সাজ্জাদ হোসেন, জন্ম নেন গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রামে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েও তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।

তার গল্প শুধু একজন উদ্যোক্তার নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা জয় করার শক্তি ও সংকল্পের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যয়ন করছেন, পাশাপাশি পরিচালনা করে যাচ্ছেন নিজের ব্যবসাও। তবে তার এই সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।

সাজ্জাদ হোসেনের শৈশবকাল ছিল অনেক কষ্টের। ছোট থেকেই তার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। পরিবার ছিল সাধারণ, তবে তাদের মধ্যে ছিল দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং সাহসিকতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। তার মা-বাবা তাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছেন এবং তার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন।

আরো পড়ুন:

জুলাই আয়োজনে উপেক্ষিত প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুবি

কোটা প্রথা বহালের প্রতিবাদের ইবিতে মানববন্ধন

গাইবান্ধার সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন সাজ্জাদ। একটা পর্যায়ে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাওয়ার সময় যে স্বাভাবিকতা শুরু হয়, তা আর ভালো হয়নি। তবে, এসব প্রতিকূলতার মাঝেও তার পড়াশোনার আগ্রহ ও ইচ্ছা কখনো ভাটা পড়েনি।

সাজ্জাদ দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সোনাতলা টেকনিক্যাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। স্নাতক তৃতীয় বর্ষে এসে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তবে প্রতিটি উপেক্ষা করে সাজ্জাদ চালিয়ে যান তার পড়াশোনা; তার কাছে শিক্ষাই ছিল মূল লক্ষ্য। পরিবার থেকে পড়াশোনার জন্য অনেক সহায়তা পেলেও, এক সময় তা কমতে শুরু করেছিল।

তার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে, যখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তার পড়াশোনা শুরু হলেও, দ্বিতীয় বছর শেষে তার অর্থনৈতিক সমস্যা শুরু হয়। বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর সামর্থ্য কমে যাওয়ার ফলে তার পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই কিছু একটা করার। কিন্তু টিউশন কিংবা কোচিংয়ের মাধ্যমে তার আয়ের সুযোগ ছিল না। এজন্য তিনি অনলাইনে বই বিক্রির করার সিদ্ধান্ত নেন।

ব্যবসার শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। তার কাছে তেমন পুঁজি ছিল, তবে আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট। ফেসবুক পেজ খুলে শুরু করেন বই বিক্রি। প্রথম দিকে তার ব্যবসা খুবই সীমিত থাকলেও ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

বই সংগ্রহ এবং বিক্রি করার প্রক্রিয়াটি সাজ্জাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। প্রথমে পুরোনো বই সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করেন। পরে তিনি নতুন বইও সংগ্রহ করতে শুরু করেন।

সাজ্জাদের একটাই লক্ষ্য ছিল—বিক্রির মাধ্যমে তার ব্যবসাকে আরো বড় করা। এক সময় তার মাসিক আয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পৌঁছাতে থাকে। প্রথম দিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। বই সংগ্রহ, গ্রাহকদের সেবা, কুরিয়ার ব্যবস্থা—সবকিছু একাই সামলাতে হয়েছে। তবে এর প্রতিটি কাজ তাকে আরো পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল করেছে।

ব্যবসা এখন তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বইয়ের ব্যবসার মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের পড়াশোনার খরচই বহন করেন না, বরং নিজের স্বপ্নও পূর্ণ করতে চলেছেন। তার বিশ্বাস ছিল, শুধু পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনে অন্যকিছু করতে হবে। আজ তিনি সেই পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বড় উদ্যোক্তা হওয়ার, বর্তমানে তিনি তার সেই স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তবে তার এই সফলতার পথ মোটেই সহজ ছিল না। সাজ্জাদ জানান, প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তার অটুট মনোবল, পরিশ্রম এবং সততার ফলস্বরূপ, আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার বিশ্বাস, যত বেশি পরিশ্রম, তত বেশি সফলতা আসে।

সাজ্জাদ হোসেনের স্বপ্ন শুধু উদ্যোক্তা হওয়া ছিল না, তিনি আরো বড় কিছু করতে চান। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নিজের কাজের মাধ্যমে দেশকে কিছু ভালোর দিকে নিয়ে যেতে চান।

সাজ্জাদ শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, তিনি এক অনুপ্রেরণার উৎস। তার জীবন আমাদের শিখিয়েছে যে, প্রতিবন্ধকতা আসবে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য সেটা কখনো বাধা হতে পারে না। তার সংগ্রাম, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। তিনি সবাইকে শিখিয়েছেন- “যত বেশি পরিশ্রম, তত বেশি সফলতা।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই উদ য ক ত র ব যবস স গ রহ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে আবুল কালাম (৫০) নামে এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খুনের ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রদলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৩০ মিনিট পর অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ক্রিকেট খেলার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তার ফেসবুক আইডিতে। ভিডিওটি পোস্ট দিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘আউট’। ফেসবুকে তার দেওয়া এই পোস্ট হত্যাকাণ্ডকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া বলে অভিযোগ করেছে নিহত কালামের পরিবার।

আরো পড়ুন:

আ.লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’: গোপালগঞ্জে আরেক মামলা, আসামি ২৫২

কানের দুল ছিনিয়ে নিতে শিশুকে হত্যা, আটক ২

আবুল কালাম উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযুক্ত কাউছার মানিক বাদল স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য। 

গত বছরের ৭ আগস্ট বিভিন্ন অভিযোগে কাউছারকে বহিষ্কার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। পরে ৩ নভেম্বর তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাউছারের সঙ্গে আবুল কালামের বিরোধ চলে আসছিল।

কাউছার ভিডিওটি পোস্ট করেন তার কে এম বাদল নামের ফেসবুক আইডি থেকে। ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামের কয়েকজন ক্রিকেট খেলছেন। এর মধ্যে একজন রানআউট হয়েছেন। তবে, ভিডিওতে কাউছারকে দেখা যায়নি।

খুনের ঘটনার পরপরই কাউছার এ ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করেন নিহত কালামের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুন হওয়ার পর কাউছারের পোস্ট করা ভিডিওটি কাকতালীয় নয়। এটি হত্যার ঘটনাকে ইঙ্গিত করেই করা হয়েছে।’’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউসার মানিক বাদল বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি লতিফপুর বাজারে ছিলাম। যা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। কালাম ভাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার সঙ্গেই বাজারে ছিলেন। এ ঘটনায় আমি কোনোভাবে জড়িত নই।’’

নিজ দলের একজন নেতার মৃত্যুর পর ফেসবুকে ‘আউট’ লিখে ভিডিও দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউছার বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলেছিলাম, সেই ভিডিও দিয়ে আউট লিখেছি।’’

চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি মো. ফয়েজুল আজীম বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে কাউছার ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ‘আউট’ লেখা ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।’’

ঢাকা/লিটন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (১৫-২১ নভেম্বর)