একটি পরিবার, এক ঐতিহ্য আর একটি প্রজন্ম– সব মিলিয়ে সংগীত যেন শুধুই চর্চার বিষয় নয়, বরং জীবনধারার মতোই প্রবহমান। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘সংগীত ভবন’ পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে দেশব্যাপী সংগীতের আলো জ্বালিয়ে চলেছেন একজন তরুণ কণ্ঠশিল্পী তুলিপ সেনগুপ্ত; যার জীবনের শুরু থেকেই সংগীত ছিল সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ।
১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট, রামুর এই রম্যভূমিতেই তাঁর জন্ম। সংগীতের হাতেখড়ি বাবার কাছেই–শুরুটা যেমন পারিবারিক, তেমনি প্রাণেরও। চারপাশে যখন দিন-রাত গান আর সুরের অনুশীলন, তখন গানের প্রেমে পড়াটাই ছিল অবধারিত সত্য।
তাঁর ঠাকুরদা, স্বর্গীয় প্রিয়দা রঞ্জন সেনগুপ্ত ছিলেন চট্টগ্রামের খ্যাতনামা সেতার বাদক ও প্রশিক্ষক। ঠাকুরমা বনবীথি সেনগুপ্তও ছিলেন সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক। এই দুই শিল্পপ্রাণ মানুষ ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংগীত ভবন, যা পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের সংগীতজগতের একটি উজ্জ্বল আলোকিত প্রতিষ্ঠান।
পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন একেকজন স্বীকৃত শিল্পী। বড় জ্যাঠা স্বর্গীয় দীপক সেনগুপ্ত, মেজ জ্যাঠা স্বর্গীয় প্রদীপ সেনগুপ্ত, পিসিমণিরা–পুরবী সেনগুপ্ত ও কাবেরী সেনগুপ্ত। তাঁর বাবা বিভাস সেনগুপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও জেলার একজন গুণী সংগীতশিল্পী। তুলিপের বাবাও বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।
সরকারি চাকরির সুবাদে বিভাস সেনগুপ্ত রামু আসেন ১৯৮৫ সালে। এখানেই গড়ে তোলেন সংগীত ভবনের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তুলিপ সেনগুপ্ত বলেন, কক্সবাজার জেলায় রামু ছিল শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর জনপদ। চাকরিসূত্রে রামু এসে এখানকার শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বেগবান যাত্রায় নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন বাবা। এক পর্যায়ে রামুকে ভালোবোসে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট, এই রামুতেই আমার জন্ম।
রামুর পশ্চিম মেরংলোয়ায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন সংগীত প্রশিক্ষণালয় ‘সংগীত ভবন, রামু’।
‘ঘরে সারাক্ষণ গানবাজনার পরিবেশে বেড়ে ওঠা আমার। সেই থেকে গানের প্রতি গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই। ছোটবেলায় বাবার কাছেই আমার গানের প্রথম হাতেখড়ি। এখান থেকেই শুরু হয় আমার সংগীত-ভালোবাসার পথচলা’– যোগ করেন তুলিপ।
চট্টগ্রামে ‘সংগীত ভবন’-এর অধ্যক্ষ, পিসিমণি কাবেরী সেনগুপ্তের কাছ থেকে সংগীতের দীক্ষা নেওয়ার পর তুলিপের কণ্ঠসাধনার গভীরতা বাড়তে থাকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যান কলকাতায়। সেখানে কাটানো তিন বছরে গানের জগতে আরও ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে। শ্রদ্ধেয় কৌশিক ভট্টাচার্য্য ও ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে সংগীতের মর্মার্থ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।
কলকাতাতেই যুক্ত হন জনপ্রিয় গানের দল ‘সহজ মানুষ’-এ। তীর্থসুন্দর বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে সংগীত পরিবেশন করেন বিখ্যাত তারা টিভির ‘টেক এ ব্র্যাক’ এবং ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে। মিডিয়ায় তখনই ঘটে তাঁর গায়কি আত্মপ্রকাশ।
এরপর ২০১৬ সালে দেশে ফিরে মাছরাঙা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান রাঙাসকাল, বৈশাখী টিভি, এসএ টিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে গান করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করছেন।
তুলিপ বলেন, দেশে এসে গুণী সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খান, সুজেয় শ্যাম, উজ্জ্বল সিনহা, জয় শাহরিয়ারসহ অনেকের সান্নিধ্য পেয়েছি। এ সময় আমার মৌলিক গানগুলো প্রকাশ পেয়েছে, যা শ্রোতাদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
নাটকের জগতে গানের কাজেও রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি। ‘আপেল মাহমুদ এমিল’, ‘রফিকুল ইসলাম ফরহাদ’সহ নাট্যনির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে গেয়েছেন বহু নাটকের থিম সং ও ব্যাকগ্রাউন্ড ভোকাল।
ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ‘রাই বিনে, ‘ছদ্মবেশী রোদ, ‘তোমার হাসিটা, ‘ইচ্ছেপোকার গান, ‘উড়ে গিয়ে কালো মেঘ, ‘শুকতারাসহ তাঁর বেশকিছু মৌলিক গান।
তাঁর গান মিজানুর রহমান আরিয়ান, রুবেল হাসান, তৌফিকুল ইসলাম, হাসিব হোসাইন রাখি সহ দেশের খ্যাতিমান নাট্যপরিচালকদের জনপ্রিয় নাটকে সমাদৃত হয়েছে বলেও জানান এই শিল্পী।। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটক ‘স্বার্থপর’, ‘মনের আড়ালে, ‘কমলাকান্ত, ‘এক পলকে’ইত্যাদি।
শুধু নাটকেই নয়, গেয়েছেন বড় পর্দার জন্যও।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা আশরাফ শিশির পরিচালিত ‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন তিনি।
সংগীতের এই দীর্ঘ যাত্রা পথে ২০১৪ সালে প্রথম কক্সবাজারে তাঁর প্রথম একক সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৫ সালে রামুতে এবং সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৮ জুন) রামুতে ইনস্টিটিউট অব মিউজিক এর আমন্ত্রনে একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। যেটি জেলাজুড়ে বেশ সাড়া ফেলেছে ।
“ সংগীত শুধু আমার সাধনা নয়, এটি আমার আত্মার ভাষা—আমার স্বপ্ন ও সাধনার সেতুবন্ধ।
আমি চাই, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর জনপদ—রম্যভূমি রামুর সুনাম যেন সংগীতের।.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গ ত ভবন
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুমের ওষুধ খেয়ে হিরো আলম অসুস্থ, নেওয়া হলো হাসপাতালে
আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি গ্রামে এসে এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন তিনি। পরে রাতের কোনো এক সময়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হিরো আলমের বন্ধু জাহিদ হাসান বলেন, আজ শুক্রবার সকালে হিরো আলমকে শয়ন কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে নেওয়া হয় ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম অতিমাত্রায় ঘুমের ট্যাবলেট সেবন করেছেন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বেলা দেড়টার দিকে হিরো আলমের সঙ্গে থাকা বন্ধু জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হিরো আলমকে নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তবে এখনো পৌঁছাতে পারেননি।
ধুনটের ভান্ডারবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ হাসান আরও বলেন, হিরো আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্য আছে তাঁর। সেই সুবাদে তাঁর বাসায় যাতায়াতও আছে। গতকাল রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে ভান্ডারবাড়িতে আসেন হিরো আলম। এরপর তাঁর স্ত্রী রিয়ামণির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেন। হতাশাও প্রকাশ করেন। এরপর না খেয়ে একটি ঘরে একা ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ১০টার দিকে সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরে প্রবেশ করে জাহিদ হাসান দেখেন হিরো আলম অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।