সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি পেলেন ইরফান, বেতন বছরে সাড়ে তিন কোটি
Published: 29th, June 2025 GMT
বিশ্বের প্রযুক্তিকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে চাকরি পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. ইরফান উদ্দীন। ৯ ধাপে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর গত ২১ মে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পান। ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আগামী সোমবার (৩০ জুন) যোগদান করবেন ইরফান। তিনি বছরে বেতন পাবেন ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানি সাইনিং বোনাস হিসেবে প্রথম বেতনের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পাবেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ২০১৬ সালে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করার পর ২০২৩ সালে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান ইরফান। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইয়োমিং থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।
মো.
চাকরির বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ইরফান উদ্দীন বলেন, অ্যাস্টেরা ল্যাবসে আমাকে মোট ৯টি ধাপে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছিল।সবগুলোই ছিল টেকনিক্যাল। এর মধ্যে ৭টি ইন্টারভিউ একদিনে টানা প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলেছিল। এটি ছিল অনসাইট ইন্টারভিউ। এজন্য ওয়াইয়োমিং থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় যেতে হয়েছিল। তাই এই ধরনের ইন্টারভিউয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকা জরুরি। অনেকেই হয়তো ভাবেন, বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পেতে কাজে লাগে না। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক যে কোনো অভিজ্ঞতাই বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যাস্টেরা ল্যাবসে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ইরফান বলেন, নিয়োগপত্র অনুসারে আমি বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকা বেতন পাবো। কোম্পানি সাইনিং বোনাস হিসেবে প্রথম বেতনের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ টাকা (২৫,০০০ ডলার) দেবে। এর সঙ্গে আরও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যেমন স্টক ও বীমা ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত ইন্টারভিউয়ের প্রথম ধাপে আবেদনকারীকে জিজ্ঞেস করা হয়, কতো বেতন প্রত্যাশা করেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা পরে এসেছিল। যদি আমাকে প্রথমে বেতনের কথা জিজ্ঞেস করা হতো, আমি নিশ্চিত এতো বেশি বেতন কখনোই চাইতাম না। পরবর্তী আবেদনে একটি কৌশল নিয়েছিলাম—প্রথমেই জিজ্ঞেস করতাম, এই পদের জন্য নির্ধারিত বেতনের পরিসীমা কত। কিন্তু প্রথম দিকের আবেদনের সময় নিজেই নির্দিষ্ট একটা বেতন বলে দিতাম।
বাংলাদেশ থেকে সিলিকন ভ্যালিতে যাত্রা সম্পর্কে মো. ইরফান উদ্দীন বলেন, চুয়েটে স্নাতক শেষ করার পর ঠিক করেছিলাম দেশেই ক্যারিয়ার গড়ব। আমি চাকরি খুঁজছিলাম, কিন্তু পাচ্ছিলাম না, এবং বেশ কিছুদিন বেকার ছিলাম। অবশ্য পরবর্তীতে চাকরি পাই এবং সর্বশেষ ওয়ালটনে চাকরি করি। সেখানকার অভিজ্ঞতা আমার বর্তমান চাকরি পেতে অনেক কাজে লেগেছে। ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নিই। এরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ২০২৩ সালের আগস্টে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসি। যে কোনো ইঞ্জিনিয়ারের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল একদিন সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি করার।
মো. ইরফান উদ্দীনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ল য বস র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যুগোপযোগী করা হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, আগামী বছরই চালু
মাধ্যমিক স্তরের চলমান শিক্ষাক্রম আরও যুগোপযোগী করে আগামী বছর থেকে নতুনভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতালব্ধ, জ্ঞাননির্ভর ও বাস্তবসম্মত পাঠদান হবে। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথমে এটি চালু হবে। পরে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কার্যক্রম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২৫ জুন এ নিয়ে এনসিটিবিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে– এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন কারিকুলাম তৈরি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। চলতি মাসে কারিকুলাম বিষয়ে কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে আগামী জুলাইয়ে করা হবে বলেও জানান এনসিটিবি কর্মকর্তারা।
এনসিটিবির সচিব সাহতাব উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই-বাছাই করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকেই। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও পরে ক্রম অনুসারে অন্য শ্রেণিতে তা চালু করা হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রম বা শিক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। প্রথম পাঁচবার শিক্ষাক্রমের মূল থিম ঠিক রেখে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে বড়সড়ো পরিবর্তন আনা হয়। সে বারের শিক্ষাক্রমটি ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতি প্রণয়নের ৯ বছরের মাথায় ২০২১ সালে আবারও নতুন একটি শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন করা হয়।
সেই রূপরেখা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এ শিক্ষাক্রম। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হাতে-কলমে শেখানো হবে।
অভিভাবকরা সেই শিক্ষাক্রম স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ছিল, এমন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিক্ষাক্রম বাতিলে টানা আন্দোলনও হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতন হলে একই মাসের শেষ দিকে বাতিল করা হয় সেই শিক্ষাক্রম। ফিরিয়ে আনা হয় ২০১২ সালে প্রণীত আলোচিত সৃজনশীল শিক্ষাক্রম।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু বিষয় ছিল, যা ছিল সময়োপযোগী। নতুন যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে, সেখানে ২০২৩ ও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় থাকবে। ২০২৭ সালে চালু হওয়া শিক্ষাক্রম কেমন হবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ওপর।