শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উদ্যোক্তা সাজ্জাদের সফলতা
Published: 24th, June 2025 GMT
সাজ্জাদ হোসেন, জন্ম নেন গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রামে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েও তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।
তার গল্প শুধু একজন উদ্যোক্তার নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা জয় করার শক্তি ও সংকল্পের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যয়ন করছেন, পাশাপাশি পরিচালনা করে যাচ্ছেন নিজের ব্যবসাও। তবে তার এই সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
সাজ্জাদ হোসেনের শৈশবকাল ছিল অনেক কষ্টের। ছোট থেকেই তার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। পরিবার ছিল সাধারণ, তবে তাদের মধ্যে ছিল দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং সাহসিকতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। তার মা-বাবা তাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছেন এবং তার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন।
আরো পড়ুন:
জুলাই আয়োজনে উপেক্ষিত প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুবি
কোটা প্রথা বহালের প্রতিবাদের ইবিতে মানববন্ধন
গাইবান্ধার সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন সাজ্জাদ। একটা পর্যায়ে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাওয়ার সময় যে স্বাভাবিকতা শুরু হয়, তা আর ভালো হয়নি। তবে, এসব প্রতিকূলতার মাঝেও তার পড়াশোনার আগ্রহ ও ইচ্ছা কখনো ভাটা পড়েনি।
সাজ্জাদ দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সোনাতলা টেকনিক্যাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। স্নাতক তৃতীয় বর্ষে এসে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তবে প্রতিটি উপেক্ষা করে সাজ্জাদ চালিয়ে যান তার পড়াশোনা; তার কাছে শিক্ষাই ছিল মূল লক্ষ্য। পরিবার থেকে পড়াশোনার জন্য অনেক সহায়তা পেলেও, এক সময় তা কমতে শুরু করেছিল।
তার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে, যখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তার পড়াশোনা শুরু হলেও, দ্বিতীয় বছর শেষে তার অর্থনৈতিক সমস্যা শুরু হয়। বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর সামর্থ্য কমে যাওয়ার ফলে তার পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই কিছু একটা করার। কিন্তু টিউশন কিংবা কোচিংয়ের মাধ্যমে তার আয়ের সুযোগ ছিল না। এজন্য তিনি অনলাইনে বই বিক্রির করার সিদ্ধান্ত নেন।
ব্যবসার শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। তার কাছে তেমন পুঁজি ছিল, তবে আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট। ফেসবুক পেজ খুলে শুরু করেন বই বিক্রি। প্রথম দিকে তার ব্যবসা খুবই সীমিত থাকলেও ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
বই সংগ্রহ এবং বিক্রি করার প্রক্রিয়াটি সাজ্জাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। প্রথমে পুরোনো বই সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করেন। পরে তিনি নতুন বইও সংগ্রহ করতে শুরু করেন।
সাজ্জাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—বিক্রির মাধ্যমে তার ব্যবসাকে আরো বড় করা। এক সময় তার মাসিক আয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পৌঁছাতে থাকে। প্রথম দিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। বই সংগ্রহ, গ্রাহকদের সেবা, কুরিয়ার ব্যবস্থা—সবকিছু একাই সামলাতে হয়েছে। তবে এর প্রতিটি কাজ তাকে আরো পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল করেছে।
ব্যবসা এখন তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বইয়ের ব্যবসার মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের পড়াশোনার খরচই বহন করেন না, বরং নিজের স্বপ্নও পূর্ণ করতে চলেছেন। তার বিশ্বাস ছিল, শুধু পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনে অন্যকিছু করতে হবে। আজ তিনি সেই পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বড় উদ্যোক্তা হওয়ার, বর্তমানে তিনি তার সেই স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তবে তার এই সফলতার পথ মোটেই সহজ ছিল না। সাজ্জাদ জানান, প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তার অটুট মনোবল, পরিশ্রম এবং সততার ফলস্বরূপ, আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার বিশ্বাস, যত বেশি পরিশ্রম, তত বেশি সফলতা আসে।
সাজ্জাদ হোসেনের স্বপ্ন শুধু উদ্যোক্তা হওয়া ছিল না, তিনি আরো বড় কিছু করতে চান। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নিজের কাজের মাধ্যমে দেশকে কিছু ভালোর দিকে নিয়ে যেতে চান।
সাজ্জাদ শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, তিনি এক অনুপ্রেরণার উৎস। তার জীবন আমাদের শিখিয়েছে যে, প্রতিবন্ধকতা আসবে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য সেটা কখনো বাধা হতে পারে না। তার সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। তিনি সবাইকে শিখিয়েছেন- “যত বেশি পরিশ্রম, তত বেশি সফলতা।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই উদ য ক ত র ব যবস স গ রহ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
রাজশাহী কলেজের সামনে এক মাস ধরে চলছে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরির ঘটনা আর এর করুণ পরিণতি হলো একজন শিক্ষার্থীর নালায় পড়ে গুরুতর আহত হওয়া। সম্প্রতি সেখানে একই ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার অবহেলা ও উদাসীনতার উদাহরণ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস রাজশাহী কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, সেখানে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত থেকে অন্তত ২০টি স্ল্যাব চুরি হয়ে গেছে। গত বছরও শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে স্ল্যাব ও লোহার ফ্রেম চুরি হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও স্ল্যাব চুরির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্তু সেটি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
নালায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। স্থানীয় লোকজন গত ১০ দিনে অন্তত চারজনকে এই ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখেছেন। এটি স্পষ্ট করে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন কলেজের ফটকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজের ছেলেকে আহত হওয়ার পর নিজেই চোর ধরার জন্য পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল অবিলম্বে এই অরক্ষিত ফুটপাত মেরামত করা এবং স্ল্যাব চুরি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শহরে আসে, কিন্তু শহরের অব্যবস্থাপনা তাকে হাসপাতালের বিছানায় ঠেলে দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?
এ ঘটনা একটি সতর্কতা। অবিলম্বে রাজশাহী কলেজের সামনের ফুটপাত সংস্কার করা হোক। একই সঙ্গে নগরজুড়ে এ ধরনের অরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক। নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্ল্যাব চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কীভাবে এ অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।