প্রধান উপদেষ্টার সফর ঘিরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের উত্তেজনার দুই দিন
Published: 23rd, September 2025 GMT
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনকে কেন্দ্র করে দুই দিন উত্তেজনার মধ্যে কাটল নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও নেতা–কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস থেকে জেএফকে বিমানবন্দর ও ম্যানহাটান উত্তাল হলো। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে বিমানবন্দরে এনসিপি নেতা আখতার হোসনকে হেনস্তা ও তাঁর ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক যুবলীগের নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনার পারদ আরও চড়ে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা নিউইয়র্কে আসেন সোমবার বিকেলে। তার আগের রাতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি–অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, ২১ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যা আটটার পর জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই দলের অন্তত ৫ শতাধিক মানুষের জমায়েত এবং স্লোগানে এলাকাটিতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্লোগান দিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করেন দুই দলের নেতা–কর্মীরা। কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ এসে দুই দলের নেতা–কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
ডাইভারসিটি প্লাজার পাশে বাংলাদেশ স্ট্রিট। রোববার রাতে দুই দলের উত্তেজনার মধ্যে সেখানে নিজস্ব উদ্যোগে আসেন আওয়ামী লীগবিরোধী ব্লগার মাসুদুর রহমান। তাঁকে দেখে যুবলীগের এক কর্মী অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের ডাক দেন। তখন সেই ব্লগার গাড়ি থেকে নেমে আওয়ামী লীগের কর্মীকে ধমক দিয়ে পুলিশে কল দেন। একই সঙ্গে যুবলীগ কর্মীও পুলিশে কল দেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১০ জন করে পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে আসে। একপর্যায়ে পুলিশ জ্যাকসন হাইটসের ওই এলাকা থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সরিয়ে দেয়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পরদিন সোমবার নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দুপুর ১২টা থেকে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা অবস্থান নেন টার্মিনালের তিনতলার ডিপারচার এলাকায়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দুই শতাধিক নেতা–কর্মী স্লোগানে সরগম করে তোলেন এলাকাটি। বেলা ২টা পর্যন্ত সেখানে তাঁদের কর্মসূচির অনুমতি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ঘোষণা করেন, তাঁদের পরবর্তী কর্মসূচি ম্যানহাটানের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের সামনে।
এই টার্মিনালেই বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কর্মসূচির অনুমতি নিয়েছিলেন বিএনপি সমর্থকেরা। তিন শতাধিক নেতা–কর্মী সেখানে জড়ো হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য অতিথিদের নিউইয়র্কে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে নেতা–কর্মীদের একটি বড় অংশ যে যার মতো করে চলে যান। এর মধ্যে বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হেনস্তার মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়া এনসিপি নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গিয়াস আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল চারটা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচির অনুমতি ছিল। পরে আমরা জানতে পারি, যাঁদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট আছে, তাঁরা ভিআইপি এক্সিট দিয়ে চলে গেছেন। অন্য যাঁরা নেতৃবৃন্দ আছেন, তাঁরা সাধারণ এক্সিট দিয়ে বের হন। কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের বলা হয়, অতিথিরা সবাই চলে গেছেন। আশপাশে দু–চারজন আওয়ামী লীগের লোক দেখে আমি কিছুটা সন্দিহান হয়ে এলাকায় থেকে যাই। তারপরই দেখি, পার্কিং লটে ওরা গাড়ির সামনে শুয়ে আছেন। আমি ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিরাপদ রাখার জন্য সবাইকে কোনো কিছু না করার জন্য আহ্বান জানাই। আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা সেই সম্মান রাখেন।’
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তাঁরা সাধারণ এক্সিট দিয়ে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন।
বিমানবন্দরের এই এক্সিট থেকে গাড়ি পর্যন্ত যেতে ৭ মিনিট হাঁটার পথ। বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের পেছনে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা নানা স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার উদ্দেশে গালাগালি ও কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে আখতার হোসেনের পিঠে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে ডিম ছুড়তে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বিমানবন্দরের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরপর দুটি ডিম ছোড়া হয়। এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের পিঠে ডিমগুলো লাগে। তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হেঁটে যান। সবাই গাড়িতে ওঠার পর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’সহ অন্যান্য স্লোগান দেন। এ সময় নিউইয়র্ক পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা ম্যানহাটানের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সেখানে প্রতিবাদ করার অনুমতি নিয়ে রেখেছে। সে অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যায় তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করেন। রাস্তার দুই পাশে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দেন এনসিপি ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। এ সময় ভেতরে হোটেলের লবিতে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা। সেখানে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের বিচার দাবি করেন। শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে তাঁরা বাংলা ও ইংরেজিতে স্লোগান দেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা সারা দিনের বিক্ষোভ শেষে সন্ধ্যার পর জ্যাকসন হাইটসে সমবেত হন। সুলাইমান হক নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপি–সমর্থিত এক ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, মিজানুর রহমান তাঁকে ছুরি দিয়ে মারতে এসেছেন। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রিট থেকে পুলিশ মিজানুরকে আটক করে। আটক করার পর মিজানুর রহমান ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেন। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও স্লোগান দেন। মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার নিউইয়র্কের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও পুলিশসহ অন্যান্য জায়গায় প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তার বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তারা তদন্ত করে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন য ক তর ষ ট র আখত র হ স ন র সফরসঙ গ ন উইয়র ক কর ম দ র দ ই দল র ব এনপ র একপর য কর ম র র কর ম স মব র এক স ট সমর থ র ঘটন এনস প আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আখতারকে ডিম ছোড়ার পর যুবলীগের মিজানুর আটক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়ার ঘটনার পর যুবলীগ কর্মী মিজানুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপির কর্মীকে ছুরি দিয়ে মারার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে আখতার হোসেন নিউইয়র্কে পৌঁছান।