টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে
Published: 21st, September 2025 GMT
টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই চুক্তির অংশ হিসেবে এখন থেকে টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো। সেই সঙ্গে অ্যাপটির মার্কিন কার্যক্রম পরিচালনায় যে সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ হবে, তার মধ্যে ছয়জন হবেন মার্কিন নাগরিক।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই’ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে; যদিও বেইজিং এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করেনি।
জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটির মার্কিন কার্যক্রম মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইছিল।
টিকটককে এর আগে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালাতে চাইলে অবশ্যই সে দেশের কার্যক্রম বিক্রি করতে হবে, নইলে বন্ধ করে দিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চারবার সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় পিছিয়েছেন এবং চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি আবারও সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছেন।
লেভিট ফক্স নিউজকে বলেন, অ্যাপটির তথ্য ও গোপনীয়তা দেখভাল করবে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকল, যে কোম্পানির চেয়ারম্যান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ল্যারি এলিসন। অ্যালগরিদমও নিয়ন্ত্রণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিষয়ে ইতিমধ্যেই চুক্তি হয়ে গেছে। এখন কেবল স্বাক্ষর বাকি।
এলিসনের ছেলে ডেভিড এলিসন সম্প্রতি মিডিয়া কোম্পানি প্যারামাউন্ট অধিগ্রহণ করেছেন; এই প্যারামাউন্ট সিবিএস নিউজের মালিক। এতে এলিসন পরিবার সে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মিডিয়া পরিবারগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
গত শুক্রবার ট্রাম্প জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপে টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম নিয়ে চুক্তি তিনি ও সি চিন পিং অনুমোদন করেছেন। তবে বেইজিং থেকে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে এবং তিনি সির অনুমোদনের জন্য ‘কৃতজ্ঞ’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকটকের মার্কিন ব্যবসা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হবে।
গতকাল শনিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানায়, ‘টিকটকের বিষয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট। চীন সরকার প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানায় এবং বাজারনীতির ভিত্তিতে বাণিজ্যিক আলোচনার মাধ্যমে এমন সমাধান স্বাগত জানায়, যে সমাধান চীনের আইন ও বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং চীনের স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করবে।’
চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, আলোচনার ফলাফল নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশায় আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সি জানিয়েছেন, বেইজিং ‘টিকটক নিয়ে আলোচনা স্বাগত জানায়’। আলোচনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মূলত অ্যালগরিদমের মালিকানা, যে অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে টিকটক ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর কাছে কনটেন্ট পৌঁছে দেয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে কি নতুন অ্যালগরিদম তৈরি করতে হবে, নাকি তারা বিদ্যমান অ্যালগরিদম ব্যবহার করতে পারবে? কিন্তু ট্রাম্প প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন। তবে তিনি অবস্থান পাল্টান এবং ২০২৪ সালের সফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে টিকটক কাজে লাগান।
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে কংগ্রেসে পাস হওয়া আইনকে সর্বোচ্চ আদালত সমর্থন করলে টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে, যদি না বাইটড্যান্স তাদের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি করে দেয়। সে সময় অ্যাপটি অল্প সময়ের জন্য বন্ধও হয়েছিল; যদিও পরবর্তীকালে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
মার্কিন বিচার বিভাগ আগেই সতর্ক করেছিল, টিকটকের মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার ‘অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক’ জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ট কটক র
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি
জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
এনসিটিবির কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি
খাগড়াছড়িতে হতাহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় টিআইবি
গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।”
গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ; ট্রাস্ট আইনে জবাবদিহি, নিরীক্ষা ও তথ্য উন্মুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা; রাজস্ব বাজেটের বাইরে আন্তর্জাতিক তহবিল, কার্বন ট্রেডিং ও বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়া; স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া; একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা; এবং অবকাঠামো ও সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পের অনিয়মে জড়িতদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা।
ঢাকা/রায়হান/ইভা