রাহেলা ২৬ বছরের তরুণী। এসেছিলেন ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে বলে। তিনি খুবই হতাশ যে তাঁর অল্প বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে এবং ওজন কমানোর চেষ্টা করার পরও ওজন কমছে না। রোগীর রোগের ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- তাঁর পিরিয়ড অনিয়মিত এবং মুখে পুরুষালি পশম আছে; শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঘাড়ে, বগল ও হাতের কনুইয়ের সামনে ত্বক কালো ও মোটা হয়ে যাচ্ছে। এসব লক্ষণ দেখেই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলাম।
তাতে তাঁর পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) রোগ শনাক্ত হয়। এটি একটি জটিল কিন্তু খুবই কমন হরমোনজনিত সমস্যা। এতে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য থাকে, যা একটি পুরুষ হরমোন, যেটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নারীর দেহেও থাকে। এই অ্যান্ড্রোজেন বাড়ার ফলে মুখ ও শরীরের অন্যান্য জায়গায় অবাঞ্ছিত পশম হয় এবং ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট হয়। ইনসুলিন হরমোনের অকার্যকারিতাও পিসিওএসের অন্যতম আরেকটি কারণ। এই ইনসুলিন হরমোনের অকার্যকারিতার জন্য দেহে বিভিন্ন রকমের জটিলতা দেখা যায়, যেমন ওজন বৃদ্ধি, রক্তে চর্বির আধিক্য, লিভারে চর্বি জমা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, গর্ভপাত ইত্যাদি।
এ রোগের রোগীরা বহুমুখী লক্ষণের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এতে অনেক সময় অপচিকিৎসার শিকার হন। রাহেলা অনিয়মিত মাসিকের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ সেবন করেছেন এবং ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি। এখানে রোগ শনাক্তের পাশাপাশি সঠিক ও সর্বাঙ্গীণ চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিক জীবন ব্যবস্থাপনা মেনে চলা খুবই জরুরি। মিতু ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছেন বটে কিন্তু জীবন ব্যবস্থাপনা তেমন একটি মেনে চলতেন না। মনে রাখতে হবে পিসিওএস একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ। শুধু সঠিক জীবন ব্যবস্থাপনা মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এর অধিকাংশ জটিলতা এড়ানো সম্ভব। রাহেলা শুধু তাঁর জীবনযাত্রার ধারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। শুধু তাই নয় তাঁর পিরিয়ডও নিয়মিত হয়ে যেত। এছাড়া লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা নিলে অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। যেহেতু মিতুর ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, এখন তাঁকে ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রিত রাখলে পরবর্তী ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারবেন। রাহেলা অবিবাহিত এবং ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে ভেবে শঙ্কিত। তাঁর ধারণা ঠিক নয়, আবার অগ্রাহ্য করার মতো নয়। তিনি যদি সঠিক লাইফস্টাইল এবং সুচিকিৎসা নেন এ সমস্যাও সমস্যা হিসেবে থাকবে না।
[সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হরম ন ন হরম ন র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইরান-ইসরায়েল: ডোনাল্ড ট্রাম্প
হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে চলা তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এই যুদ্ধবিরতি চলমান সংঘাতের অবসানের পথে নিয়ে যাবে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। খবর-আল জাজিরা
তবে ইরান জানিয়েছে, তারা এখনও যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব পায়নি এবং তাদের কাছে এমন কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজনও নেই। তেহরানের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা সিএনএনকে এ কথা জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য আমাদের কাছে প্রতারণার অংশ। এর মাধ্যমে তারা ইরানে হামলার যুক্তি দাঁড় করাতে চায়। এই মুহূর্তে শত্রু পক্ষ ইরানের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। আর ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা আরও জোরদার করার চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা শত্রুর মিথ্যা কথায় কান দিচ্ছি না।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ১২ ঘন্টার জন্য একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য একমত হয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। যুদ্ধবিরতির সময় এক পক্ষ অন্য পক্ষের প্রতি শান্তিপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
তিনি বলেন, সবকিছু যেমনটি করা উচিত তেমনভাবে হবে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে আমি উভয় দেশ- ইসরায়েল ও ইরানকে অভিনন্দন জানাতে চাই, তাদের দৃঢ়তা, সাহসের অবসান ঘটানোর জন্য, যাকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলা উচিত।
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, এবং কখনও হবেও না! ঈশ্বর ইসরায়েলকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর ইরানকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যকে আশীর্বাদ করুন। ঈশ্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর বিশ্বকে আশীর্বাদ করুন!
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার জবাবে কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এ অবস্থায় সংঘাত আরও চরমে পৌঁছার আশঙ্কার মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তার সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরও এই যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।