‘সত্যিকারের বিলাসিতা হচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়’
Published: 24th, June 2025 GMT
নানা কারণে আলোচনায় থাকেন তারকারা। কিন্তু সব আলোচনার মাঝেও কিছু মুহূর্ত থাকে নীরব, অন্তরঙ্গ—যেগুলো শুধু হৃদয়ের জন্য। সংগীতশিল্পী তাহসান খান এবং তার স্ত্রী রোজা আহমেদের জীবনের এমন কিছু মুহূর্তই দেখা গেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
নতুন সংসার। নতুন পথচলা। আর সেই যাত্রার প্রতিটি বাঁকে যেন মিলেছে প্রশান্তির ছোঁয়া। রোজা আহমেদ ইনস্টাগ্রামে ভাগ করে নিয়েছেন তাদের একান্ত কিছু মুহূর্ত। তাতে দেখা যায়, সবুজে মোড়া কোনো রিসোর্ট, হালকা বৃষ্টি, সুইমিংপুলের জলে চুপচাপ ভেসে আছেন দুটি মানুষ। তাদের ভালোবাসা যেন কোনো কোলাহল চায় না, শুধু সঙ্গ চায়।
এ পোস্টে রোজা আহমেদ লেখেন, “সত্যিকারের বিলাসিতা হচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়, যেখানে নীরবতাও বোঝাপড়ায় পূর্ণ, ধীর সকালে ফিসফিস করা প্রতিশ্রুতি, আর ভালোবাসা—যেটা একেবারে আমাদের নিজের।”
আরো পড়ুন:
তাহসানের বিয়ে নিয়ে যা বললেন মিথিলা
তাহসানের সঙ্গী নাদিয়া
তাহসান বহু বছর ধরেই গান ও অভিনয় জগতে একজন পরিশীলিত শিল্পী হিসেবে পরিচিত, সাম্প্রতিক সময়ে যেন একটু বেশিই ঘরোয়া। কাজের বাইরে দেশের বাইরে কাটছে তার অনেকটা সময়। কখনো আমেরিকার এক কোণায়, কখনো ইউরোপের কোনো শহরে।
কাজের ফাঁকে যেটুকু অবসর, সেটুকুই যেন এখন তার সবচেয়ে দামি সম্পদ। যাকে তিনি সময় দেন সেই মানুষটিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
রোজা আহমেদ, পেশায় নিউ ইয়র্কের একজন ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট। শুধু সাজান না, মানুষকে তাদের জীবনের বিশেষ দিনে আত্মবিশ্বাসী করে তোলেন। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সেই আত্মবিশ্বাস ও কোমলতা চোখে পড়ে।
তাহসান-রোজার এই বন্ধনের রূপ আলাদা। তারা যেন প্রকাশের চেয়ে বোঝাপড়ার দিকে বেশি মনোযোগী। তাদের জীবনযাপন, ভ্রমণ কিংবা ভালোবাসার প্রতিটি দৃশ্যেই যেন থাকে নান্দনিকতার ছোঁয়া, কোলাহলবর্জিত এক ধরনের পরিপক্ব সংবেদন।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় থানার সামনে ৬ লাশ পোড়ানোর পর কেউ সেগুলো মসজিদের সামনে রেখে আসে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের লাশ পোড়ানো হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী মতিবর রহমান (বুইদ্দা)। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে পোড়া লাশগুলো রেখে আসে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিবর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে তিনি এ জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে মতিবর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা দুইটার পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়া থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি করে। এরপর গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশগুলো (একজন জীবিত ছিলেন) থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। পরে সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে চলে যায়।
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই (আশুলিয়া থানা) ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, রাতের বেলা তিনি বাসায় চলে যান। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে।
পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন এবং বেলা দুইটার সময় সেনাবাহিনী আসে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ানো হয়।’
এর মধ্যে চারজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করা হলে তাঁরা এসে লাশ নিয়ে যান বলে জানান মতিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেগুলো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। একদিন পর আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোনো লাশ দাফন করেছি কি না, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।’
আরও পড়ুনআশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানো: রাজসাক্ষী হলেন সাবেক এসআই আবজালুল২১ আগস্ট ২০২৫সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন
এ মামলায় সপ্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন বাইপাইলের বাঘাবাড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তাঁরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন। বেলা একটার দিকে তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। সে সময় সাইফুল ইসলাম, তাঁর সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ একত্র হয়ে বাইপাইল এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন। ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।
আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এই ছয়জনকে (যাঁর মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।
এ মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে আট আসামি গ্রেপ্তার আছেন। আজ তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। তাঁদের মধ্যে শেখ আবজালুল হক ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন।
আরও পড়ুনভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল৩১ আগস্ট ২০২৪