স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে গুগলের জেমিনি এআই
Published: 12th, August 2025 GMT
গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে ভিডিও ও অডিও তৈরি, শিশুদের জন্য ছবিসহ বই প্রকাশ বা ভ্রমণ পরিকল্পনা—সবই করা সম্ভব। কিন্তু এর সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ ও ঝুঁকিও। সম্প্রতি একদল গবেষক একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখিয়েছেন, ভুল হাতে পড়লে জেমিনি এআই স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সিনেমায় প্রায়ই দূর থেকে ঘরের বাতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা তাপমাত্রা বদলে দেওয়ার মতো দৃশ্য দেখা যায়। গবেষকদের প্রদর্শনীতে ঠিক তেমন দৃশ্যই বাস্তবে দেখা গেছে। জেমিনি ব্যবহারে পরিচালিত ডিভাইস হ্যাক করে ঘরের স্মার্ট যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও সেগুলো ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি করার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন তাঁরা।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষক দলটি একটি গুগল ক্যালেন্ডার ইনভাইটেশনের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা জেমিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট হ্যাক করে। এরপর ইনভাইটেশন লিংকে বিশেষভাবে তৈরি ক্ষতিকর কোড যুক্ত করে। গবেষকেরা জেমিনিকে ইনভাইটেশনের বিবরণ সংক্ষেপে বলার প্রম্পট দিলে কোডটি সক্রিয় হয়ে পড়ে। এরপর তা ঘরের অন্যান্য ডিভাইসে ধারাবাহিকভাবে কমান্ড কার্যকর করতে থাকে। ফলে এটি স্পষ্ট যে ভুল ব্যবহারে এআই ভয়াবহ হুমকি তৈরি করতে পারে। স্মার্ট ডিভাইসগুলো এমন আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর সঙ্গে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) যুক্ত হলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
হ্যাকিংয়ের প্রক্রিয়ার পুরো প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ না করলেও গবেষকেরা জানান, স্মার্ট হোম প্রযুক্তিতে এআই ব্যবহারের আগে শক্তিশালী সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সম্ভবত এ কারণেই গুগল এখনো তাদের স্মার্ট স্পিকারে জেমিনি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। তবে গুগলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিগগিরই জেমিনি স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট টিভি, এমনকি গাড়িসহ আরও বেশ কিছু যন্ত্রাংশে জেমিনি এআই যুক্ত করা হবে।
এআইয়ের মাধ্যমে স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বীকার করেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এআই দিয়ে স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। যদিও এখনো এ ধরনের আক্রমণ বাস্তবে ঘটেনি। তবে তারা জানিয়েছে, যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।
সূত্র: নিউজ১৮
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’