নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে আবারও আলোচনায় বসতে হবে
Published: 9th, August 2025 GMT
নারীর প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলের আচরণ পশ্চাৎগামী। জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে সচেতনভাবে নারী শব্দটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় নারীর মনোনয়ন নিয়ে ‘মাছের বাজারের’ মতো দর-কষাকষি করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কমিশন ও দলগুলোর এই রক্ষণশীল অবস্থানের জন্য ভবিষ্যতে তাদের খেসারত দিতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে।
গতকাল শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আগামী নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন ও নারীর মনোনয়ন নিয়ে কমিশন ও রাজনৈতিক দলের অবস্থান নিয়ে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আশায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য বিলোপে সরকার ব্যর্থ। নারী আসন ও মনোনয়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। এ আলোচনায় তাঁরা নারীদেরও রাখার দাবি জানিয়েছেন।
আবারও আলোচনায় বসতে হবে‘জাতীয় সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে। নারী আসন ও মনোনয়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বক্তারা। সংসদে সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়িয়ে সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সাধারণ আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলগুলোকে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয় বৈঠকে।
ঐকমত্য কমিশন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিলেও নারী আসনে নির্বাচন পদ্ধতি ও সাধারণ আসনে মনোনয়ন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে কমিশনকে নারীদের নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসার দাবি জানানো হয়। এই দাবি পূরণে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, প্রয়োজনে ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয় ঘেরাও, দাবি মেনে না নিলে আগামী নির্বাচনে নারীদের ভোট বর্জন করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ারও দাবি ওঠে এই বৈঠকে।
আমি অকপটে স্বীকার করছি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পুরুষতন্ত্র জয়ী হয়েছে।বদিউল আলম মজুমদার, সদস্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনবদিউল আলম মজুমদার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক আসন ও দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কী সিদ্ধান্ত হলো, সেটি দেখার বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের সম্পূর্ণ একটা রূপরেখা আছে। তো তারা সংস্কার চাক, আর না চাক। বলুক, আর না বলুক। আমরা সবাই মিলে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলাম, আমরা কিন্তু আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। ওই কমিশন কী বলে, ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো, এটাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, অন্য কারও (রাজনৈতিক দল) যদি কিছু থাকে, তারাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারে।...ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসেন। সংসদে আপনি পরিবর্তন করেন, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু আপনি জোর করে ঢাকা শহরে বসে, আপনার দাবি মানতে হবে, এটার জন্য আবার ঐকমত্য কমিশনকে ব্যবহার করবেন, অথবা সরকারের ব্লেসিং (আশীর্বাদ) নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার জন্য তো বাংলাদেশের মানুষ এত ত্যাগস্বীকার করেনি।
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করাসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ জামায়াতসহ আন্দোলনরত আটটি দলরে পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর মৎস্য ভবন মোড়ে এক ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ১১ নভেম্বরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব দাবি মেনে নিতে সময় বেঁধে দেন। তা না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গণভোট বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘এই সংবিধানে গণভোটের কোনো প্রভিশন (অনুমতি/বিধান) নেই, ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার)। আপনার যদি গণভোট করতে হয়, তাহলে এই সংবিধান পরিবর্তন করে গণভোটের প্রভিশন আগে আনতে হবে। তাহলে এই পরিবর্তনটা আপনাকে কোথায় করতে হবে? সংসদে করতে হবে এবং সংসদ হচ্ছে জনগণের রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রতিনিধি)।’
গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি উদারতা দেখানো ঠিক হয়নি বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশে সহনশীলতা ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রেক্ষাপটে এই গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে, তা–ও নির্বাচনের দিন। কিন্তু আসলে নির্বাচনের দিনও তো গণভোট হতে পারে না। এটা তো বিএনপির উদারতা এবং এই উদারতাটা দেখানো বিএনপির ঠিক হয়নি। কারণ, এটা সাংবিধানিকভাবে কারেক্ট (সঠিক) না। এটা নৈতিকভাবে কারেক্ট না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কারেক্ট না যে উদাহরণটা দেখিয়েছে, এটার জন্য আজকে আমরা সমস্যা ফেস করতেছি।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারী পক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ।