বর্ষাকাল মানে হঠাৎ করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। কখনও আবার বৃষ্টি চলে একটানা। এমন দিনে একটু ভাজাপোড়া খাবার হলে মন্দ হয় না। বৃষ্টিভেজা বিকেলে খেতে পারেন এমন কিছু মচমচে খাবারের রেসিপি দিয়েছেন সানজিদা আক্তার মৌসুমী
চিকেন ফিঙ্গার
উপকরণ: ৩০০ গ্রাম বোনলেস চিকেন, একটি মাঝারি পেঁয়াজ (৪ টুকরো করা), ১ টুকরো আদা, ৮ থেকে ১০টি রসুনের কোয়া, ৪-৫টি কাঁচামরিচ, ২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া, ২টি ডিম, ১ চা চামচ পাতিলেবুর রস, ১ চা চামচ কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়া, ২ চা চামচ কর্নফ্লাওয়ার, স্বাদমতো লবণ, ২ চা চামচ ব্রেডক্রাম, পরিমাণ মতো তেল
প্রস্তুত প্রণালি: ভালো করে চিকেনগুলো ধুয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ, আদা, কাঁচামরিচ ভালোভাবে বেটে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে ধুয়ে রাখা পিস করা চিকেন এবং বেটে রাখা মসলা দিতে হবে। এখন স্বাদমতো লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া, পাতিলেবুর রস যোগ করুন। চিকেনগুলো ভালো করে মাখিয়ে নিন। ফিলে নিয়ে একটু ব্রেডগুলো লাগিয়ে তারপর ডিমের মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে আবার ব্রেডগুলো লাগিয়ে নিতে হবে। এখন কড়াইয়ে তেল দিয়ে ফিঙ্গারগুলো একটু লাল করে ভেজে নিন। ৎ
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
উপকরণ: বড় সাইজের চারটি আলু, তেল, লবণ, পানি পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালি: বড় সাইজের চার পিস আলু লম্বালম্বি কেটে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। চুলায় একই পাত্রে পানি গরম করে তাতে অল্প লবণ দিয়ে আলুগুলো ৩ মিনিট সেদ্ধ করুন। পানি ঝরিয়ে টিস্যু দিয়ে ভালোভাবে আলু মুছে নিন। স্লাইস করা আলুগুলো ঠান্ডা করে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ফ্রিজিং করে রাখুন। পরে ফুটন্ত গরম তেলে লাল করে ভেজে নিন। তৈরি হয়ে গেল মজাদার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
হট অ্যান্ড স্পাইসি
চিকেন উইংস
উপকরণ: মুরগির পাখা ৮-১০ পিস, লালমরিচের গুঁড়া আধা চামচ, পাপরিকা পাউডার আধা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চামচ, সয়া সস চার টেবিল চামচ, পরিমাণ মতো লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চামচ, ভিনেগার দুই টেবিল চামচ, আদা, রসুন বাটা এক টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালি: মুরগির পাখাগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। তেল গরম হলে পাখাগুলো লাল করে ভেজে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
ফিশ ফিঙ্গার
উপকরণ: ৫ থেকে ৬ পিস রুই মাছের ফালি, দুই তিনটি পেঁয়াজ, ৬ থেকে ৮ কোয়া রসুন, ১ আঁটি ধনেপাতা, ১টি পাতিলেবু, স্বাদমতো লবণ, ৪/৫টি কাঁচামরিচ, ২টি ডিম, পরিমাণ মতো ব্রেড গুঁড়ো, পরিমাণ মতো রান্নার তেল।
প্রস্তুত প্রণালি: মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে সামান্য লবণ এবং পাতিলেবুর রস দিয়ে মাছগুলোকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এখন পেঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, লবণ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। একটি পাত্রে মিক্সড মসলা ঢেকে রাখুন। এরপর মাছের পানি চিপে ফেলে দিয়ে মাছগুলোকে পাত্রে রেখে ভালো করে মসলার সঙ্গে মেশান। একটি পাত্রে ব্রেড গুঁড়া রাখুন। অন্য একটি পাত্রে ২টি ডিম ভালো করে ফাটিয়ে নিন। এবার একটি করে মাছের ফালি নিয়ে একটু ব্রেড গুঁড়া লাগান। তারপর ডিমের মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে আবার ব্রেড গুঁড়া লাগিয়ে নিতে হবে। তেল গরম হলে ফিঙ্গারগুলো তেলে ছেড়ে দিতে হবে। ফিঙ্গারগুলো একটু লাল করে ভেজে নিয়ে, গরম গরম পরিবেশন করুন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনুক থেকে চুন
‘পান খাইতে চুন লাগে’ গানটি শোনেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। পানের সঙ্গে চুনের যুগলবন্দি যুগ-যুগান্তরের। এই চুন ঘিরে আমাদের দেশের মানুষের জীবন ও যাপনের সংস্কৃতিতে গানতো আছেই, আরও আছে এই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
