Prothomalo:
2025-11-09@05:06:06 GMT

ফুল নয়, যেন চিংড়ি

Published: 19th, June 2025 GMT

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রতীরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিভিন্ন ধরনের পুষ্প, বৃক্ষ, লতাগুল্মে সমৃদ্ধ এই উদ্যান। মাঝেমধ্যেই যাই এই উদ্যানে। সর্বশেষ গিয়েছিলাম গত ১০ মে ২০২৫ বিকেলে। প্রচণ্ড গরম পড়েছিল সেদিন। তাড়াতাড়ি মূল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা চলে যাই পুকুরপাড়ে। এই পুকুরের উত্তর পাড়ে পেয়ে যাই লাল ‘চিংড়িগাছের’ ঝোপ। মনে হলো যেন গাছের শাখার আগায় আগায় অনেক চিংড়ি বসে আছে। ফুলের মঞ্জরিপত্রের রং লাল, দেখতে চিংড়ির খোলসের মতো। তাই এটি চিংড়িগাছ নামে পরিচিত। ইংরেজিতে প্রধানত পরিচিত Mexican shrimp plant নামে। এ ছাড়া ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ শ্রিম্প বুশ, ফলস হপ, ব্রাজিলিয়ান শাওয়ার প্ল্যান্ট, ফাউন্টেইন প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর আদিনিবাস মেক্সিকো থেকে সেন্ট্রাল আমেরিকা। যেসব উদ্ভিদ বিগত কয়েক বছরে নার্সারিওয়ালা ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমীদের হাত ধরে আমাদের দেশে এসেছে, বাগানে জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে চিংড়িগাছ অন্যতম।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia brandegeeana, এটি Acanthaceae পরিবারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বাসক, জগৎ–মদন এই গোত্রের উদ্ভিদ। আমেরিকান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও উদ্ভিদবিদ টাউনশেন্ড স্টিথ ব্র্যান্ডেগির (১৮৪৩-১৯২৫) নামানুসারে এর প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে।

এই চিংড়িগাছ ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। উদ্ভিদের কাণ্ড এবং পাতাগুলো নমনীয়। পাতা ডিম্বাকৃতির, সবুজ। পাতাগুলো বিভিন্ন ধরনের হয় এবং সাধারণত শাখা-প্রশাখাসহ গুচ্ছাকারে বৃদ্ধি পায়। গাছটি যত বেশি রোদ পায়, দাগযুক্ত পাতায় সাদা রঙের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিপরীতভাবে কাণ্ড থেকে তৈরি মঞ্জরিপত্র থেকে ফুল বের হয়। মঞ্জরিপত্রগুলো প্রথমে সাদা থাকে কিন্তু বেশি রোদের সংস্পর্শে এলে এগুলো ফ্যাকাশে গোলাপি থেকে গাঢ় হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মঞ্জরিদণ্ডের গায়ে একের পর এক মঞ্জরিপত্র বা ব্রাক্ট তৈরি হয়, যতক্ষণ না ঝরে পড়ে। এভাবে তৈরি হয় ব্রাক্টের শিকল। এই শিকল কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুলগুলো সাদা, লম্বা ও পাতলা এবং মেরুন রঙের গ্রীবাযুক্ত। ফুল লাল মঞ্জরিপত্রের কক্ষ থেকে উৎপন্ন হয়।

ফুল ফোটা শুরু হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে। এরপর আবার শুরু হওয়ার আগে অল্প সময়ের জন্য থেমে যায়। ফুলের লাল রঙের ব্রাক্ট হামিংবার্ড এবং প্রজাপতিকে আকর্ষণ করে। পরাগায়ন সাধারণত হামিংবার্ডের মাধ্যমে হয়।

এই চিংড়িগাছ পূর্ণ রোদ গ্রহণ করে। এর ফুল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এটি ছাঁটাই করে একটি খাড়া গুল্ম হিসেবে জন্মানো যেতে পারে। কাটিং এবং বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা হয়। এর চাষের জন্য প্রয়োজন উর্বর মাটি এবং পর্যাপ্ত পানি। গাছ পর্যাপ্ত পানি না পেলে পাতা ঝরে পড়ে। হাউসপ্ল্যান্ট হিসেবে এই গাছ মানানসই। বর্তমানে এর অনেক আবাদি জাত বা কালটিভার পাওয়া যায়, যাদের ব্রাক্টের রয়েছে হলুদ, গোলাপি বা ইটের মতো ঘন রং। প্রতিবছর একে ছেঁটে দেওয়া উচিত। এই উদ্ভিদ রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির ‘গার্ডেন মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে। ১০-২০ বছর টিকে থাকে এই উদ্ভিদ।

ঐতিহ্যগতভাবে মেক্সিকোর হুয়াস্টেক জনগণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, আমাশয় এবং ক্ষতের চিকিৎসার জন্য এই গাছ ব্যবহার করে। জাস্টিসিয়া গণের অন্যান্য প্রজাতির মতো এর টিউমারবিরোধী, অ্যান্টিভাইরাল এবং ডায়াবেটিসরোধী গুণ রয়েছে।

চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে সহকর্মীকে হত্যার দায়ে পুলিশ দম্পতির ফাঁসির আদেশ

পুলিশ সদস্যকে হত্যার দায়ে এক পুলিশ দম্পতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ময়মনসিংহের একটি আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক হারুন-অর রশিদ।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কনস্টেবল মো. আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী কনস্টেবল নাসরিন নেলী। আলাউদ্দিনের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভবানীপুর এলাকায়।

মামলার সংক্ষিপ্ত নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে কনস্টেবল নাসরিন নেলীর সঙ্গে সহকর্মী কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর জের ধরেই ঘটে হত্যাকাণ্ড। ওই বছরের আগস্টে ময়মনসিংহ শহরের কাঁচিঝুলি এলাকায় নেলীর ভাড়া বাসায় সাইফুল ইসলামকে খুন করেন নেলী ও তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন। হত্যার পর তাঁরা সাইফুল ইসলামের লাশ বস্তাবন্দী করে গুম করার চেষ্টা করেন। তবে নগরীর টাউন হল মোড়ে পুলিশের তল্লাশির সময় বস্তাবন্দী লাশসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন তাঁরা।

ওই ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলামের মা মুলেদা বেগম ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় কনস্টেবল আলাউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী নাসরিন নেলীসহ আরও দুজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত আজ আসামিদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন।

ময়মনসিংহ আদালত পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, হত্যা মামলায় দুজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে সহকর্মীকে হত্যার দায়ে পুলিশ দম্পতির ফাঁসির আদেশ
  • ময়মনসিংহে সাবেক পুলিশ ও তার স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড