গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে ভিডিও ও অডিও তৈরি, শিশুদের জন্য ছবিসহ বই প্রকাশ বা ভ্রমণ পরিকল্পনা—সবই করা সম্ভব। কিন্তু এর সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ ও ঝুঁকিও। সম্প্রতি একদল গবেষক একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখিয়েছেন, ভুল হাতে পড়লে জেমিনি এআই স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সিনেমায় প্রায়ই দূর থেকে ঘরের বাতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা তাপমাত্রা বদলে দেওয়ার মতো দৃশ্য দেখা যায়। গবেষকদের প্রদর্শনীতে ঠিক তেমন দৃশ্যই বাস্তবে দেখা গেছে। জেমিনি ব্যবহারে পরিচালিত ডিভাইস হ্যাক করে ঘরের স্মার্ট যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও সেগুলো ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি করার সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন তাঁরা।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষক দলটি একটি গুগল ক্যালেন্ডার ইনভাইটেশনের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা জেমিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট হ্যাক করে। এরপর ইনভাইটেশন লিংকে বিশেষভাবে তৈরি ক্ষতিকর কোড যুক্ত করে। গবেষকেরা জেমিনিকে ইনভাইটেশনের বিবরণ সংক্ষেপে বলার প্রম্পট দিলে কোডটি সক্রিয় হয়ে পড়ে। এরপর তা ঘরের অন্যান্য ডিভাইসে ধারাবাহিকভাবে কমান্ড কার্যকর করতে থাকে। ফলে এটি স্পষ্ট যে ভুল ব্যবহারে এআই ভয়াবহ হুমকি তৈরি করতে পারে। স্মার্ট ডিভাইসগুলো এমন আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর সঙ্গে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) যুক্ত হলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

হ্যাকিংয়ের প্রক্রিয়ার পুরো প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ না করলেও গবেষকেরা জানান, স্মার্ট হোম প্রযুক্তিতে এআই ব্যবহারের আগে শক্তিশালী সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সম্ভবত এ কারণেই গুগল এখনো তাদের স্মার্ট স্পিকারে জেমিনি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। তবে গুগলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিগগিরই জেমিনি স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট টিভি, এমনকি গাড়িসহ আরও বেশ কিছু যন্ত্রাংশে জেমিনি এআই যুক্ত করা হবে।

এআইয়ের মাধ্যমে স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বীকার করেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এআই দিয়ে স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। যদিও এখনো এ ধরনের আক্রমণ বাস্তবে ঘটেনি। তবে তারা জানিয়েছে, যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।

সূত্র: নিউজ১৮

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক খুনির বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেপে করা হবে। কেউ যেন বলতে না পারে, যে নিয়ম না মেনে অবিচার করা হয়েছে।

অতীতে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বিদেশি কনসাল্ট্যান্ট রেখেছি, যাতে কেউ না বলতে পারে যে না উনারা এসে একটা ক্যাঙারু কোর্ট সেটআপ করেছে। আপনারা জানেন আমাদের হিস্ট্রি আছে ক্যাঙারু কোর্ট করার। কতজনকে তাঁরা ফাঁসি দিয়েছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশে এ ধরনের ক্যাঙারু কোর্ট। সময় নিচ্ছি একটু। আপনারা ধৈর্য ধরেন, প্রত্যেক খুনির বিচার হবে। কেউ বাদ যাবে না। এটা শহীদদের সঙ্গে আমাদের ওয়াদা।’

উল্লেখ্য, ক্যাঙারু কোর্ট হলো এমন আদালত বা বিচারব্যবস্থা, যেখানে প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করা হয় বা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। সাধারণত পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করে।

আজ রোববার সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে স্মরণ করা হয়।

ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে সময় দিতে হবে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪টি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে। ১৮টি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে একটু সময় দিতে হবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায়-অবিচার করি, তাহলে সেটি নিয়ে বাইরে কথা ওঠবে, যে উনারা জোর করে উনাকে (শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিচ্ছেন। জোর করে ওনার প্রতি অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা এটা চাই না।’

বাংলাদেশ থেকে রাজতন্ত্রের ইতি টানতে জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ পরিবারের দাস-দাসী ছিলাম। সেখান থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে একটা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক দেশ) করার জন্য তাঁরা শহীদ হয়েছেন, আত্মদান করেছেন। আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই।’

শফিকুল আলম বলেন, জুলাই যোদ্ধারা ভোটের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য শহীদ হয়েছেন। তিনি সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জুলাই যোদ্ধা আবু সাদেক কায়েম। তিনি বলেন, এক বছর পরও বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া ধীরগতির। এখনো শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মতিউর রহমান আকন্দ।

জুলাই অভ্যুত্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শাকিল হোসেন পারভেজ ও ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ শহীদ হন। আজ শহীদ শাকিলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। চত্বরটি উদ্বোধন করেন শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন। এরপর আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করবেন তাঁর মা আসিয়া খাতুন। দুপুর পৌনে ১২টায় দুই শহীদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ বছরের ছেলেকে বিমানবন্দরে রেখেই বেড়াতে যাচ্ছিলেন বাবা-মা, এরপর
  • ‘বিদায় দেওয়ার সময় বলেছেন, দুজন গাড়িতে ঘুমাবেন, আর ফোন ধরেননি’
  • প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে, মুসলিম হয়ে করলেন বিয়ে 
  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
  • শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
  • ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা
  • নেই মেসি, হারল মায়ামি
  • প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণের কাছে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের ফোন, এরপর যা ঘটল
  • ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম