আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে চেনে এবি ডি ভিলিয়ার্স নামে। নিজের প্রজন্মের তো বটেই, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। আধুনিক ক্রিকেটে সময় উদ্ভাবনী শট খেলায় এগিয়ে ছিলেন অনেকের চেয়ে। অপ্রথাগত সব শট খেলার রেঞ্জ এত বেশি যে তাঁকে ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’ নামেও ডাকা হয়। ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটি, দ্রুততম সেঞ্চুরি ও দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড তাঁর দখলে। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর সেই ৪৪ বলে ১৪৯ রানের ইনিংসটি এখন ক্রিকেট–রূপকথার অংশ। আত্মজীবনী ‘এবি—দ্য অটোবায়োগ্রাফি’তে সেই ইনিংসটি নিয়ে একটি অধ্যায় লিখেছেন ডি ভিলিয়ার্স।কী লিখেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স

অন্য কারও ব্যাটিংয়ে নামা উচিত।

রোববার। ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ওয়ানডে খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিল ধারণের ঠাঁই নেই গ্যালারিতে উষ্ণ রোদের সরব দর্শক। কারণ, মাঠে ব্যাটিংয়ে রাইলি রুশো ও হাশিম আমলা, অসাধারণ খেলছে। ভিত গড়ছে জয়ের।

স্কোর দুই শ পেরিয়ে গেল। ওরা ফেরেনি। ড্রেসিংরুমে রাসেল ডমিঙ্গোকে গিয়ে ধরলাম, উনি আমাদের কোচ, ‘মিলার এরপর যাক, কোচ। ওর জন্য একদম আদর্শ (ম্যাচের পরিস্থিতি)।’

‘না, এরপর তুমি’—ডমিঙ্গোর শক্ত কণ্ঠ।

কিন্তু আমার মাথায় ঢুকল না। সুলেমান বেনের এখনো দুই ওভার বাকি। কেউ আউট হলে মিলার নেমে এই বাঁহাতি স্পিনারকে একদম চালিয়ে খেলবে। কারণ, তার বল বাঁহাতির ভেতরে আসবে। পরিস্থিতিটা মিলারের জন্য একদম আদর্শ।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজে আমরা ১-০ তে এগিয়ে। আমরাই সিরিজ জিতব, সবার ধারণা। কিন্তু সে জন্য কোনো সুযোগই হাতছাড়া করা যাবে না।

আমলা ও রুশো দাপটের সঙ্গে খেলছে। স্কোর ২২০ পেরিয়ে গেল।
এখন একটু অন্য রকম ভাবাই যায়।
‘কোচ, সিরিয়াসলি বলছি এরপর ডেভের যাওয়া উচিত।’
‘না, এই পরিস্থিতিতে তুমিই সেরা।’
এক্সট্রা কাভার দিয়ে হাশিম আমলার আরেকটি চার। স্কোর এগোচ্ছে ভালোই।

ড্রেসিংরুমে ফিজিওথেরাপি দেওয়ার বিছানায় গা-টা এলিয়ে দিই। ডেল স্টেইন, ফাফ ডু প্লেসিরা আশপাশেই। ওয়ান্ডারার্সে আরেকটি ‘গোলাপি’ রোববারে কোলাহল ভালোই লাগছিল সবার। বার্ষিক এ ম্যাচে গোলাপি জার্সি পরে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা, বেশির ভাগ দর্শকের গায়েও তাই; স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতন করতে তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
এটা আমার ১৭৭তম ওয়ানডে। কিন্তু নার্ভাস লাগছিল। প্রথম ম্যাচে যেমন লেগেছিল।
‘আর ঠিক হলো না’, অস্ফুটে একটু জোরেই মুখ ফুটে বেরিয়ে গেল কথাটা। অন্য কাউকে উদ্দেশ করে বলিনি, কিন্তু ফাফ শুনল, ‘কী?’

