ফুল নয়, যেন চিংড়ি

Published: 19th, June 2025 GMT

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রতীরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিভিন্ন ধরনের পুষ্প, বৃক্ষ, লতাগুল্মে সমৃদ্ধ এই উদ্যান। মাঝেমধ্যেই যাই এই উদ্যানে। সর্বশেষ গিয়েছিলাম গত ১০ মে ২০২৫ বিকেলে। প্রচণ্ড গরম পড়েছিল সেদিন। তাড়াতাড়ি মূল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা চলে যাই পুকুরপাড়ে। এই পুকুরের উত্তর পাড়ে পেয়ে যাই লাল ‘চিংড়িগাছের’ ঝোপ। মনে হলো যেন গাছের শাখার আগায় আগায় অনেক চিংড়ি বসে আছে। ফুলের মঞ্জরিপত্রের রং লাল, দেখতে চিংড়ির খোলসের মতো। তাই এটি চিংড়িগাছ নামে পরিচিত। ইংরেজিতে প্রধানত পরিচিত Mexican shrimp plant নামে। এ ছাড়া ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ শ্রিম্প বুশ, ফলস হপ, ব্রাজিলিয়ান শাওয়ার প্ল্যান্ট, ফাউন্টেইন প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর আদিনিবাস মেক্সিকো থেকে সেন্ট্রাল আমেরিকা। যেসব উদ্ভিদ বিগত কয়েক বছরে নার্সারিওয়ালা ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমীদের হাত ধরে আমাদের দেশে এসেছে, বাগানে জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে চিংড়িগাছ অন্যতম।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia brandegeeana, এটি Acanthaceae পরিবারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বাসক, জগৎ–মদন এই গোত্রের উদ্ভিদ। আমেরিকান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও উদ্ভিদবিদ টাউনশেন্ড স্টিথ ব্র্যান্ডেগির (১৮৪৩-১৯২৫) নামানুসারে এর প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে।

এই চিংড়িগাছ ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। উদ্ভিদের কাণ্ড এবং পাতাগুলো নমনীয়। পাতা ডিম্বাকৃতির, সবুজ। পাতাগুলো বিভিন্ন ধরনের হয় এবং সাধারণত শাখা-প্রশাখাসহ গুচ্ছাকারে বৃদ্ধি পায়। গাছটি যত বেশি রোদ পায়, দাগযুক্ত পাতায় সাদা রঙের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিপরীতভাবে কাণ্ড থেকে তৈরি মঞ্জরিপত্র থেকে ফুল বের হয়। মঞ্জরিপত্রগুলো প্রথমে সাদা থাকে কিন্তু বেশি রোদের সংস্পর্শে এলে এগুলো ফ্যাকাশে গোলাপি থেকে গাঢ় হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মঞ্জরিদণ্ডের গায়ে একের পর এক মঞ্জরিপত্র বা ব্রাক্ট তৈরি হয়, যতক্ষণ না ঝরে পড়ে। এভাবে তৈরি হয় ব্রাক্টের শিকল। এই শিকল কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুলগুলো সাদা, লম্বা ও পাতলা এবং মেরুন রঙের গ্রীবাযুক্ত। ফুল লাল মঞ্জরিপত্রের কক্ষ থেকে উৎপন্ন হয়।

ফুল ফোটা শুরু হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে। এরপর আবার শুরু হওয়ার আগে অল্প সময়ের জন্য থেমে যায়। ফুলের লাল রঙের ব্রাক্ট হামিংবার্ড এবং প্রজাপতিকে আকর্ষণ করে। পরাগায়ন সাধারণত হামিংবার্ডের মাধ্যমে হয়।

এই চিংড়িগাছ পূর্ণ রোদ গ্রহণ করে। এর ফুল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এটি ছাঁটাই করে একটি খাড়া গুল্ম হিসেবে জন্মানো যেতে পারে। কাটিং এবং বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা হয়। এর চাষের জন্য প্রয়োজন উর্বর মাটি এবং পর্যাপ্ত পানি। গাছ পর্যাপ্ত পানি না পেলে পাতা ঝরে পড়ে। হাউসপ্ল্যান্ট হিসেবে এই গাছ মানানসই। বর্তমানে এর অনেক আবাদি জাত বা কালটিভার পাওয়া যায়, যাদের ব্রাক্টের রয়েছে হলুদ, গোলাপি বা ইটের মতো ঘন রং। প্রতিবছর একে ছেঁটে দেওয়া উচিত। এই উদ্ভিদ রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির ‘গার্ডেন মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে। ১০-২০ বছর টিকে থাকে এই উদ্ভিদ।

ঐতিহ্যগতভাবে মেক্সিকোর হুয়াস্টেক জনগণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, আমাশয় এবং ক্ষতের চিকিৎসার জন্য এই গাছ ব্যবহার করে। জাস্টিসিয়া গণের অন্যান্য প্রজাতির মতো এর টিউমারবিরোধী, অ্যান্টিভাইরাল এবং ডায়াবেটিসরোধী গুণ রয়েছে।

চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়াতে আসা যুবকের মরদেহ পড়েছিল রাস্তায় 

ময়মনসিংহের একটি সড়কের ওপর থেকে রুহুল আমীন আকাশ নামে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর শান্তিনগর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়। তিনি তার ভগ্নিপতির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

মারা যাওয়া আকাশ নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর বেলুয়াতলী গ্রামের হাফেজ মোহাম্মদ নওয়াব আলীর ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কলমাকান্দা উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক।

আকাশের ভগ্নিপতি মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‍“দেড় মাস আসে আকাশ বিয়ে করেন। তার স্ত্রী গাজীপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। গতকাল আকাশ আমাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। এসময় তিনি অসুস্থবোধ করেন। আজ সকালে হাসপাতালে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় আকাশ মারা গেছেন।” 

আরো পড়ুন:

কিট সংকটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ

বরিশাল বিভাগে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

তিনি বলেন, “স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আকাশকে সড়কের ওপর অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান পথচারীরা। তারা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক আকাশকে মৃত ঘোষণা করেন।”

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, “সকাল ১০টার দিকে আকাশ নামে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।”

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, “মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু; তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।”

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, “রবিবার মংমনসিংহ শহরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন  আকাশ। আজ সকালে শান্তিনগর এলাকায় একা একা হাটতে বের হন তিনি। সেখানে তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যান পথচারীরা।”

মারা যাওয়া যুবকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা ও এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, “শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। হাটতে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে সড়কে পড়ে কিছুটা রক্তাক্ত হয়েছিলেন তিনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”

কলমাকান্দা থানার ওসি মো. লুৎফুর রহমান বলেন, “আকাশ নামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতা মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি। তার নামে মামলা ছিল কিনা এই মুহূর্তে মনে নেই।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কাটা পা’ নিয়ে বিচার চেয়ে সরকারি দপ্তরে ধর্না!
  • ময়মনসিংহে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে মিলল দেশি অস্ত্র, বিদেশি মদ
  • ময়মনসিংহে ৯ দিনে ৭ খুন, ‘তুচ্ছ কারণে’ দীর্ঘ হচ্ছে লাশের তালিকা
  • নিখোঁজ কিশোরের লাশ মিলল সেপটিক ট্যাংকে
  • বিদেশে একটি দলের সঙ্গে বসে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন না
  • ‘একটি দলের সঙ্গে বিদেশে বসে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন না’
  • নিখোঁজ কিশোরের লাশ মিলল সেপটিক ট্যাংকে 
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও ‘অস্বাভাবিক’ বলে প্রচার
  • বেড়াতে আসা যুবকের মরদেহ পড়েছিল রাস্তায়