জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপসহ ৩ দফা দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের
Published: 29th, June 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ, ক্যাফেটেরিয়ার মানোন্নয়ন ও ফুড কার্ড চালুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
আজ রোববার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি উত্থাপন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তিন দফা দাবিগুলো হলো দ্রুত সময়সীমা নির্ধারণ করে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ার পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়ন করে শিক্ষার্থীবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে ঘোষিত ‘ফুড কার্ড’ কার্যক্রম দ্রুত চালু ও তা বাস্তবায়নে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক চর্চা, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক ও নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতির ও সদিচ্ছাশূন্য বলে দাবি করেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর পক্ষে কথা বলার ও প্রতিনিধিত্ব করার কোনো গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম না থাকা যেমন অগণতান্ত্রিক, তেমনি এটি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার হরণের শামিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রশাসনের কাছে জকসু নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক রোডম্যাপ প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি ক্যাফেটেরিয়া আছে। অথচ সেখানে নেই পর্যাপ্ত পানির ফিল্টার ও শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান। খাবারের মান নিয়েও আছে গুরুতর অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ফুড কার্ড চালুর ঘোষণা দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। উদ্যোগটি এখন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও চোখে পড়ে না।
আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হেনস্তা করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেবে জবি প্রশাসন২৪ জুন ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তিন দফা দাবি অমূলক নয়; বরং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট। প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবির প্রতি অবিলম্বে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমরা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে গণতান্ত্রিক ও সাংগঠনিক আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। আন্দোলনের সব দায়দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
মুরাদনগরের একটি মামলার ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে (এসপি) হাইকোর্ট বলেছেন, সেনসেটিভ ম্যাটার (স্পর্শকাতর বিষয়)। অভিযোগপত্র হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তদন্তের সময়সীমা উল্লেখ আছে। দ্রুত যেন হয় মনিটরিং (তদারকি) করবেন। কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দেবেন।
মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা–সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ এবং মামলার তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে মঙ্গলবার আদালত এ কথা বলেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দিতে বলেছেন।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বিবাদীদের ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন (হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই আদালত কমপ্লায়েন্স বিষয়ে অবস্থান জানাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ১২ আগস্ট বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির হন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শুনানিতে পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপ ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্যাদি–সংবলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। শফিকুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। রিটের পক্ষে আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে আদালত কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দাখিলের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।
ডিএনএ পরীক্ষা, তদন্তসহ মামলা–সম্পর্কিত পরবর্তী অগ্রগতির তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অভিযোগপত্র হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ করতে বলেছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন কোনোভাবেই অতিক্রম না করে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজগুলো করে আগামী ২২ অক্টোবর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের পক্ষে মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মামলার পর ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। বিষয়টি ওসি দেখভাল করছেন। ভুক্তভোগীর জন্য সার্বক্ষণিক যেন নিরাপত্তা থাকে এবং সময়ে সময়ে এসপি ওসিকে এবং ওসি এসপিকে ফলোআপ ও হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী।