ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রথম বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সম্মেলনকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এ এস এম মহিউদ্দিন, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা, অধ্যাপক মো.

শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক তারিক মনজুর এবং সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আগামী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পাশাপাশি আগামী বৃহস্পতিবার দুই ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গেও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসুর তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখেই আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনের জন্য ১০ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন১৬ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএস ও একাডেমিক পড়াশোনা: সমন্বয়ের জরুরি প্রশ্ন

বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস ও পরীক্ষাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মনে হচ্ছে, আমরা শুধু গাছের মাথায় পানি ঢালায় ব্যস্ত সময় পার করছি, গাছের গোড়া নিয়ে চিন্তার সময় হয়তো কারও নেই। তাই বিসিএস পরীক্ষার বিদ্যমান সিলেবাস নিয়ে দুটো কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। বিসিএস পরীক্ষার বিদ্যমান সিলেবাস এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে একাডেমিক বিষয় মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস রপ্ত করার যজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, একাডেমিক বিষয়কে বাদ দিয়ে শুধু বিসিএস বিদ্যা দিয়ে রাষ্ট্রকে কতটুকু কার্যকর সেবা দেওয়া সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের কঠিন বাস্তবতায় যেখানে বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে একটি জুতসই চাকরি পাওয়া মুখ্য বিষয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক বিষয় পাশ কাটিয়ে চাকরির পরীক্ষা উপযোগী পড়াশোনা চলবে, এটাই স্বাভাবিক। বলা প্রয়োজন, টাইমস হায়ার এডুকেশনের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কমতি নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মহাসমারোহে বিসিএস প্রস্তুতির যে আয়োজন, যে গবেষণা চলে তাতে এটি পরিষ্কার; অন্তত সেখানে একাডেমিক বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। যার প্রতিফলন প্রতিবছর টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকায় আমরা দেখতে পাই।

উদ্বেগের বিষয় এই, যে শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ভালো ফলাফল করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে, সে–ই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একাডেমিক বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তখন বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের জন্ম দেয়।

আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএস: চাকরি হারালেন তিন সহকারী কমিশনার, প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই কারণ২০ নভেম্বর ২০২৫

এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং সেই জ্ঞান প্রয়োগের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। কিন্তু শুধু চাকরির সিলেবাস উপযোগী পড়াশোনায় গুরুত্ব দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

বক্তব্য হচ্ছে, শুধু চাকরির সিলেবাস তথা লগ, বিন্যাস, সমাবেশ, শতকরা, লসাগু, গসাগু, কোণ, ত্রিভুজ, রম্বস, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, দেশ-মহাদেশ, রাজধানী, মুদ্রা, চর্যাপদ, আলাওল, পদ্মাবতী, বাংলা রচনা, ইংরেজি রচনা ইত্যাদির ওপর ভর করে দু-চারটি প্রশিক্ষণ দিয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, স্কুল, কলেজসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, কর্মসূচির পরিবীক্ষণ–মূল্যায়নসহ কার্যকর ভূমিকা পালন অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে আমাদের দেশের বর্তমান সেবাব্যবস্থা এর বড় প্রমাণ। আর যদি মনে করা হয়, বিদ্যমান সিলেবাস দিয়ে দক্ষ জনশক্তি নির্বাচন সম্ভব, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতগুলো সাবজেক্ট চালু রাখার প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু আছে, সেটি নতুন করে ভাবতে হবে।

এ ছাড়া বিদ্যমান সিস্টেমে নিয়োগ পাওয়া ভিন্ন বিষয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সমাজসেবা অফিসার পদে চাকরি পেলে তাঁকে চাকরির উপযোগী করে তুলতে রাষ্ট্রের যে পরিমাণ অর্থ এবং তাঁর যে পরিমাণ শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়, সেটি সত্যিই ভাবনার বিষয়। অথচ সমাজসেবা অফিসার পদে সমাজকল্যাণ/সমাজকর্ম বিষয়ের কোনো শিক্ষার্থী নিয়োগ পেলে অর্থ ও শ্রমের ব্যয় বহুগুণে কমে যেত। এ ছাড়া হিসাববিজ্ঞানের ওই শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সরকারের বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়েছে।

অতএব ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনে সরকার ও শিক্ষার্থীর অর্থ, সময় ও শ্রমের ব্যয়ের আউটপুট কতটুকু, এ নিয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে। এ ধরনের উদাহরণ ক্যাডার ও নন–ক্যাডার পদে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুনওবামা ফাউন্ডেশনে ছয় মাসের লিডারশিপ প্রোগ্রাম, যেভাবে আবেদন২০ নভেম্বর ২০২৫

উপরন্তু সঠিক মানবসম্পদ পরিকল্পনা যদি না থাকে, একটি রাষ্ট্রের দুর্গতির সীমা-পরিসীমা থাকবে না, এটিই স্বাভাবিক। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান, কারিগরিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তি হবে সেটির একটি পরিষ্কার কর্মপরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরবর্তী সময়ে দেশে ও দেশের বাইরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাকরির বাজার বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোন বিষয়ে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, সেটি নির্ধারণ করে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করানো বাঞ্ছনীয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দলীয় নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন ও নিজেদের আখের গোছানোকে সর্বোত্তম পরিকল্পনা হিসেবে ধরে নিয়ে যেখানে-সেখানে অনার্স ও মাস্টার্স অনুমোদন, গণহারে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করা হয়েছে। যার ফলে দেখা যায়, ইতিহাস পড়ে কেউ ব্যাংকার, পদার্থ পড়ে কেউ সমাজসেবা অফিসার, সমাজকল্যাণ পড়ে ব্যাংকের এডি, গবেষণা না পড়ে গবেষণা কর্মকর্তা ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান না থাকায় অন্য বিষয় থেকে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যায়। তাঁরা এক বিষয় চৌদ্দবার বোঝালেও বুঝবেন না, এটাই স্বাভাবিক। ফলশ্রুতিতে সেবাব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী কম থাকায় দেশের জনগণ কার্যকর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে একজন চাকরিপ্রার্থী কোনোমতে একটি চাকরি ম্যানেজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন এটি হয়তো সত্যি; কিন্তু দিন শেষে রাষ্ট্রের জন্য এ ধরনের কর্ম দুপয়সার মূল্যও যোগ করবে না। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে এশিয়ার বেশ কিছু রাষ্ট্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, কৃষি, প্রযুক্তি ও সামরিক সুরক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে, যেখানে আমরা প্রায় সব সূচকেই অরক্ষিত—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি কিংবা সামরিক যা–ই হোক।

তাই বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস সংশোধনের পাশাপাশি একাডেমিক জ্ঞান, দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের জন্য নতুন নিয়োগ পদ্ধতি চালুর বিষয়টি ভাবতে হবে।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে যা জানা জরুরি১৬ নভেম্বর ২০২৫

উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে কয়েকটি মতামত পেশ করা হলো।

১. বিদ্যমান প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস সংশোধনের প্রয়োজন নেই।

২. বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে একাডেমিক ও অন্যান্য বিষয়ের সংমিশ্রণের মাধ্যমে মোট (৬০০ + ৪০০) ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনার্স পর্যায়ে পঠিত বিষয়ের জন্য ৬০০ নম্বর ও অন্যান্য বিষয়ের (বাংলা ৫০ নম্বর, গণিত ৫০ নম্বর, বিজ্ঞান ১০০ নম্বর, ইংরেজি ১০০ নম্বর, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০ নম্বর) জন্য ৪০০ নম্বর রাখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলা, আরবি সাহিত্য ও সমজাতীয় বিষয়গুলো ছাড়া অনার্স পর্যায়ে পঠিত অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ৬০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ইংরেজি মাধ্যমে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করতে হবে।

৩. মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্স পরীক্ষার ফলাফলসহ মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি, গবেষণা- প্রকাশনার মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার ৪০ শতাংশ নম্বর রাখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, মৌখিক পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ অবশ্যই রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একাডেমিক পরিবেশের উন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষে অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ, রাষ্ট্রের সময়, অর্থ ও শ্রমের অপচয় রোধ, অপ্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ব্যয় রোধ, মেধা পাচার রোধ, কার্যকর জনবান্ধব সেবাব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সর্বোপরি ‘Right man in the right place’ নিশ্চিতকরণে বিসিএস পরীক্ষার বিদ্যমান সিলেবাস ও নিয়োগপদ্ধতির পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন সময়ের দাবি।

*লেখক: মনিরুল ইসলাম, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