Samakal:
2025-11-17@10:04:22 GMT

সুরে বাঁধা যার প্রাণ

Published: 28th, June 2025 GMT

সুরে বাঁধা যার প্রাণ

একটি পরিবার, এক ঐতিহ্য আর একটি প্রজন্ম– সব মিলিয়ে সংগীত যেন শুধুই চর্চার বিষয় নয়, বরং জীবনধারার মতোই প্রবহমান। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘সংগীত ভবন’ পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে দেশব্যাপী সংগীতের আলো জ্বালিয়ে চলেছেন একজন তরুণ কণ্ঠশিল্পী তুলিপ সেনগুপ্ত; যার জীবনের শুরু থেকেই সংগীত ছিল সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ।
১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট, রামুর এই রম্যভূমিতেই তাঁর জন্ম। সংগীতের হাতেখড়ি বাবার কাছেই–শুরুটা যেমন পারিবারিক, তেমনি প্রাণেরও। চারপাশে যখন দিন-রাত গান আর সুরের অনুশীলন, তখন গানের প্রেমে পড়াটাই ছিল অবধারিত সত্য।
তাঁর ঠাকুরদা, স্বর্গীয় প্রিয়দা রঞ্জন সেনগুপ্ত ছিলেন চট্টগ্রামের খ্যাতনামা সেতার বাদক ও প্রশিক্ষক। ঠাকুরমা বনবীথি সেনগুপ্তও ছিলেন সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক। এই দুই শিল্পপ্রাণ মানুষ ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংগীত ভবন, যা পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের সংগীতজগতের একটি উজ্জ্বল আলোকিত প্রতিষ্ঠান।
পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন একেকজন স্বীকৃত শিল্পী। বড় জ্যাঠা স্বর্গীয় দীপক সেনগুপ্ত, মেজ জ্যাঠা স্বর্গীয় প্রদীপ সেনগুপ্ত, পিসিমণিরা–পুরবী সেনগুপ্ত ও কাবেরী সেনগুপ্ত। তাঁর বাবা বিভাস সেনগুপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও জেলার একজন গুণী সংগীতশিল্পী। তুলিপের বাবাও বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।
সরকারি চাকরির সুবাদে বিভাস সেনগুপ্ত রামু আসেন ১৯৮৫ সালে। এখানেই গড়ে তোলেন সংগীত ভবনের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তুলিপ সেনগুপ্ত বলেন, কক্সবাজার জেলায় রামু ছিল শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর জনপদ। চাকরিসূত্রে রামু এসে এখানকার শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বেগবান যাত্রায় নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন বাবা। এক পর্যায়ে রামুকে ভালোবোসে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট, এই রামুতেই আমার জন্ম।
রামুর পশ্চিম মেরংলোয়ায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন সংগীত প্রশিক্ষণালয় ‘সংগীত ভবন, রামু’।
‘ঘরে সারাক্ষণ গানবাজনার পরিবেশে বেড়ে ওঠা আমার। সেই থেকে গানের প্রতি গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই। ছোটবেলায় বাবার কাছেই আমার গানের প্রথম হাতেখড়ি। এখান থেকেই শুরু হয় আমার সংগীত-ভালোবাসার পথচলা’– যোগ করেন তুলিপ।
চট্টগ্রামে ‘সংগীত ভবন’-এর অধ্যক্ষ, পিসিমণি কাবেরী সেনগুপ্তের কাছ থেকে সংগীতের দীক্ষা নেওয়ার পর তুলিপের কণ্ঠসাধনার গভীরতা বাড়তে থাকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যান কলকাতায়। সেখানে কাটানো তিন বছরে গানের জগতে আরও ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে। শ্রদ্ধেয় কৌশিক ভট্টাচার্য্য ও ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে সংগীতের মর্মার্থ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।
কলকাতাতেই যুক্ত হন জনপ্রিয় গানের দল ‘সহজ মানুষ’-এ। তীর্থসুন্দর বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে সংগীত পরিবেশন করেন বিখ্যাত তারা টিভির ‘টেক এ ব্র্যাক’ এবং ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে। মিডিয়ায় তখনই ঘটে তাঁর গায়কি আত্মপ্রকাশ।
এরপর ২০১৬ সালে দেশে ফিরে মাছরাঙা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান রাঙাসকাল, বৈশাখী টিভি, এসএ টিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে গান করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করছেন।
তুলিপ বলেন, দেশে এসে গুণী সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খান, সুজেয় শ্যাম, উজ্জ্বল সিনহা, জয় শাহরিয়ারসহ অনেকের সান্নিধ্য পেয়েছি। এ সময় আমার মৌলিক গানগুলো প্রকাশ পেয়েছে, যা শ্রোতাদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
নাটকের জগতে গানের কাজেও রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি। ‘আপেল মাহমুদ এমিল’, ‘রফিকুল ইসলাম ফরহাদ’সহ নাট্যনির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে গেয়েছেন বহু নাটকের থিম সং ও ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল।
ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ‘রাই বিনে, ‘ছদ্মবেশী রোদ, ‘তোমার হাসিটা, ‘ইচ্ছেপোকার গান, ‘উড়ে গিয়ে কালো মেঘ, ‘শুকতারাসহ তাঁর বেশকিছু মৌলিক গান।
তাঁর গান মিজানুর রহমান আরিয়ান, রুবেল হাসান, তৌফিকুল ইসলাম, হাসিব হোসাইন রাখি সহ দেশের খ্যাতিমান নাট্যপরিচালকদের জনপ্রিয় নাটকে  সমাদৃত হয়েছে বলেও জানান এই শিল্পী।। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটক ‘স্বার্থপর’, ‘মনের আড়ালে, ‘কমলাকান্ত, ‘এক পলকে’ইত্যাদি।
 শুধু নাটকেই নয়, গেয়েছেন বড় পর্দার জন্যও।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা আশরাফ শিশির পরিচালিত ‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন তিনি।
 সংগীতের এই দীর্ঘ যাত্রা পথে ২০১৪ সালে প্রথম কক্সবাজারে তাঁর প্রথম একক সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৫ সালে রামুতে এবং  সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৮ জুন)  রামুতে ইনস্টিটিউট অব মিউজিক এর আমন্ত্রনে একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। যেটি জেলাজুড়ে বেশ সাড়া ফেলেছে ।
“ সংগীত শুধু আমার সাধনা নয়, এটি আমার আত্মার ভাষা—আমার স্বপ্ন ও সাধনার সেতুবন্ধ।
আমি চাই, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর জনপদ—রম্যভূমি রামুর সুনাম যেন সংগীতের।.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স গ ত ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম