ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও তিনজনকে ফাঁসি দিল ইরান
Published: 25th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে ইরান। আজ বুধবার ইরানের বিচার বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল।
ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রাসুল আহমদ রাসুল নামের তিন ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে দেশটির ভেতরে সরঞ্জাম ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসককে (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়।
আরও পড়ুন১২ দিনের সংঘাতে ১৪ ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের, ইরানের ক্ষতি কতটা১ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজ সকালে রায় কার্যকর করা হয়েছে এবং তাঁদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের তথ্য অনুসারে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরমিয়ায় ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়ার অবস্থান।
তেহরান প্রায়ই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে চিরশত্রু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে।তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করার আগের ছবিও প্রকাশ করেছে বিচার বিভাগ। ছবিতে তাঁদের নীল রঙের কয়েদি-পোশাকে দেখা গেছে।
তেহরান প্রায়ই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে চিরশত্রু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে।
১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেহরান ঘোষণা দিয়েছিল, গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারকাজ শেষ করা হবে।
আরও পড়ুনইরানের ভেতর ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতার জাল কতটা বিস্তৃত১৫ ঘণ্টা আগেএর আগে গত রোববার ও সোমবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য বলছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ইরান এখন চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রের খবর ফাঁস করেছিলেন যে প্রোকৌশলী
ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে চাকরি করতেন সেদেশের প্রোকৌশলী মোরেখাই ভানূনু।গাজায় দিনের পর দিন ইসরায়েলের হামলা চালানোর ঘটনা ভানূনুকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছিলো। এরপর ভানূন সিদ্ধান্ত নেন পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের চাকরি ছেড়ে, ইসরায়েল থেকে দূরে কোথাও চলে যাবেন। এবং ইসরায়েল গোপনে গোপনে কি কি বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে তা বিশ্বকে জানিয়ে দেবেন।
ভানূনু চাকরি ছাড়ার আগে ওই গবেষণা কেন্দ্রের ছবি অতিগোপনে তোলেন। এবং উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে দেশ ছাড়েন। এরপর দ্য সানডে টাইমসকে ইসরায়েলের গোপন অস্ত্রের খবর জানিয়ে দেন। এরপরেই ভানূনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইসরায়েলের গুপ্তচরের পাল্লায় পড়েন ভানূন। ওই গুপ্তচর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনিই ভানূনকে হানিট্যাপে ফেলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যান এবং ইসরায়েলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পুরো প্রক্রিয়াটা নাটকীয়ভাবে ঘটতে থাকে।
বিবিসির খবর-লন্ডনের পত্রিকা দ্য সানডে টাইমস ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে একটা প্রতিবেদন ছেপেছিল, ‘রিভিলড্ – দ্য সিক্রেটস অফ ইসরায়েলস্ নিউক্লিয়ার আর্সেনাল’, অর্থাৎ ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রের গোপন তথ্য ফাঁস। মনে করা হয় ওই খবরটি ব্রিটিশ সাংবাদিকতায় সবথেকে বড় ‘স্কুপ’ খবরগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।
আরো পড়ুন:
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল ব্রিকস
বিশ্বাসঘাতক না কি হুইসল-ব্লোয়ার
দ্য সানডে টাইমসের সাংবাদিক হাউনামের সঙ্গে সেবছরই অগাস্টে ভানূনুর প্রথম দেখা হয় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। প্রথম সাক্ষাতে ভানূনুর চেহারা দেখে অবাকই হয়েছিলেন হাউনাম।
হাউনাম বলেন, ‘‘ভানূনুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনেই হয়নি যে উনি কোনোভাবে পরমাণু বিজ্ঞানী। দেখতে ছোটখাটো, মাথায় টাক পড়েছে, দেখে খুব একটা আত্মবিশ্বাস আছে বলেও মনে হয়নি, সাধারণ পোশাক পরা একটা মানুষ। তবে তিনি ডিমোনায় যা দেখেছেন, সেটা পুরো বিশ্বকে জানানোর সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন।"
১৯৮৫-র শেষ দিকে ভানূনু চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এশিয়া-ভ্রমণে বের হন। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ব্যবহার করে আর তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্প – এই দুইটি বিষয়ই ইসরায়েলের প্রতি ভানূনের মোহভঙ্গ ঘটিয়েছিল।
চাকরি ছাড়ার আগে অবশ্য তিনি পারমাণবিক কারখানার ভেতরে ফিল্মের দুটি রোল ভর্তি ছবি তুলে নিয়েছিলেন। সেই সব ছবির মধ্যে যেমন ছিল অস্ত্র তৈরির জন্য কীভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিষ্কাশন করা হয় সেই সব ছবি আর পরীক্ষাগারে বানানো থার্মোনিউক্লিয়ার যন্ত্রের একটা মডেলের ছবিও ছিল তার কাছে।
ভানূনু গিয়েছিলেন লন্ডনে। দ্য সানডে টাইমসের খবর ছাপা হলো, তারপরই ইসরায়েলি গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ তাকে রোম থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলে – দীর্ঘ কারাবাসের সাজা হয় তার।
এক মাস পরে ইসরায়েল ঘোষণা করেছিল ভানূনুকে আটক করা হয়েছে। যেভাবে হানি-ট্র্যাপ করা হয়, অর্থাৎ নারীকে ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলার যে কায়দা, একেবারেই সেভাবে ধরা পড়েন ভানূনু। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে নৌকায় করে ইসরায়েলে পাচার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।তাকে যখন ইসরায়েলের জেল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন যাতে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা তার অপহরণের ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পারেন, সেজন্য হাতের তালুতে তিনি কিছু লিখে রেখেছিলেন। জানলায় সেই হাতটা চেপে ধরেছিলেন তিনি, যাতে সাংবাদিকরা ওই লেখাগুলো পড়তে পারেন।
তিনি জানিয়েছিলেনম লন্ডনে পর্যটকের ভেক ধরে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো এক মোসাদ এজেন্ট শেরিল বেনতোভ। তাকে লোভ দেখিয়ে রোমে নিয়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পরে তাকে অপহরণ করে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়।
বিশ্বাসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে ভানূনুর বিচার শুরু হয়। তার ১৮ বছরের জেলের সাজা হয়। জেলে থাকার প্রায় অর্ধেকটা সময় তাকে একা একটা সেলে বন্দী থাকতে হয়।
ভানূনু কেন জানালেন সেই তথ্য
জেল থেকেই দেওয়া একটি রেকর্ড করা সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, "আমি বিশ্বকে জানাতে চেয়েছিলাম যে আসলে কী ঘটছে। এটা বিশ্বাসঘাতকতা নয়। ইসরায়েলের নীতির বিপরীতে গিয়ে আমি বিশ্বকে একটা তথ্য দিতে চেয়েছিলাম।
এই প্রোকৌশলী জেল থেকে তিনি ছাড়া পান ২০০৪ সালের ২১শে এপ্রিল।কিন্তু ইসরায়েল ছাড়ার অনুমতি তাকে কখনই দেওয়া হয়নি। মুক্তি পাওয়ার শর্ত ভঙ্গ করায় তারপরেও তাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছে।
এরকমই একবার তাকে যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২০০৯ সালে, তখন চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘১৮ বছরেও আমার কাছ থেকে কিছু বার করতে পার নি, তিন মাসেও পারবে না। ধিক্কার তোমাকে ইসরায়েল।’’
ঢাকা/লিপি