আমি ছোট বেলায় দেখেছি, কেউ কারও বাড়িতে চুন ধার করতে গেলে চুনকে চুন বলতো না। চুনকে বলতো পান খাওয়ার দই। বা অন্য কিছু। কিন্তু আতিথেয়তায় পানের অনুসঙ্গ হিসেবে চুন দিতেই হতো। পানের পরেই চুনের কদর, এরপরে আসে সুপারির কথা। চুন সাধারণত চার প্রকার হয়— শঙ্খ চুন, ঝিনুক চুন, পাথর চুন, শামুক চুন।
শঙ্খ এবং ঝিনুকের চুনই সাধারণত পানের সঙ্গে খাওয়া হয়। বাকি যে পাথর চুন বা অন্য চুন বিভিন্ন কাজের ব্যবহৃত হয়। যেমন বিল্ডিংয়ে চুনকাম করার জন্য পাথর চুন ব্যবহার করা হয়। পুকুরের পানি পরিষ্কার করার জন্য চুন ব্যবহার করা হয়। সেগুলো অনেক সময় শামুক থেকে তৈরি করা হয়।
আরো পড়ুন:
বহু বছর ধরে তালাবদ্ধ রাজশাহী কলেজের জাদুঘর
কুমিল্লায় মাটি খুঁড়তেই বেড়িয়ে এলো প্রাচীন স্থাপনা
কারা তৈরি করে: আগে প্রায় প্রতি গ্রামে না হলেও দুই, এক গ্রাম পর পর চুন তৈরির লোকজন পাওয়া যেত। যাদেরকে বলা হতো তাম্বুলী। তখন গ্রাম-গঞ্জের ছোট-বড় জলাশয়ে আগে প্রচুর শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যেত। কালক্রমে কৃষিজমিতে অতিরিক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এবং অতিরিক্ত চুন তৈরির কারণে প্রকৃতি থেকে শামুক এবং ঝিনুক হারিয়ে গেছে।
বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে আর শামুক ও ঝিনুক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। তাহলে চুন তৈরি হচ্ছে কীভাবে?—বর্তমানে বিভিন্ন খামারে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ হচ্ছে। ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ করার পরে স্বাভাবিকভাবেই ওই ঝিনুকটা মারা যায়। মৃত ঝিনুকের খোলসটা চুন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
তাম্বুলিরা বিভিন্ন ঝিনুকের খামারিদের কাছ থেকে ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, যশোর অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায়। কম-বেশি ছয়শো টাকা কেজি দরে তারা কেনে। আগে তারা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতো। বলা চলে বিনামূল্যে কাঁচামাল পেয়ে যেতো। ঝিনুক ভেঙে মাঝের অংশটা হাঁসকে খাওয়াতো আর খোলসটা নিয়ে চুন তৈরি করতো।
চুন বানানোর ধাপ: শামুক, ঝিনুকের খোলস সংগ্রহের পরে এগুলো বিশেষ এক ধরণের চুলায় পোড়াতে হয়। তার আগে পরিষ্কার করে নেয়। তারপর চুলায় পুড়িয়ে ছাইয়ের মতো করে ফেলে। তারপরে চালের গুঁড়ার মতো চেলে নেয়। যে অংশটা পোড়ানোর পরেও ছাই হতো না, সেই অংশ বাদ দেয়।
ছাইয়ের সঙ্গে পানি মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বড় একটা হাতল (বাঁশ বা কাঠের দণ্ড) দিয়ে এটাকে মন্থন করা হয়। ঘুটতে ঘুটতে পানি এবং ঝিঁনুক পোড়া গুঁড়া মিশে মণ্ডের মতো হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত সুন্দর মিশ্রণ তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাড়া এই নাড়াচাড়াটা করতে থাকে। নাড়াচাড়া করতে করতে একটা সময় চুন তৈরি হয়ে যায়।
এরপর একটি পাতলা কাপড়ে অনেকটা তালের ক্বাথ থেকে পানি ঝরানোর মতো করে পানি ঝরানো হয়। পানি ঝরে গেলেই এই চুন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অনেক সময় তাম্বুলিরা নিজেরাই চুন বিক্রি করে থাকে। আবার অনেক সময় পাইকাররা তাম্বুলিদের কাছ থেকে চুন সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
মানুষ, পশু ও পাখির রোগ নিরাময়েও চুনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে ছিলো।
মানুষের পেঁট ফাঁপা হলে চুনের পানি খাওয়ানো হতো। চুনের ভেতর পানি দিয়ে রাখা হতো। তারপর যে পানিটা উপরে উঠে আসতো সেই পানিটা খাওয়ানো হতো।
বোলতা বা মৌমাছি কামড়ালে আক্রান্ত জায়গার চারপাশে চুন লাগিয়ে দেওয়া হতো, এতে ব্যথা কমে যেত। এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
পশুপাখি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ও নির্দিষ্ট জায়গায় হলুদ মিশ্রিত চুন লাগিয়ে দেওয়া হতো। যাতে ব্যথা কমে।
বলা যায়, বাঙালির অবসর- আমোদে, আপ্যায়নে রোগে-নিরোগে চুন ছিল অনেক চেনা ও বহুল ব্যবহৃত এক অনুসঙ্গ।
ঢাকা/লিপি