সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও পাবনার শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে পাবনা থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত এই রুটে কোনো বাস চলাচল করেনি। পাবনা জেলা মোটর মালিক গ্রুপ এ ধর্মঘট পালন করছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম বলেন, “পাবনা মোটর মালিক গ্রুপ, বাস মিনিবাস মালিক সমিতিসহ তিনটি সংগঠনের ডাকে পাবনা-ঢাকা রুটে বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। চলমান সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”
তিনি বলেন বলেন, “পাবনা থেকে শাহজাদপুর মহাসড়ক হয়ে পাবনার সব বাস ঢাকায় যাতায়াত করে। মাঝে-মধ্যেই শাহজাদপুরের বাস মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন অজুহাতে পাবনার বাস চালক ও শ্রমিকদের মারধর করেন। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে শাহজাদপুরে পাবনার কোনো বাস কাউন্টার রাখতে দেয়নি। এর মধ্যে তারা চাটমোহর ভাঙ্গুড়া ফরিদপুর বাস কাউন্টার দখল করে নিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
ঠাকুরগাঁওয়ের লাহিড়ী-নেকমরদ রুটে বাস চলাচল শুরু হচ্ছে
তিনি আরো বলেন, “সমিতির নিয়ম না মেনে শাহজাদপুরের নবীন বরণ বাসটি পাবনার কাশিনাথপুর থেকে মাওনা রুটে চলাচল শুরু করে। তারা পাবনার মালিক গ্রুপকে এ বিষয়ে কিছু বলেনি। একটা চিঠি দিয়ে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তারা। এর আগেও অনেকবার শাহজাদপুরের বাস মালিক শ্রমিকরা পাবনার বাস চালক শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করেছে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে মূলত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।”
পাবনা জেলা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস সচিব আমিনুল ইসলাম বাবলু বলেন, “গত ২৫ জুন দুপুরের দিকে পাবনার একটি বাস কাশিনাথপুরে দাঁড়ানো ছিল। পাবনার বাসটি ছাড়ার আগেই নিয়ম না মেনে সেখানে থাকা শাহজাদপুরের নবীন বরণ বাসটি আগে ছেড়ে যায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে পাবনার একজন বাস শ্রমিককে মারধর করে নবীন বরণ বাসের শ্রমিকরা। তার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাবনা থেকে ঢাকা রুটেবাদ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।”
পাবনা মোটর মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাদেমুল ইসলাম বাদশা বলেন, “বারবার কথা দেওয়ার পরও শাহজাদপুরের বাস শ্রমিকরা পাবনার গাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। গত ২৫ জুন আমাদের একজন শ্রমিককে মারধর করা হয়। এর আগেও অনেক বার তাদের স্বেচ্ছাচারীতা ও শ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় ধর্মঘট হয়েছে। নতুন করে তারা আবারো ঝামেলার সৃষ্টি করছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্থায়ী সমাধান চাই। যাতে আর কোনোদিন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।”
পাবনা থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। তারা বিকল্প উপায়ে বিভিন্ন রুট ঘুরে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ঢাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন প বন র ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
রাজশাহী কলেজের সামনে এক মাস ধরে চলছে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরির ঘটনা আর এর করুণ পরিণতি হলো একজন শিক্ষার্থীর নালায় পড়ে গুরুতর আহত হওয়া। সম্প্রতি সেখানে একই ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার অবহেলা ও উদাসীনতার উদাহরণ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস রাজশাহী কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, সেখানে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত থেকে অন্তত ২০টি স্ল্যাব চুরি হয়ে গেছে। গত বছরও শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে স্ল্যাব ও লোহার ফ্রেম চুরি হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও স্ল্যাব চুরির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্তু সেটি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
নালায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। স্থানীয় লোকজন গত ১০ দিনে অন্তত চারজনকে এই ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখেছেন। এটি স্পষ্ট করে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন কলেজের ফটকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজের ছেলেকে আহত হওয়ার পর নিজেই চোর ধরার জন্য পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল অবিলম্বে এই অরক্ষিত ফুটপাত মেরামত করা এবং স্ল্যাব চুরি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শহরে আসে, কিন্তু শহরের অব্যবস্থাপনা তাকে হাসপাতালের বিছানায় ঠেলে দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?
এ ঘটনা একটি সতর্কতা। অবিলম্বে রাজশাহী কলেজের সামনের ফুটপাত সংস্কার করা হোক। একই সঙ্গে নগরজুড়ে এ ধরনের অরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক। নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্ল্যাব চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কীভাবে এ অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।