‘স্নায়ুচাপ। ব্যাটিংয়ে নামার আগে খুব বাড়ে।’

কথা বলার ফাঁকেই ১২৮ করে রাইলি ডিপে ধরা পড়ল। আমাদের স্কোর ১ উইকেটে ২৪৭। নামতে হবে। ব্যাটটা নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে গিয়েই হোঁচট খেলাম। ডেল আর ফাফের সে কী হাসি।

আরও পড়ুন২৮০০ কোটি টাকাও কম! আইসিসির কাছ থেকে ভারতের জন্য আরও বেশি দাবি শাস্ত্রীর১২ ঘণ্টা আগে

অনন্তকালের পথ পেরিয়ে অবশেষে মাঠে। শরীরটা একটু আলগা করে নিলাম। হাত দুটোও। হঠাৎ করেই চারপাশটা খেয়াল হলো। হাইভেল্ডে সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল একটা দিন। চারপাশে গোলাপির জয়জয়কার। প্রোটিয়ারা ভালো করছে। লোকে খুশি। উত্তেজিত। আবারও জীবিকার জন্য এই খেলাটি খেলতে পারায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো। দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, এখন ওয়ানডে দলের অধিনায়কও, এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল হলো, আবেগ নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। এখন কাজের সময়। একটা ছন্দ মেনে জোনে ফিরতে হবে। নিজের খেলাটা খেলতে হবে।

হ্যাশ (হাশিম আমলা) ১১৬ বলে ১১৪ করে আমার অপেক্ষায়। খুবই শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত। আমরা সেই কিশোরকাল থেকে একসঙ্গে কিংবা বিপক্ষে ক্রিকেট খেলছি। স্কুল, প্রদেশ হয়ে এখন দেশের জার্সিতে। সে খুবই উঁচুমানের মানুষ, উঁচুমানের খেলোয়াড়।
‘আমি এক বা দুই ওভার একটু দেখব। তারপর একসঙ্গে চালাব’ বললাম হাশিমকে। খুবই সরল পরিকল্পনা। হাশিম শেষ পর্যন্ত খেলবে। আমি যত দ্রুত সম্ভব সেট হয়ে মোমেন্টাম এনে দেওয়ার চেষ্টা করব। সব চালাব। ৩৫০ পেরিয়ে যেতে পারলে ম্যাচটা ওদের থেকে বের করে নেওয়া যাবে।

আর ৬৯ বল বাকি।

সেদিন অন্য মাত্রার ব্যাটিং করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’

প্রকাশ্যে গুলি করে চট্টগ্রামে একের পর এক খুনের ঘটনায় উঠে আসছে তাঁর নাম। হত্যা মামলায় তাঁকে আসামিও করেছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার। পুলিশ তাঁকে হন্য হয়ে খুঁজলেও থেমে নেই তাঁর অপরাধ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হানের বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ীকে রায়হান বলেন, ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব।’

হুমকি পাওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. একরাম। তিনি পাথরের ব্যবসা করেন। আজ সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁকে ফোন করেন সন্ত্রাসী রায়হান। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় তাঁকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার হুমকি দেন।

কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে ব্যবসায়ী একরাম বলেন, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ তাঁকে হুমকি দেন। ওই হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর মামলা তুলে নিতে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হুমকির বিষয়ে থানায় মামলা কিংবা জিডি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ী একরাম।

নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। —আমিনুর রশিদ, সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।

একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকির পর রাতে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে বলার সঙ্গে সঙ্গে সোয়াত টিমসহ পুলিশের দল বাসার সামনে পাহারায় রয়েছে। ভয়ে আমার স্বামী এখন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলে সঙ্গে পুলিশ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনরাউজানে যুবদলকর্মী আলম খুনেও আলোচনায় ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম২৬ অক্টোবর ২০২৫

বেপরোয়া ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ছোট সাজ্জাদ ১৫ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর বাহিনীর দেখভাল করছেন রায়হান।

পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর আগেও হুমকির বিষয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যবসায়ী।’

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

আরও পড়ুন‘আমি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’০৮ আগস্ট ২০২৫একের পর এক খুনে রায়হানের নাম

চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়া ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয় ৫ নভেম্বর। এর তিন দিন আগে সরোয়ারকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, রায়হান সরোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতলে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডে রায়হান ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেছেন। জীবিত অবস্থায় মুঠোফোনে আলমগীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলমগীরকেও রায়হানের নাম উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—তিন দিন আগে হুমকি পেয়েছিলেন সরোয়ার০৬ নভেম্বর ২০২৫

পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।

গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মুঠোফোনে হুমকি দেন রায়হান। তিনি ওই দোকানিকে বলেন, ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব। ...আকবর সি বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’

চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। মো. ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। পুলিশ জানায়, রায়হানের নামে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • অদম্য স্পেন বিশ্বকাপের একদম দোরগোড়ায়
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’